বিটন চক্রবর্তী ও উজ্জ্ব্ল মুখোপাধ্যায়, পূর্ব মেদিনীপুর: শুভেন্দু অধিকারীর কর্মসূচি ঘিরে দিনভর উত্তপ্ত হল নন্দীগ্রাম। সোনাচূড়ায় সংঘর্ষে জড়ালেন তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীরা। বিজেপির সভা মঞ্চ ভাঙচুর হল কালীচরণপুরে। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি দু’পক্ষের বেশ কয়েকজন।
আক্ষরিক অর্থেই নন্দীগ্রাম হয়ে উঠল ব্যাটলগ্রাউন্ড। মার, পাল্টা মারে রক্ত ঝরল রাজ্যের সবথেকে নজরকাড়া কেন্দ্রে।কালীচরণপুর থেকে সোনাচূড়া বা ভূতার মোড়। দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রর চেহারা নিল নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লক।
বুধবার দুপুর থেকে একটু একটু করে তাতছিল নন্দীগ্রাম। ওইদিন ভেটুরিয়ায় শুভেন্দু অধিকারীর কনভয় আটকে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল।
বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া থেকে শুভেন্দু অধিকারীর কনভয় বেরিয়ে যেতেই সংঘর্ষে জড়ায় তৃণমূল ও বিজেপি। বাঁশ, লাঠি নিয়ে একে অপরের দিকে তেড়ে যায় দু’পক্ষ। এদিন পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে সঙ্গে নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর কনভয় ছোটে সোনাচূড়া থেকে কালীচরণপুর।
কালীচরণপুর বিজেপি প্রার্থী পৌঁছানোর আগেই সভামঞ্চ ভাঙচুর হয়। নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ, ‘‘হারবেই বলে মমতা এসব করছে, ভয় পেয়েছে, আমরা করব কেন?’’
অন্যদিকে তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, ‘‘বিজেপি প্রার্থী প্ররোচিত করছেন, মানুষ গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তা বলে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হবে !’’
তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপির প্ররোচনায় অশান্ত হয়ে উঠেছে নন্দীগ্রাম। বিজেপির পাল্টা দাবি,  তাদের কর্মীদের মারধর করে তৃণমূল। আহত বিজেপি কর্মীদের রেয়াপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখতে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান।
আহত তৃণমূল কর্মী খোকন শিটের দাবি, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে আমাদের বিজেপি কর্মীরা মারধর করে !’’
এদিন বিক্ষোভের জেরে সোনাচূড়ায় শুভেন্দু অধিকারীর কর্মসূচি ভেস্তে যাওয়ায় ক্ষোভপ্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, ‘‘আমরা দাঁড়িয়ে আছি, বলব ভেবেছিলাম, এখানে ৫ বছরে কোনও উন্নতি হয়নি, রাস্তাঘাট কিছু হয়নি ৷’’


নিজের খাসতালুকে একাধিকবার বিক্ষোভের মুখে পড়লেও সেসব আমল না দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘যে নিজের বুথে জিততে পারে না, সে আবার নন্দীগ্রামে জিততে আসছে ৷’’
 ভোটের মুখে কার্যত ফুটছে নন্দীগ্রাম। হিংসার ঘনঘটা রাজ্যের সবথেকে ওজনদার কেন্দ্রে।


নন্দীগ্রামের এই হিংসার ঘটনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ তৃণমূল-বিজেপি উভয় দলই। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের অফিসে অভিযোগ জানাতে আসেন তৃণমূল নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন ও শশী পাঁজা। তাঁরা নন্দীগ্রামের হিংসার ঘটনায় নাম না করে বিজেপি প্রার্থীর দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তাঁরা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও বিররণ তাঁরা দিয়েছেন। এছাড়াও আগামীকাল জাতীয় নির্বাচন কমিশনেরও দ্বারস্থ হচ্ছে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। ওই দলে থাকবেন সৌগত রায় ও যশবন্ত সিনহা।


অন্যদিকে, নন্দীগ্রামের ঘটনায় বিজেপিও কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে। তারা বলেছে, নন্দীগ্রামে হিংসার ঘটনায় তাদের ছয় কর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ এক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল।


কমিশনের কাছেও এই ঘটনার খবর পৌঁছেছে। কমিশনের পক্ষ থেকে খোঁজখবর শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।