পূর্ব মেদিনীপুর:  ভোটের মুখে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের দাবি নিয়ে সরব নন্দীগ্রাম আসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল জমানায় গত নয়-দশ বছরে শিক্ষক, ভোকেশনাল টিচার-কোনও পদেই নিয়োগ হয়নি। তার ওপর পার্শ্বশিক্ষকদের বঞ্চনা করে তাঁদের জন্য বরাদ্দ বেতন থেকেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে কাটমানি খাওয়ার অভিযোগ এনেছেন তিনি। 



তমলুকে এক সভায় শুভেন্দুর অভিযোগ, তৃণমূল সরকার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মর্যাদা দেয়নি। তাঁদের ডিএ-র দাবিকে নস্যাৎ করাই শুধু নয়, তাঁরা 'ঘেউ ঘেউ' করছেন, এমন অবমাননাকর মন্তব্যও করা হয়েছে। 



 এ রাজ্যের শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্তরের বেতন কাঠামোর ফারাক ঘোচানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন শুভেন্দু।  তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, নামখানার সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে বেতন কমিশন বসানো এবং শিক্ষকদের বেতনে বৈষম্য দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে শিক্ষকদের দাবিদাওয়া নিয়ে উদাসীনতার অভিযোগ সম্পর্কে শুভেন্দু বলেছেন, এ সব বলে আসলে ভুল বোঝানো হচ্ছে। একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারা যাবে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে শিক্ষকদের অবস্থা কেমন। তাঁর দাবি, বিজেপি শাসতি ১৪ রাজ্যে বেতন সংক্রান্ত বৈষম্য দূর নিয়ে কাজ হয়েছে। 
শুভেন্দু বলেছেন, শিক্ষকদের পেনশন তো আগেই বাম আমলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, বিজেপি কর্মচারী বা শিক্ষক, কোনও স্তরেই মানুষের বিরুদ্ধে কাজ করেনি। 



তিনি বলেছেন, তৃণমূল সরকার  গত নয়-দশ বছরে কোনও শিক্ষক, পার্টটাইমার বা ভোকেশনাল টিচার নিয়োগ করতে পারেনি। বরং পার্শ্বশিক্ষকদের প্রাপ্য বেতন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় সর্বশিক্ষা অভিযান চালু হওয়ার পর পার্শ্বশিক্ষক পদ তৈরি হয়। তাঁর দাবি, প্রাথমিক পর্যায়ে পার্শ্বশিক্ষকদের জন্য কেন্দ্রীয় বেতন ১২-১৫ হাজার টাকা। হাইস্কুলে পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু এই টাকা পার্শ্বশিক্ষকদের দেওয়া হচ্ছে না। কাটমানি খাওয়া হচ্ছে, টাকা সরানো হচ্ছে। সবাইকে যৎসামান্য বেতন দেওয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে তৃণমূল আমলে সর্বস্তরে অব্যবস্থার অভিযোগ করেছেন তিনি। 



করোনাজনিত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকার দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের অনলাইনে পড়াশোনার জন্য ট্যাব দিয়েছে। এই কর্মসূচীকেও কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেছেন, শুধু দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদেরই ট্যাব দেওয়া হয়েছে। কারণ, তাদের বয়স ১৮। অর্থাৎ, ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে। ভোট পাওয়ার জন্যই ট্যাব বিতরণ বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি। 



শুভেন্দু বলেছেন, তৃণমূলের আমলে শিক্ষার পরিবেশ খারাপ হয়ে গিয়েছে। স্কুলগুলিতে ম্যানেজিং কমিটি তুলে দেওয়া হয়েছে। বরং সেখানে নিম্নমানের লোকজনকে বসানো হয়েছে। 



কলেজগুলিতে গত চারবছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন স্থগিত রাখা নিয়েও সরব হয়েছেন শুভেন্দু। তিনি বলেছেন, পরবর্তী প্রজন্মের রাজনৈতিক মেধা যাতে তৈরি না হয়, সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এমনটা করা হয়েছে। 



বিজেপি ক্ষমতায় এলে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা যাতে পঠনপাঠন ও শিক্ষাসংক্রান্ত কাজই করেন, তা নিশ্চিত করা হবে বলে শুভেন্দু আশ্বাস দিয়েছেন।