উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: জনসংযোগ বেরিয়ে আড্ডার ছলে তৃণমূল আর বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার করছেন যাদবপুরে বামেদের বাজি সুজন চক্রবর্তী। নিছকই ছকে বাঁধা প্রচার নয়। তিনি ভালবাসেন মানুষের সঙ্গে আলাপ জমাতে, নির্ভেজাল আড্ডা দিতে। নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে তাই স্বভাবসিদ্ধ ঢঙেই মেতে উঠছেন হাসি-ঠাট্টা আর গল্পে। তিনি সুজন চক্রবর্তী।
যাদবপুরের বিদায়ী বাম বিধায়ক, এবারও লড়ছেন পুরনো কেন্দ্র থেকে। যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী (সংযুক্ত মোর্চা) সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রথা তাই যাই, প্রচার করি, আমি কাজ করার চেষ্টা করি ৷’’ প্রার্থী যাদবপুরের হলেও, সুজন চক্রবর্তী থাকেন সোনারপুরে। প্রতিদিন সকালে সাড়ে আটটা থেকে ন’টার মধ্যে চলে আসেন নিজের নির্বাচনী এলাকায়। পার্টি অফিসে কিছুক্ষণ কাটিয়ে নেমে পড়েন কাজে। প্রচারে রাজনৈতিক কথাবার্তা তো আছেই, তবে তাকে ছাপিয়ে যায় প্রার্থীর সঙ্গে ভোটারদের কুশল বিনিময়, ব্যক্তিগত মত বিনিময়।
নামের মতো সাধারণ মানুষের কাছেও তিনি সুজন। তাই কেউ এগিয়ে দেন লিকার চা, কেউ ঠান্ডা জল। বাদ যায় না কেক, লজেন্স। তবে লাল দুর্গ বলে পরিচিত যাদবপুর যে সব সময় বামেদের প্রতি সদয় হয়েছে, ইতিহাস কিন্তু তা বলছে না। যাদবপুর অঘটন ঘটায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে হারিয়েছিলেন মণীশ, আবার মণীশকে হারান সুজন, এবার কী করবে যাদবপুর ? সিপিএম প্রার্থী সুজয় চক্রবর্তী জানান, ‘‘মানুষ মনে করেছে হারানোর তাই হারিয়েছে, মানুষের পাশে থেকেছি, সবাইকে দেখেছি, মানুষ আমাদের পাশে আছে ৷’’
বাম ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা বায়োমেডিক্যালের গবেষক সুজন চক্রবর্তী ৷ প্রথমবার বিধানসভায় ঢোকেন ১৯৯৮ সালে। সেবার উপনির্বাচনে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে বারুইপুর কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হন। ২০০৪ সালে লোকসভা ভোটে লড়াই করে জয়। যাদবপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের কৃষ্ণা বসুকে হারিয়ে সাংসদ হন সুজন চক্রবর্তী। ২০০৯ সালে কবীর সুমনের কাছে হারলেও, ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে কামব্যাক করেন তিনি ৷ কংগ্রেসের সমর্থন পেয়ে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল প্রার্থী মণীশ গুপ্তকে পরাস্ত করে ফের বিধায়ক হন। গত বছর অতিমারীর সময়ে মূলত তাঁর উদ্যোগেই যাদবপুরে চালু হয় শ্রমজীবী ক্যান্টিন। আজও যা চলছে রমরমিয়ে। সকালে ডোর টু ডোর ক্যাম্পেন, আর বিকেলে জনসভা। এভাবেই জনসংযোগ সারছেন বাম পরিষদীয় দলের নেতা, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। ১০ এপ্রিল তাঁর লড়াই তৃণমূলের দেবব্রত মজুমদার আর একদা শিষ্যা বর্তমানে বিজেপি প্রার্থী রিঙ্কু নস্করের সঙ্গে। আবারও কি যাদবপুরবাসীর আশীর্বাদ পাবেন সুজন চক্রবর্তী? উত্তর মিলবে ২ মে।