পূর্ব মেদিনীপুর: জল্পনার অবসান। আজই পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় অমিত শাহর সভায় বিজেপিতে যোগ দিলেন কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী। এটা আত্মসম্মানের লড়াই, মেদিনীপুরের ইজ্জত বাঁচতে লড়ব, বিজেপিতে যোগদান প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদের। তিনি আরও বললেন, এটা ইজ্জতের লড়াই। নন্দীগ্রামে জিতবেন শুভেন্দুই। পূর্ব মেদিনীপুরে সাফ হয়ে যাবে তৃণমূল।
তমলুকের সাংসদ, শিশির-পুত্র দিব্যেন্দু অধিকারী গতকাল জানান, আজ অমিত শাহকে স্বাগত জানাতে হেলিপ্যাডে উপস্থিত থাকবেন তিনি। এর আগে ২০২০-র ১৯ ডিসেম্বর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শিশির-পুত্র শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূল ছেড়ে ইতিমধ্যেই গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন শুভেন্দুর আরেক ভাই কাঁথি পুরসভার প্রশাসক সৌমেন্দু অধিকারী।
ঘাসফুল ছেড়ে পদ্ম শিবিরে এলেন শিশির। দলের সঙ্গে বেশ কয়েকমাস ধরেই দূরত্ব বাড়ছিল। তিক্ততা বাড়ছিল। শেষপর্যন্ত তৃণমূলের সঙ্গে গত দু’দশকের সম্পর্ক ছিঁড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন বর্ষীয়ান সাংসদ শিশির অধিকারী।বিজেপির মঞ্চ থেকে বললেন, অমিত শাহকে বলব, এই জেলাকে রক্ষা করুন। বাংলাকে রক্ষা করুন।
শিশিরকে কটাক্ষ করে রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেছেন,ধৃতরাষ্ট্র পুত্র প্রেমে অন্ধ ছিলেন বলে মহাভারতের যুদ্ধ হয়েছিল। শিশিরদা পুত্র প্রেমে এমন অন্ধ যে, ছেলে ভুল পথে যাচ্ছে সেটা বুঝেও চোখ বুজে রয়েছেন। শিশিরদা বলেছেন ,এখন যদি ছেলে তাড়িয়ে দেয় বুড়ো বয়সে যাব কোথায়? তাই পুত্র যা বলবে শিশিরদাকে তাই করতে হবে।
গত ১৯ ডিসেম্বর, মেদিনীপুরে অমিত শাহ-র সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দেন শিশির অধিকারীর মেজোছেলে শুভেন্দু অধিকারী।এরপরই কাঁথির শান্তিকুঞ্জ থেকে কালীঘাটের আত্মিক দূরত্ব অনেকটাই বেড়ে যায়। কয়েক মাসের ব্যবধানে পাকাপাকি বিচ্ছেদ! শিশির বলেছিলেন, ডেলি বলছে, গদ্দার, মীরজাফর, তাদের সঙ্গে কথা বলে কেউ!
এগরায় যখন অমিত শাহর সভায় যোগ দিচ্ছেন শিশির, তখন তাঁর গড় বলে পরিচিত কাঁথি দক্ষিণের সভায় নাম না করে অধিকারীদের আক্রমণ করেন মমতা।বলেন, যারা পালিয়ে গেছে ,গদ্দারি করেছে, কত নিয়েছে জিজ্ঞাসা করুন। কারা গেল আর এল, কিছু যায় আসে না, আমি সম্মান করতাম, অনেক বড় বড় পদ দিয়েছিলাম, আজ সেই মীরজাফর, গদ্দার, বিশ্বাসঘাতক বিজেপিকে হাত ধরে নিয়ে এসেছে।
শিশির অধিকারী। পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে অন্যতম ফ্যাক্টর।১৯৮২ সালে প্রথমবার কাঁথি দক্ষিণ থেকে কংগ্রেসের বিধায়ক নির্বাচিত হন শিশির অধিকারী।এরপর ২০০১ থেকে ২০০৯ অবধি মোট ৩ বারের বিধায়ক তিনি।২০০৯ সালে প্রথমবার সংসদ-যাত্রা।২০১২-র ২২ সেপ্টেম্বর অবধি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন শিশির অধিকারী।
২০১৪-তে কাঁথি থেকে দ্বিতীয়বার সাংসদ নির্বাচিত হন।গ্রামোন্নয়ন, পরিবহণ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির একাধিক গুরুদায়িত্ব সামলেছেন।পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে বরাবরই কর্তৃত্বের ছাপ রেখেছেন শিশির। ভরা বাম জমানাতেও, দশকের পর দশক কাঁথি পুরসভা আগলে রাখেন তিনি।