সনৎ ঝা ও সুদীপ চক্রবর্তী: সংযুক্ত মোর্চায় জোটের সমীকরণ নিয়ে অসন্তোষ। উত্তর দিনাজপুরে বিজেপিতে যোগ দিলেন চোপড়া ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি অশোক রায়। আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে বামেদের হাত মেলানোর বিরোধিতায় সিপিএম থেকে অব্যাহতি চাইলেন শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য শঙ্কর ঘোষ।


শিলিগুড়ির একমাত্র বামদুর্গে কি ভোটের মুখে বড়সড় ধাক্কা লাগতে চলেছে? প্রশ্ন তুলে দিয়েছে একটি চিঠি। সিপিএমের দার্জিলিং জেলা কমিটির সম্পাদককে চিঠি দিয়েছেন শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তথা সিপিএম নেতা শঙ্কর ঘোষ ৷ চিঠিতে সিপিএমের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন তিনি, যা এক কথায় ইস্তফার সমান।


এই চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন শঙ্কর ঘোষ। চিঠিতে দলত্যাগের পক্ষে একাধিক কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। সংখ্যাধিক্যের আড়ালে ভিন্নমতকে উপেক্ষা ৷ দলে বিতর্কের পরিসরের অভাব, ভিন্নমত পোষণে বিরাগভাজন হওয়া। পদত্যাগী বামনেতা শঙ্কর ঘোষ জানান, ‘‘দলের সঙ্গে নানা বিষয়ে মতানৈক্য। দমবন্ধ পরিস্থিতি। সেখান থেকে মুক্তি চাই ৷’’


 


বিধানসভা ভোটে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে জোট করেছে বামেরা। সিপিএমের এই অধ্যাপক নেতা যে তা মানতে পারছেন না, দলের দার্জিলিং জেলা কমিটিকে দেওয়া চিঠিতে তা স্পষ্ট। চিঠিতে লেখা হয়েছে,  ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সাথে জোট গঠন বামপন্থীদের ধর্ম সম্পর্কে সাধারণ বোঝাপড়ার বিপরীতমুখী অবস্থান বলে মনে করি। পার্টি বর্ণিত বিভাজনের রাজনীতি ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এই কারণে এই সম্ভাবনার দিক খতিয়ে দেখার প্রয়োজন ছিল। এই ব্যাপারে সংগঠনের অভ্যন্তরে আলোচনা না করায় - বিতর্ক এড়িয়ে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতাকেই মান্যতা দেয়। দার্জিলিং জেলার সিপিএমের সম্পাদক জীবেশ সরকার জানান, ‘‘উনি কতগুলো সমস্যা সামনে রেখে চিঠি দিয়েছেন। তা নিয়ে কথা বলছি। পদত্যাগ করেননি। অব্যাহতি চেয়েছেন। পারিবারিক সমস্যা রয়েছে। কথা বলে মিটে যাবে ৷’’


উত্তরবঙ্গে ভাঙন কংগ্রেসের ঘরেও। উত্তর দিনাজপুরে ‘হাত’ ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন চোপড়ার কংগ্রেস নেতা অশোক রায়। মঙ্গলবার রাতে তাঁর হাতে পদ্ম পতাকা তুলে দেন উত্তর দিনাজপুর জেলার বিজেপি সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ি। ৪০ বছর কংগ্রেসের ছত্রছায়ায় থাকা নেতার অভিযোগ, জেলা কংগ্রেসের তরফে চোপড়া আসনটি চাওয়া হলেও, তা মেলেনি।


অশোক রায়, কংগ্রেসত্যাগী বিজেপি নেতা জানান, ২০ বছর ধরে চোপড়া আসনটি সিপিএমকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এলাকার কংগ্রেস কর্মীরা হতাশ। তাঁদের চাঙ্গা করতেই বিজেপিতে যোগদান করেন ৷


উত্তর দিনাজপুরের কংগ্রেস সহ সভাপতি পবিত্র চন্দ জানান, চোপড়ায় একটাই নাম ছিল, সেটা হল অশোক রায়। তাঁর আন্দোলনকে অস্বীকার করা যাবে না। দল দুর্বল হল। জোটধর্ম পালন করতে গিয়ে তাঁকে হারালাম। নতুন মুখ এনে জায়গা ভরাট করার চেষ্টা করব ৷ শিলিগুড়িতে সিপিএম, চোপড়ায় কংগ্রেস। ভোটের আগে জোড়া ধাক্কা জোটের দুই শিবিরে।