হিন্দোল দে, সুদীপ্ত আচার্য ও সুনীত হালদার, কলকাতা ও হাওড়া: রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফায় ফের প্রকাশ্যে হাওড়ায় তৃণমূলের অন্তর্কলহ। শুক্রবার রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিত্ব ছাড়তেই, তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে দলের বিরুদ্ধে সরব হন বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া এবং হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তী। এর কিছুক্ষণ পরই বৈশালীকে বহিষ্কার করে তৃণমূল।
গতকাল মন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে রাজীব বলেছেন, আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।
এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়ায় ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ তাঁকে বিজেপিতে যোগদানের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মানুষের জন্য কাজ করতে চাইলে আমাদের সঙ্গে আসুন।
তৃণমূল নেতা ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সাফ জানিয়েছেন, রাজীবের সঙ্গে দল আর কোনও আলোচনা করবে না।
এ কুল ভাঙ্গে ও কুল গড়ে, এই তো নদীর খেলা। রাজনীতিতেও এখন প্রায় তেমনই খেলা চলছে। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর গঙ্গাপাড়ের শহর হাওড়ায়, তৃণমূলের ভাঙন ফের একবার স্পষ্ট হয়ে গেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই ভাঙনের জন্য হাওড়ার তৃণমূল নেতা-নেত্রীরা যাঁদের দিকে আঙুল তুলছেন, তাঁরা কেউ বিজেপির নন, তাঁদেরই দলের সদস্য।
৫ জানুয়ারি লক্ষ্মীরতন শুক্লা মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর দলের একাংশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছিলেন বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া। শুক্রবার রাজীব সেই পথে হাঁটার পর ফের সরব হন বৈশালী।
লক্ষ্ণীরতন শুক্ল মন্ত্রিত্ব এবং হাওড়া তৃণমূলের সভাপতি পদ ছাড়ার পর তাঁর সেই সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছিলেন বৈশালী। শুক্রবার রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেওয়ার পরেও একই অবস্থান নিয়েছিলেন বৈশালী। সঙ্গে দলের কড়া সমালোচনা করেছিলেন। বলেছিলেন, লক্ষ্মী দলের কাজ করতে পারছেন না। লক্ষ্মীর মতো তিনিও দলের কাজ করতে পারছেন না। রাজীবের ঘটনার পরেও তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যেই দলের সমালোচনা করেন বৈশালী।
এরপরই তাঁকে জগমোহন ডালমিয়ার মেয়ে তথা বালির বিধায়ক বৈশালীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের বিধানসভা ভিত্তিক ফল অনুযায়ী, বৈশালীর কেন্দ্র বালিতে মাত্র ২৯৫ ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল।
কয়েকদিন আগে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন হাওড়া পুরসভার প্রাক্তন মেয়র ও তৃণমূল নেতা রথীন চক্রবর্তী। রাজীবের পদত্যাগের পর দলের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে থামেননি তিনি। করেছেন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যও। তিনি বলেছেন, কোনও কাজ করা যায় না। রাজীব ঠিকই করেছে। হাওড়ায় কাজ করা যায় না। সকলকে জানিয়েছি। সুরাহা হয়নি। এপথ না হলে ওপথ।
বৈশালী ডালমিয়া কিংবা রথীন চক্রবর্তী কারও নাম করেননি ঠিকই। তবে সূত্রের খবর, তাঁদের ক্ষোভ মূলত জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান অরূপ রায়ের বিরুদ্ধে।
যদিও, অরূপ রায় কোনও ক্ষোভ-বিক্ষোভে গুরুত্ব না দিয়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হাওড়ায় ১৬টার মধ্যে ১৬টাই পাবে তৃণমূল। ১৯৯৮ থেকে দলটা তৈরি করেছিল, তখন পতাকা ধরার লোক ছিল না। তখন এরাঁ ছিলেন না। এরা কতটা ত্যাগ করেছেন? ওরা কদিন দলে আছেন? )
ইতিমধ্যে হাওড়া জেলার আরেক তৃণমূল বিধায়ক জটু লাহিড়িও প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন।
হাওড়ার প্রবীণ তৃণমূল নেতা তথা তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বাণী সিংহ রায়ও দলের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ার চার-পাঁচজন এখন দল চালাচ্ছেন।
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে হাওড়া জেলার ১৬টি বিধানসভার ১৫টিতে জিতেছিল তৃণমূল।একটি আসনে জেতে বাম-কংগ্রেস জোট। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফল অনুযায়ী, ১৬টি বিধানসভার মধ্যে ১৫টিতে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। একটি আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপি।
তবে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, গঙ্গার ওপাড়ে যে ভাঙন শুরু হয়েছে, তারপর বিধানসভা ভোটে ঘাসফুল মাটি ধরে রাখতে পারবে তো?
Rajib Banerjee Resigns:রাজীবের ইস্তফায় ফের প্রকাশ্যে হাওড়ায় তৃণমূলের অন্তর্কলহ
ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ
Updated at:
23 Jan 2021 07:33 AM (IST)
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফায় ফের প্রকাশ্যে হাওড়ায় তৃণমূলের অন্তর্কলহ। শুক্রবার রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিত্ব ছাড়তেই, তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে দলের বিরুদ্ধে সরব হন বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া এবং হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তী। এর কিছুক্ষণ পরই বৈশালীকে বহিষ্কার করে তৃণমূল।
NEXT
PREV
নির্বাচন ২০২৩ (elections) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -