কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের বেড়গ্রামের জনসভায়,  কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দলের অস্বস্তি চরমে তুললেন বিজেপি নেতা তথা সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। বিজেপি সাংসদ দাবি করছেন, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে’....এই লাইনটি জীবনানন্দ দাসের!

কিন্তু, আদতে রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে এই উক্তিটি ঈশ্বরী পাটনীর মুখে রয়েছে।

বক্তৃতা দিতে গিয়ে সৌমিত্র বলেন, আজ বাংলায় শিল্প কারখানা নেই। কাজের জন্য বাইরে যেতে হচ্ছে। মেয়ের বিয়ে দিলে দেখা যাচ্ছে জামাই ব্যাঙ্গালোরে বা বাইরের রাজ্যে কাজ করেন। কেন বাইরে যেতে হবে। প্রত্যেক মা চান তাঁর সন্তান যেন কাছে থাকে, যেন দুধেভাতে থাকে। ওই যে জীবনানন্দ লিখেছিলেন না, আমার সন্তান যেন তাকে দুধেভাতে।

‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে’ পংক্তিটির রচয়িতা হিসেবে জীবনানন্দ বলে দাবি করে বিতর্কের মুখে সৌমিত্র।

সৌমিত্র খাঁর মন্তব্য নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল।  আত্মপক্ষ সমর্থনে সাফাই দিয়েছে বিজেপি।

পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসের কটাক্ষ,  বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার কবি-লেখক,কাউকেই তো জানলেন না। এই পংক্তির রচয়িতা ভারতচন্দ্র রায়গুনাকর, অন্নদমঙ্গল কাব্যে তা রয়েছে। অথচ যা মুখে আসছে তাই বলে দিচ্ছেন।

পাল্টা  পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপি সাধারণ সম্পাদক সুনীল গুপ্ত,  উনি হয়তো রচয়িতার নামটা ভুল বলেছেন, কিন্তু যে কথাটা বলেছেন, সেই কথাটা সঠিক বলেছেন। তৃণমূলের কাজ হচ্ছে এই ভুলগুলোকে তুলে ধরা।

মনীষী, সাহিত্যিক ও তাঁদের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে রাজনীতিবিদদের আলটপকা মন্তব্য এই প্রথম নয়।

সহজপাঠ বিদ্যাসাগরের লেখা বলে মন্তব্য করেছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছিলেন, যার জন্য বিখ্যাত বিদ্যাসাগর, তা সহজপাঠ। যেটা আমরা ছোটবেলায় পড়েছি। সিপিএম তুলে দিয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল কি সেটা চালু করেছে? বিদ্যাসাগরের প্রতি সম্মান থাকলে তারা সহজপাঠ কোর্সে রাখত।

বাস্তবে সহজপাঠের রচিয়তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

দিলীপ ঘোষ যখন এই মন্তব্য করেন, তখন তৃণমূলে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সে সময় খোঁচা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘কেউ কেউ তো বিদ্যাসাগর সম্পর্কে জানেন না। কেউ বলছেন, সহজপাঠের জন্য না কি বিখ্যাত উনি। বিদ্যাসাগর বর্ণপরিচয়ের জন্য বিখ্যাত।’’

এর আগে ২০১৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন,বেলেঘাটায় যখন মহাত্মা গাঁধী অনশন করছিলেন, রবীন্দ্রনাথ তখন তাঁর কাছে যান এবং ফলের রস খাইয়ে গাঁধীর অনশন ভঙ্গ করেন। এর পরেই কবি লিখেছিলেন, ‘জীবন যখন শুকায়ে যায়’ গানটি।’’

যদিও ইতিহাস বলছে, গান্ধীজি বেলেঘাটায় অনশন করেছিলেন ১৯৪৭ সালে, সাম্প্রদায়িক হিংসার পর্বে। আর রবীন্দ্রনাথের জীবনাবসান হয় ১৯৪১ সালে।

২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বীরভূমে অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘‘এই বীরভূমের পবিত্র ভূমিতে জন্ম হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের।’’ যা নিয়ে কটাক্ষ করেছিল তৃণমূল।

১৮৬১ সালের ৭ মে জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের পারিবারিক ভদ্রাসন, ৬ দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনের বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের জন্ম।

মনীষীদের সম্পর্কে রাজনীতিবিদদের তথ্য গুলিয়ে ফেলার প্রবণতা অব্যাহত।