অর্ণব মুখোপাধ্যায়, সিঙ্গুর: কৃষিজমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জেরে সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানা হয়নি। সেই সিঙ্গুর নিয়ে কী ভাবনা রয়েছে বিজেপির? ক্ষমতায় এলে তাদের শিল্প সংক্রান্ত রুট ম্যাপ কী? বুধবার সিঙ্গুরের রোড শো থেকে তা জানালেন অমিত শাহ। পাল্টা তৃণমূলের গলায় এ নিয়ে শোনা গেছে কটাক্ষের সুর।


রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের অন্যতম দুই ভিত্তিভূমি। এবার এই দুই কেন্দ্রেই জিততে মরিয়া বিজেপি। নন্দীগ্রামে ভোটের দু’দিন আগে সেখানে শুভেন্দু অধিকারীর হয়ে প্রচারে গিয়েছিলেন অমিত শাহ। সিঙ্গুরের ক্ষেত্রেও ঠিক সেই কৌশলই নিলেন তিনি। শেষ লগ্নে সিঙ্গুরে গিয়ে প্রচারে ঝড় তুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শিল্পনগরী হয়ে ওঠার চৌকাঠ থেকে ফিরে আসা সেই সিঙ্গুরে দাঁড়িয়েই বুধবার অমিত শাহ বুঝিয়ে দিলেন, এ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে শিল্প নিয়ে তাঁদের মাথায় কী ভাবনা রয়েছে। এই সিঙ্গুরেই টাটাদের গাড়ি কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণ করেছিল বাম সরকার। তারপরই কৃষিজমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে শুরু হয় আন্দোলন। 


যার জেরে কারখানা তৈরি করেও শেষমেশ রাজ্য ছাড়তে হয় টাটাদের। তারপর দু’টো বিধানসভা ভোটে জিতে আসে তৃণমূল। সুপ্রিম কোর্ট বাম আমলের জমি অধিগ্রহণকে বেআইনি বলে রায় দেওয়ার পর, দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে, কৃষকদের হাতে জমির নথি তুলে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি এক অডিও বার্তায় রাজ্যের শিল্প-পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা ঝরে পড়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর গলায়। অডিও বার্তায় তিনি বলেছিলেন, ‘‘বামফ্রন্ট অপসারিত হওয়ার পর, তৃণমূলের সরকার রাজ্যজুড়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সমস্ত বিচারেই রাজ্যের অর্থনীতিতে নেমেছে বিপর্যয়, হতাশা। কৃষিতে সঙ্কট, কৃষকের সঙ্কট, কৃষিজাত দ্রব্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে। অন্য দিকে এ রাজ্যে শিল্প, শিল্পায়ন সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে গেছে। গত ১০ বছরে উল্লেখযোগ্য একটি শিল্পও আসেনি।’’


লোকসভা ভোটে হুগলি থেকে জিতে আসার পর বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও দাবি করেছিলেন, টাটাদের তিনি সিঙ্গুরে ফেরার আবেদন জানাবেন। বছর দুয়েক আগে বিজেপি সাংসদ এবং এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘আমি সিঙ্গুরের জন্য টাটাদের কাছে আবেদন করব, টাটারা রাজি না হলেও, সিঙ্গুরে যাতে অন্য কোনও শিল্প আসে, তার জন্য চেষ্টা করব এবং চাষিদের স্বাক্ষর করা এই প্রতিলিপি আমি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পৌঁছে দেব৷’’


অমিত শাহ অবশ্য বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা শুধু টাটাদের নিয়েই ভাবছেন না। আরও পরিকল্পনা আছে। তৃণমূল এসবে কোনও গুরুত্বই দিতে নারাজ।