পূর্ব মেদিনীপুর: লোভী-ভোগী-ত্যাগীতে ভাগ রাজনৈতিক নেতারা। ত্যাগীরা শত প্রলোভনেও মায়ের কোল ছাড়ে না। তৃণমূল করলে জেলে, বিজেপি হলেই সাদা, ওরা ওয়াশিং মেশিন। শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করে মন্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

শুভেন্দু অধিকারীর দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগদানের পর পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে প্রথম সভা করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে তৃণমূল ও শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে চাপানউতোর চলছে। এরই প্রেক্ষাপটে মমতা সাফ বললেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলন কারা করেছে, তা নিয়ে কারও জ্ঞান শুনব না।

নন্দীগ্রাম আন্দোলনে স্মৃতি উস্কে মমতা বলেছেন,  ‘আমার সঙ্গে আছেন তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুরের সবাই। ‘এই তেখালিতে ব্রিজের সামনে গুলি চলল। আমার গাড়িতে ২-৩টি বুলেট এসে লাগে।

আমাদের বলা হয় ফিরে যেতে।  ১৪ মার্চ গুলি চলার আগে আন্দোলন তৈরি হয়েছিল সিঙ্গুরে। জমি অধিগ্রহণ আইনটাকে আন্দোলন করে বদলে দিয়েছিলাম।কোলাঘাটে বলেছিল পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দেবে।

মমতা বলেছেন, আমাকে  তত্কালীন রাজ্যপাল বলেছিলেন, ‘আপনাকে মারতে এসেছে, আপনি চলে আসুন।  ৪টি বাঁশ টপকে ঢুকেছিলাম কোলাঘাট গেস্ট হাউসে।নন্দীগ্রামে ঢোকার সব রাস্তা আটকে দিয়েছিল। আমি বাইকে চড়ে গ্রামের ভিতরে দিয়ে তমলুকে এসেছিলাম। তমলুক থেকে ঢুকতে গেলে বাধা দেওয়া হয়েছিল চণ্ডীপুরে।  নন্দীগ্রামে কোথায় কী পাওয়া যায়, আমি সব চিনি।নন্দীগ্রামের সঙ্গে আমার আত্মার টান। নন্দীগ্রাম নিয়ে আমার বই আছে, কবিতা আছে।

মমতা বলেছেন, নন্দীগ্রাম থেকে হলদিয়া যোগাযোগের জন্য রাস্তা-ব্রিজ করে দেব। আগে যেমন জমি দখল করা হচ্ছিল, এখন চলছে ফসল দখল। কৃষি আইন প্রত্যাহার না করলে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মতো করে দেখাব। সব মণীষীদের নিয়ে আমরা চলি।

শুভেন্দু সহ তৃণমূলের কয়েকজন দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মমতা বলেন,  কেউ কেউ একটু ইধার-উধার করছে, চিন্তার কারণ নেই।

নাম না করে শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। বলেছেন, ‘আগে সুপ্রকাশ গিরির সঙ্গে লড়ে দেখাও। কেউ দল ছেড়ে যেতেই পার, ভাল করেছ। লোভী-ভোগী-ত্যাগীতে ভাগ রাজনৈতিক নেতারা। ত্যাগীরা শত প্রলোভনেও মায়ের কোল ছাড়ে না।

বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে।  পাল্টা মমতার কটাক্ষ,  তৃণমূল করলে জেলে, বিজেপি হলেই সাদা, ওরা ওয়াশিং মেশিন।

তৃণমূল সরকারের সাফল্য উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাকে আমরা বেচতে দেব না। বাড়ি বাড়ি পানীয় দল পৌঁছতে জেলায় ১৫০০ কোটির প্রকল্প। দেড় কোটির বেশি মানুষ দুয়ারে সরকার থেকে উপকৃত হয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘নন্দীগ্রাম আসনে কে লড়বেন, এখন তার নাম বলব না। এমন কাউকে দেব, যিনি পড়ে থেকে কাজ করবেন। নন্দীগ্রাম থেকে লড়ব, সুব্রত বক্সিকে বলব আমার নাম রাখতে। বেশি সময় দিতে পারব না। তবে আপনাদের সব কাজ করে দেব। আমাকে যে ২৯৪ কেন্দ্রেই লড়তে হবে।

ভোটের আগে প্রতিপক্ষ শিবিরকে একহাত নিয়ে মমতা বলেছেন, ‘নন্দীগ্রাম থেকে নতুন জন্ম হল তৃণমূলের।’

এভাবে  শুভেন্দু সহ দলের নেতাদের একাংশের বিজেপিতে যোগদানকে গুরুত্ব দিতে চাইলেন না তৃণমূল নেত্রী।