কলকাতা : ভোটের ষষ্ঠ দফায় বাংলার ৮ কেন্দ্রে ভোট শনিবার। ভোট শুরুর আগে থেকেই হিংসা ছড়াল বাংলায়।  ষষ্ঠ দফার ভোটের আগেই রক্ত ঝরল মেদিনীপুরে। মহিষাদলে খুন হলেন তৃণমূল নেতা। সকাল থেকেই ঘটনাবহুল ষষ্ঠ দফা। দিকে দিকে বিক্ষোভের মুখে পড়লেন বিজেপি প্রার্থীরা। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে হিরণ চট্টোপাধ্যায়। দিকে দিকে গো-ব্যাক স্লোগান দেওয়া হল বিজেপি প্রার্থীদের। সারা সকাল শান্তিপূর্ণ থাকার পর অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল মেদিলীপুরের গড়বেতা। বিজেপি প্রার্থীকে দেখেই ইটবৃষ্টি শুরু হল। মাথা ফাটল নিরাপত্তারক্ষীর। ভাঙা হল এবিপি আনন্দর গাড়িও। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ভোটের ষষ্ঠ দফায় কী কী ঘটনা ঘটল বঙ্গে। দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত রইল ভোটের দিনপঞ্জি।


ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্র 


ঝাড়গ্রাম লোকসভার গড়বেতার মোগলাপোতায় ধুন্ধুমার বেঁধে গেল। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষোভের মুখে বিজেপি প্রার্থী প্রণত টুডু। বিজেপি প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাথরবৃষ্টি করা হল। ইটের ঘায়ে মাথা ফাটল প্রার্থীর নিরাপত্তা রক্ষী CISF জওয়ানের। এবিপি আনন্দর গাড়িও ভাঙচুর করা হল। পালিয়ে বাঁচেন ঝাড়গ্রামের বিজেপি প্রার্থী। এবিপি আনন্দর গাড়িতে এলাকা ছাড়েন দুই CISF জওয়ান।  ঘটনায় অ্যাকশন টেকন রিপোর্ট চায় কমিশন। আরও কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর নির্দেশ CEO-র।   

কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র 


পটাশপুরের ২৩৫ নম্বর বুথের সামনে জমায়েত সরাতে নিজেই মাঠে নামেন কাঁথির বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারী। তাঁকে দেখে পালায় লোকজন। বিজেপি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে বলে অভিযোগ করে তৃণমূল। সৌমেন্দুকে উদ্দেশ করে
জয় বাংলা স্লোগান দেন তৃণমূল কর্মীরা। পটাশপুরের মঙ্গলচকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে। অন্য়দিকে ভগবানপুরে মারের মুখে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠে অভিযোগ। ১৬০ নম্বর বুথের কাছে বিজেপি নেতাকে মারধর করা হয়। 


বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্র  


শালতোড়ায় দফায় দফায় বিক্ষোভের মুখে বাঁকুড়ার বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার। ৫ বছরে দেখা যায়নি কেন, গ্রামে জল নেই, কী করেছেন, বিজেপি প্রার্থীকে প্রশ্ন করেন ঝনকা গ্রামের বাসিন্দারা। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে জল চাও, পাল্টা বলেন বিজেপি প্রার্থী। বাঁকুড়া লোকসভার রঘুনাথপুরে তৃণমূলের প্রতীক আঁকা ব্যাজ পরে ভোট দিতে এলেন যুব তৃণমূল কংগ্রেসের রঘুনাথপুর শহর সহ সভাপতি অমিত বাউড়ি। রনির্বাচন কমিশনের কর্মীদের নজরে পড়ায় ব্যাজ খুলে ফেলেন যুব তৃণমূল নেতা। 


বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র   


তৃণমূলের প্রতীক আঁকা ব্যাজ পরে বুথে হাজির হলেন সুজাতা মণ্ডল। EVM-এ হাত ছুঁইয়ে করলেন প্রণাম। এই নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়
। বিজেপিও করছে, সাফাই দিলেন বিষ্ণুপুরের তৃণমূল প্রার্থী। ভোটের দিন খোশ মেজাজে ছিলেন সৌমিত্র খাঁ। ভোটের দিন সকালেও ' আমাকে ভোট দেবেন, সকাল সকাল ভোট দিন', বাজারে, মন্দিরে ঘোরার পথে এই ভাবেই ভোট চাইছেন সুজাতা মণ্ডল। আদর্শ
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন বিষ্ণুপুরের তৃণমূল প্রার্থী, অভিযোগ জানাল বিজেপি। 

তমলুক লোকসভা কেন্দ্র   


ভোটের আগের রাতে তমলুক লোকসভার মহিষাদলে খুন হয়ে গেলেন তৃণমূল নেতা। অভিযোগের তির বিজেপির দিকে। মৃত শেখ মইবুল গেঁওখালির বেতকুণ্ডু গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য। ঘটনায় বিজেপির ১৪৯ নম্বর বুথের সভাপতি মিঠুন মান্না-সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে মহিষাদল থানার পুলিশ। ঘটনাস্থলেই ছিলেন না বলে দাবি করেছেন ধৃত বুথ সভাপতি। 


