কলকাতা: দিলীপ ঘোষকে গ্রেফতারের দাবি তৃণমূল কংগ্রেসের। এক সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় বলেছেন, বিজেপি রাজ্য সভাপতি যে ধরনের মন্তব্য প্রচার সভায় করেছেন, সেজন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তাঁকে গ্রেফতার করতে হবে।
রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের চতুর্থ পর্যায়ের ভোট চলাকালে গতকাল কোচবিহারের শীতলকুচি বিধানসভা কেন্দ্রের একটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চারজনের মৃত্যু হয়। এর আগে শীতলকুচির একটি বুথে ভোটের লাইনে গুলি চালনায় এক তরুণের মৃত্যু হয়।
শীতলকুচিতে ভোটের দিন এই মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে শাসক-বিরোধী তরজা উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। তৃণমূল এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার অভিযোগ করেছে। তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছে। পাল্টা বিজেপি এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উস্কানিমূলক মন্তব্যকে দায়ী করেছে।
এরইমধ্যে মৃত্যু ঘিরে বিভাজনের রাজনীতিতে শান দেওয়ার অভিযোগ একে অপরের বিরুদ্ধে তুলেছে তৃণমূল ও বিজেপি।
এদিন সকালে দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, উনি পাপ করছেন, অন্যায় করছেন। মানুষকে উস্কে দিচ্ছেন। প্রচার বন্ধ করে দেওয়া উচিত। মমতার বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত।
পরে বরানগরের প্রচার সভা থেকে হুঙ্কার দেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছেন, ‘শীতলকুচিতে দুষ্টু ছেলেরা গুলি খেয়েছে। এই দুষ্টু ছেলেরা থাকবে না বাংলায়।কেউ আইন হাতে নিলে এটা সারা বাংলায় হবে।১৭ তারিখও কেন্দ্রীয় বাহিনী বুথে থাকবে।কেউ বাড়াবাড়ি করলে, জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে।’
দিলীপ ঘোষ বলেছেন, সেন্ট্রাল ফোর্স হাতে বন্দুক নিয়ে ঘুরতে আসেনি। কেউ লাল চোখ দেখাতে পারবে না। কেউ বাড়াবাড়ি করলে জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে।
পরে অমিত শাহও ভোটের প্রচারে এসে এই ঘটনায় তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন। তিনি বলেছেন, শীতলকুচিকাণ্ডে তোষণের রাজনীতি করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪ জনের মৃত্যু নিয়ে সরব হলেও, আনন্দ বর্মনের মৃত্যু নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করলেন না কেন? প্রশ্ন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর।
বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি বলেছেন, ‘চতুর্থ দফার ভোটে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। বুথে অজ্ঞাত পরিচয় লোক হামলা চালিয়েছে। সিআরপিএফের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। বাধ্য হয়ে গুলি চালানোয় মৃত্যু হয়েছে।ঘটনা নিয়ে রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে।’
অমিত শাহ বলেছেন , ‘সকালে ওই বুথেই আনন্দ বর্মনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আনন্দ বর্মনের মৃত্যু নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেননি মমতা। কারণ, আনন্দ বর্মন রাজবংশী সম্প্রদায়ের, তিনি মমতার ভোট ব্যাঙ্ক নয়’।
অমিত শাহর দাবি, শোকপ্রকাশেও বিভেদ, তোষণের রাজনীতি করছেন মমতা। বাহিনীকে ঘেরাওয়ের উস্কানি দিয়েছেন মমতা। উস্কানি না দিলে এমন ঘটনা ঘটত না।’
তৃণমূলের পক্ষ থেকে অমিত শাহর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করা হয়। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অসত্য বলছেন। তৃণমূল ভোটের দিন আনন্দ বর্মন সহ পাঁচজনের মৃত্যুতেই শোকপ্রকাশ করেছে। তিনি বলেছেন, অমিত শাহ মিথ্যে কথা বলছেন। বিভাজনমূলক কথাবার্তা বলছেন। তৃণমূল সাংসদ বলেছেন, তিনি আরও একবার অমিত শাহর ইস্তফা দাবি করছেন।
পরে সাংবাদিক বৈঠকে সুখেন্দু শেখর রায় বলেন, অমিত শাহ মিথ্যাচার করছেন। তৃণমূল পাঁচজনের মৃত্যুতেই দুঃখপ্রকাশ করেছে। কিন্তু অমিত শাহ বা নরেন্দ্র মোদি কোথাও পাঁচজনের কথা বলেননি। বিভাজনের রাজনীতি করছে বিজেপি।
সুখেন্দু শেখর রায় বলেছেন, প্ররোচনামূলক মন্তব্যের জন্য দিলীপ ঘোষকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছে তৃণমূল।