গোপাল চট্টোপাধ্যায়, বীরভূম: ‘৩০ শতাংশ মুসলিম ইচ্ছা করলে ভারতে চারটে পাকিস্তান বানাতে পারে। ফেরাতে পারে সূচপুর গণহত্যার স্মৃতি।’ নানুর থেকে স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ আলমের হুমকিতে বিতর্ক। বিভাজনের রাজনীতি, পাল্টা বিজেপি।


‘যারা পাকিস্তান জিতলে বোমা ফাটায়, তাদের কি ভোট দেবেন? নাকি ঘরের ছেলেকে জেতাবেন?’ কয়েকদিন আগেই এই মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। ভোটমুখী বাংলায় ফের উঠে এল ‘পাকিস্তান’ প্রসঙ্গ! এবার যা শোনা গেল তৃণমূলের সভায়। নানুরের তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক কমিটির সদস্য শেখ আলম বলেন, ‘আমরা ৩০ শতাংশ যদি ভারতের বুকে দাঁড়াই, চার-চারটে পাকিস্তান তৈরি হবে।’


যাঁকে এই মন্তব্য করতে শোনা যাচ্ছে, তিনি হলেন শেখ আলম। তৃণমূল সূত্রে খবর, তিনি হলেন নানুরের ব্লক কমিটির সদস্য। দীর্ঘদিনের তৃণমূলের কর্মী আলম। ২০১১ সালে রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের আগে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে জড়িত থাকা, বোমা মারা, গুলি চালানো, আগুন লাগানো সহ একাধিক মামলায় তিনবার জেল খাটেন তিনি। দল ক্ষমতায় আসার পরে তাঁকে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক কমিটির সদস্য হয়। অজয় নদীর বেআইনি বলি ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। দলে গোষ্ঠীকোন্দলের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। তবে লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের নির্দেশে আবার দলে গুরুত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। এখন নানুরের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে কর্মীদের কাছে পরিচিত তিনি। দলের সব কর্মসূচিতে সামনের সারিতে থাকেন তিনি।


মঙ্গলবার বিজেপির মিছিলকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছিল নানুরের বাসাপাড়ায়। বুধবার একই জায়গায় পাল্টা মিছিল করে তৃণমূল। মিছিলের শেষে বক্তব্য রাখতে গিয়েই এই বিতর্কিত মন্তব্য করেন শেখ আলম। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যদি ইচ্ছে হত, তাহলে ওইদিন আরও একটা সূচপুর বানিয়ে দিতে পারতাম। ৭০ শতাংশ মানুষ নিয়ে ওরা মনে করছে দেশ চালাবে। আমরা ৩০ শতাংশ যদি ভারতের বুকে দাঁড়াই, চার-চারটে পাকিস্তান তৈরি হবে।’


সাম্প্রদায়িকতায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে বরাবর বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলে এসেছে তৃণমূল-সহ বিরোধীরা। কিন্তু এবার তৃণমূলের সভায়, পাকিস্তান তৈরির হুঁশিয়ারি শোনার পর পাল্টা কটাক্ষ করতে দেরি করেনি গেরুয়া শিবির। শেখ আলমের বক্তব্য পোস্ট করে, বিজেপির আইটি সেলের প্রধান ও পশ্চিমবঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অমিত মালব্য ট্যুইটারে লিখেছেন, ‘তিনি (শেখ আলম) অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি এই অবস্থানকে সমর্থন করেন? আমরা কি এইরকম বাংলা চাইছি?’ রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই মানসিকতা তৈরি করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এরা বহুত্ববাদকে ধ্বংস করতে চায়। ৪৬-এর পশ্চিমবঙ্গ ফেরাতে চাইছে। বাংলার মানুষের উচিত এদের চিহ্নিত করে বিচ্ছিন্ন করা।’


তবে বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়ার পরই নিজের মন্তব্যের সাফাই দিয়েছেন নানুরের তৃণমূল নেতা শেখ আলম। তিনি বলেন, ‘আমি হয়তো কোথাও বলেছি। আমি বলতে চেয়েছি, ওইদিন হয়তো একটি সূচপুর হয়ে যেতে পারত। আর পাকিস্তান কথাটা সেইভাবে বলতে চাইনি।’


যদিও বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, শেখ আলম তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁর মন্তব্যকেও সমর্থন করে না দল। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, শেখ আলম যদি তৃণমূলের কেউ না হন, তাহলে বুধবার তাঁকে তৃণমূলের সভায় বক্তব্য রাখার অনুমতি দেওয়া হল কেন? বক্তব্য রাখার সময় তাঁর সামনেই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডলের ছবি দেওয়া ফ্লেক্স। শুধু তাই নয়, শেখ আলম যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বীরভূম জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা করিম খানও।