শনিবার দফায় দফায় বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। এদিন ভোট শুরুর আগেই বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। ২০৬-২০৯ নম্বর বুথে এজেন্টদের বসতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ পেয়ে হলদিয়ার ঘাসিপুর প্রাথমিক স্কুলের বুথে যান বিজেপি প্রার্থী। দেখা যায়, সমস্ত  এজেন্টই রয়েছেন। বিভ্রান্ত করার অভিযোগে এক মহিলাকে বুথে থেকে বার করে দেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বেলা গড়াতে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ পেয়ে হলদিয়া ভবানীপুর শান্তশ্রী বিদ্যামন্দির বুথে গিয়েছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি সেখানে পৌঁছতেই ধরা পড়ে এই ছবি। ছাপ্পা দেওয়ার অভিযোগে কয়েকজনকে তাড়া করেন বিজেপির কর্মীরা।  
অন্যদিকে, 


ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্র


ভোটের দিন সকাল থেকেই উত্তপ্ত ঘাটাল। দিকে দিকে বিক্ষোভের মুখে পড়লেন হিরণ চট্টোপাধ্যায়। বিজেপি প্রার্থী এক যোগে নিশানা করলেন কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশকে। তৃণমূলের সঙ্গে পরিকল্পনা করে তাঁকে হারানোর চেষ্টা চলছে, অভিযোগ হিরণের। কেশপুরের মুগবসান এলাকায় হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে নিশানা করে উঠল চোর চোর স্লোগান। ঘাটালের বিজেপি প্রার্থীর গাড়ি আটকালো শ’ পাঁচেক তৃণমূল কর্মী।  গাছের গুঁড়ি ফেলে আটকানো হল রাস্তা।  CRPF-এর DIG-র সামনেই চলে তাণ্ডব।  প্রার্থীর গাড়িতে পড়ল ঢিল। বাঁশ-লাঠি, ইট নিয়ে ঘাটালের বিজেপি প্রার্থীর গাড়ি আটকে দেন তৃণমূল কর্মীরা। কেশপুরের আনন্দপুরে আটকে দেওয়া হল হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের কনভয়। এত গাড়ি নিয়ে ঘোরা যাবে না, ঘাটালের বিজেপি প্রার্থীকে জানাল পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে বেঁধে গেল হিরণের বচসা। এদিকে খোশ মেজাজে পাওয়া গেল দেবকে।  


পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্র 


অপেক্ষাকৃত কম ঘটনাবহুল রইল পুরুলিয়া। এই কেন্দ্রের  ঝালদায় বিজেপির ক্যাম্প অফিস থেকে ছোলা খেয়ে ভোট দিতে গেলেন
পুরুলিয়ার কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো। এটাই আমাদের ইচাক গ্রামের ঐতিহ্য, দাবি নেপালের। এখানেই  লুঙ্গি পরে বুথে ঢুকেছিলে প্রিসাইডিং অফিসার। এই বুথেই মহিলা ভোটারের পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল পুরুলিয়ার বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর বিরুদ্ধে। ভোটারের দাবি, তাঁর পরিচয়পত্র ছিল স্বামীর হাতে। বিজেপি প্রার্থী পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়ায় তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যেতে পারছেন না। 


মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র


মেদিনীপুর লোকসভার দাঁতনের সাবড়া গ্রামে ভোট চলাকালীন বুথের বাইরে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ বেঁধে যায়। বাঁশ-লাঠি নিয়ে হামলা হয়, আহত বেশ কয়েকজন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্যাম্প ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ বিজেপির। গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে হামলার পাল্টা অভিযোগ করেছে তৃণমূল।
কেশিয়াড়ির চাকলা প্রাথমিক বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের বুথে দীর্ঘক্ষণ বিজেপির পোলিং এজেন্ট ছিল না বলে অভিযোগ করেন অগ্নিমিত্রা পাল। বুথে ঢুকে এজেন্ট বসান মেদিনীপুরের বিজেপি প্রার্থী। অগ্নিমিত্রাকে গো ব্যাক স্লোগান দেন তৃণমূল কর্মীরা। মেদিনীপুরের তলকুই জুনিয়র হাইস্কুলের ১৩ নম্বর বুথে বিজেপি পোলিং এজেন্টের সঙ্গে বচসায় জড়ান জুন মালিয়া। বুথে ঢুকে EVM-এর কাছে গিয়ে আপনি পরীক্ষা করতে পারেন না, মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থীকে বলেন বিজেপি পোলিং এজেন্ট। আপনার কাছ থেকে শিখব না, পাল্টা জবাব দেন জুন।


রেমাল দাপটে ভাসবে মহানগরী, কলকাতায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টির সম্ভাবনা


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।