কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, অরিত্রিক ভট্টাচার্য ও সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা ও পূর্ব মেদিনীপুর: মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিলেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ইস্তফা দিয়ে বললেন, অনেক বেদনা নিয়ে ইস্তফা দিয়েছি।
রাজীবের ইস্তফার পর তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, মা তোর কত রঙ্গ দেখব। এখন রাজীবের রঙ্গ দেখছি।
দলের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন রাজীব। পাল্টা তাঁকে আক্রমণ করতে ছাড়ল না তৃণমূলও।
অনেকে অবশ্য বলছেন, এ তো হওয়ারই ছিল! গত কয়েকমাস ধরে ডোমজুড়ের তৃণমূল বিধায়ক যেভাবে একটানা বেসুরো গাইছিলেন, তাতেই স্পষ্ট হয়ে গেছিল যে, চরম সিদ্ধান্ত নেওয়াটা এখন সময়ের অপেক্ষা।
তৃণমূল ছাড়ার আগে ঠিক যেভাবে শুভেন্দু অধিকারীর ছবি-সহ দাদার অনুগামী বলে পোস্টার পড়ছিল, সেভাবে একই ধরনের পোস্টার দেখা গেছিল রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যও।
জল্পনা আরও বাড়িয়ে কিছুদিনের মধ্যেই দলীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন রাজীব। গত বছরই তিনি বলেছিলেন, দক্ষ লোকের যথাযথভাবে বিচার হয় না। যোগ্যতা থাকলেও অনেকে সুযোগ পান না। সেচমন্ত্রী থাকাকালীন কাজ করতে দেওয়া হয়নি। এখন দেখছি রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। চুনোপুঁটিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কিছু হবে না।
২৭ নভেম্বর শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রিত্ব ছাড়েন। ডিসেম্বরের শুরুতে, ফের দলীয় নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে সরব হন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তাঁর সুর ছিল আরও চড়া। বলেছিলেন, যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত, তাঁরা স্তাবক বলে সামনের সারিতে নিয়ে আসা হচ্ছে। এখন স্তাবকতার যুগ। ‘হ্যাঁ’ তে ‘হ্যাঁ’ আর ‘না’ তে ‘না’ মেলাতে হবে। যাঁরা ঠান্ডা ঘরে বসে থাকেন তাঁরাই সামনের সারিতে চলে আসছেন। যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছি। সঙ্গে সঙ্গে পিছনের সারিতে ফেলে দিয়েছে।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন মঞ্চে এই মন্তব্য করেন, সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন রুদ্রনীল ঘোষও। যাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা এখন তুঙ্গে। সম্প্রতি শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখাও করেছেন তিনি।
রাজীব যখন পদত্যাগের পর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন, তখন তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন রুদ্রনীল। তিনি বলেছেন, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা শুধু তৃণমূল নয়, গোটা রাজ্যের ক্ষতি হয়তো কষ্ট সহ্য করার একটা সীমা থাকে, তাই এই সিদ্ধান্ত। তৃণমূলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রুদ্রনীল।


রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে তৃণমূল অবশ্য তাঁর মানভঞ্জনের চেষ্টা করেছিল। ১৩ ডিসেম্বর এবং ২১ ডিসেম্বর রাজীবের সঙ্গে বৈঠক করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানে ছিলেন তৃণমূলের ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরও। কিন্তু, তাতে যে কাজের কাজ কিছুই হয়নি, তা বুঝিয়ে পরপর পাঁচটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে গরহাজির থাকেন রাজীব। গত শনিবার ফেসবুক লাইভে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তোলেন তিনি।

বলেছিলেন, যে কোনও বক্তব্য দলকে বলছি, তখন কিছু নেতাকে আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার বক্তব্যটাকে সমাধান না করে এভাবে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এরপর থেকেই জল্পনা চলছিল, রাজীব কি শীগগিরই চরম কোনও পদক্ষেপ নেবেন। অবশেষে শুক্রবার সকালে আচমকাই মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। শুভেন্দু অধিকারীও মন্ত্রিত্ব ছেড়ে শুরুটা করেছিলেন। রাজীবও কি তাই করবেন? জল্পনা জিইয়ে রেখেছেন খোদ শুভেন্দুই। তিনি বলেন, "আমার তো খুব ভাল লাগছে। দেখ তৃণমূল কেমন লাগছে। ভোট ঘোষণার আগে পর্যন্ত দেখতে থাকুন। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেরুদণ্ডটা শক্ত।"
এক প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু বলেছেন, এর পরবর্তী কী পদক্ষেপ করবেন, তা রাজীববাবুই বলবেন। তাঁকে বিজেপিতে স্বাগত জানিয়েছেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়।
এমাসের শেষে রাজ্যে আসার কথা অমিত শাহর। তার আগে এই টানাপোড়েনের জল কোনদিকে গড়ায়, সেদিকেই নজর রয়েছে সবার।