বাঁকুড়া: ভোটের ফল ঘোষণা ইস্তক তাঁর কাছে বয়ে আসছে অভিনন্দনের বন্যা। রাজ্য যখন সবুজ-ঝড়ে ছেয়ে গিয়েছে, সেই সময় যাবতীয় প্রতিকূলতাকে ছাপিয়ে গেরুয়া শিবিরকে জয় এনে দিয়েছেন পেশায় রাজমিস্ত্রি স্বামীর স্ত্রী চন্দনা বাউড়ি।


এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ার শালতোড়া আসনে ৩০ বছরের এই বধূকে প্রার্থী করেছিল গেরুয়া শিবির। রাজনীতির দুনিয়া থেকে দূরে থাকা একজন সাধারণ মহিলার ওপরই ভরসা রেখেছিল বিজেপি। সেই বিশ্বাসকে ব্যর্থ হতে দেননি চন্দনা।


গতকাল ফল ঘোষণা হতে দেখা যায়, ৪১৪৫ ভোটের ব্যবধানে তৃণমূল প্রার্থী সন্তোষকুমার মণ্ডলকে হারিয়ে দেন চন্দনা। তাঁর এই জয় অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। 


রাজ্যে যখন চারদিকে সবুজ ঝড়, সেই সময় রাজনীতির কূলগোত্রহীন হয়েও তিনি জয় ছনিয়ে নিয়েছেন। তাঁর এই কৃতিত্বকে এক সাধারণ মহিলার অসাধারণ জয় হিসেবেই দেখছেন সকলে।


স্বামী, দুই সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে পাঁচজনের সংসারের আর্থিক অবস্থাও এক কথায় নুন আনতে পান্তা ফুরনোর মতো। স্বামী রাজমিস্ত্রি, আর তিনি নিজে স্বামীর সঙ্গে জোগাড়ের কাজ করেন। অসমাপ্ত আবাস যোজনার বাড়িতে কোনও শৌচাগারও নেই।


নির্বাচনী হলফনামায় চন্দনা জানিয়েছিলেন, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ মাত্র ৩১ হাজার ৯৮৫ টাকা। তাঁর স্বামীর সম্পত্তির পরিমাণ ৩০ হাজার ৩১১ টাকা। দম্পতির রয়েছে তিনটি ছাগল ও ৩টি গরু।


চন্দনা বলেছেন, টিকিট ঘোষণার আগে, আমার কোনও ধারণাই ছিল না, যে আমাকে বিধানসভায় প্রার্থী করা হবে। তবে, অনেকে আমাকে উৎসাহ দিয়েছিল অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য। সত্যি বলতে, আমি ভাবতেই পারিনি, আমি পারব।


চন্দনার নাম গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়, যখন খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁর নাম উল্লেখ করেন। নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, বাংলার মহিলাদের আশা-আকাঙ্খার জলজ্যান্ত প্রতিবিম্ব হলেন চন্দনা বাউড়ি। 


দল তাঁকে প্রার্থী করার পর চন্দনা বলেছিলেন, "আমি ভাগ্যবান যে বিজেপি আমাকে লড়াইয়ের সুযোগ করে দিয়েছে।" প্রচার পর্বে বাচ্চাদের শাশুড়ির জিম্মায় দিয়ে সাত সাকালে পান্তা খেয়ে বেরিয়ে পড়তেন চন্দনা। মাঝেমধ্যে স্বামীও সঙ্গ দিতেন।


এহেন চন্দনা জেতার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেয়ে গিয়েছেন গ্রামবাংলার এই বধূ। তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অনেকেই। অনেক নেটাগরিক এই জয়কে অতিসাধারণ এক মেয়ের জয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 


বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে চন্দনা বাউরিকে শুভেচ্ছাও জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আপনার জয়, আমাদের সকলের জয়।’