অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও সুনীত হালদার, হাওড়া: বিজেপির যোগদান মেলার পর হাওড়ার ডুমুরজলায় আজ পাল্টা সভা করল তৃণমূল। বেইমান, মীরজাফর বলে সদ্য দলত্যাগী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ডোমজুড়ে প্রাক্তন বনমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখাল তৃণমূল। মানুষই জবাব দেবে, প্রতিক্রিয়ায় জানালেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ডুমুরজলায় এদিন শাসকদলের সভামঞ্চে লক্ষ্মীরতন শুক্লর নাম থাকলেও, তিনি উপস্থিত ছিলেন না।

চাটার্ড ফ্লাইটে দিল্লি নিয়ে গিয়ে মেগা যোগদানের পর ৩১ জানুয়ারি হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে যোগদান মেলা করেছিল বিজেপি। আগাগোড়া ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দিল্লি থেকে সেই সভায় নজর ছিল অমিত শাহেরও। এক সপ্তাহের মাথায় সেই ডুমুরজলাতেই পাল্টা জনসভা করল তৃণমূল কংগ্রেস। এই সভা থেকে রাজীবকে আক্রমণ করে তৃণমূলের শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আজ কথা দিচ্ছি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, শরীরে ভদ্রলোকের রক্ত বইলে ডোমজুড়ে প্রার্থী হও, পালিয়ে যেও না।’

বিজেপির করে যাওয়া সভাস্থলে গঙ্গাজল ছড়াল শাসকদল। আর একই দিনে হাওড়ার ডোমজুড়ে নিজের খাসতালুকে কালো পতাকা দেখানো হল সদ্য বিজেপিতে যোগদানকারী রাজীবকে। উঠল রাজীব-বিরোধী স্লোগান। পাল্টা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিলেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। আর এসব নিয়েই দিনের শেষে তৃণমূল ও বিজেপির তরজা এক নতুন মাত্রা পেল।

রাজীব বলেছেন, ‘বারবার বলছি, আমি রাজনৈতিক সৌজন্য দেখাব। তাঁরা যদি হতাশা থেকে দু’এক জায়গায় করে থাকেন, করুন। মানুষের আবেগ দেখলেন তো। মানুষ কী চাইছে সেটা দেখুন। যাঁরা করছেন হতাশা থেকে করছেন। লাভ হবে না।’

পাল্টা হাওড়া সদরের তৃণমূল চেয়ারম্যান অরূপ রায় বলেছেন, ‘যুদ্ধের আগে যদি সেনাপতি ছেড়ে যায়, তাহলে কর্মীদের আবেগ থাকবেই। সিরাজদৌল্লাকে মানুষ কুর্ণিশ করে কিন্তু মীরজাফরকে মানুষ বিশ্বাস করে না। রাবণকে সম্মান করে, বিভীষণকে নয়।’

২৯ জানুয়ারি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর বিধানসভা থেকে যখন রাজীব বেরোচ্ছিলেন, তখন তাঁর হাতে ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। যা নিয়ে এদিন তীব্র কটাক্ষ করে তৃণমূল। কল্যাণ বলেন, ‘দলের প্রার্থীকে হারানোর জন্য সব চেষ্টা করেছিল। তোমার কাছ থেকে নীতির কথা শুনব? যে মন্ত্রিত্বে বেশি কন্ট্রাক্টর সেটি ভাল, যেই সরিয়ে দিল দিদি খারাপ, দল খারাপ, কন্ট্রাক্টর ছাড়া চলব না। বেইমান, মীরজাফরকে ডোমজুড়ের সমস্ত কর্মীকে নিয়ে মমতাকে সামনে রেখে এমন হারান হারাব যে ২০২১ থেকে দু বছর রাতে ঘুমোতে না পারে। এখন বড় কথা, মায়ের ছবি নিয়ে যাচ্ছে, আমার মা, চোখ দিয়ে জল পড়ছে, উত্তমকুমার বেঁচে থাকলে বলত এত বড় অভিনেতা!’

তৃণমূলের একের পর এক নেতা যখন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করছেন, রবিবার তখন নিজের খাসতালুকে বিজেপির ‘আর নয় অন্যায়’ কর্মসূচিতে যোগ দেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী। পদযাত্রা শুরুর আগেই এলাকা ছেয়ে যায় কালো কাগজে ‘বিশ্বাসঘাতক’ লেখা পোস্টারে। কোনও জায়গায় আবার রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে পরানো হয় জুতোর মালা। কর্মসূচি শুরু হতেই রাজীবকে কালো পতাকা দেখাতে শুরু করেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। পাল্টা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে থাকেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। বিক্ষোভকে গুরুত্ব না দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় মিছিল। পরে তৃণমূলকে পাল্টা কটাক্ষ করেন রাজীব।