কলকাতা: প্রথম নয়, ব্যোমকেশের সঙ্গে তিনি আত্মস্থ হয়ে গিয়েছেন ইতিমধ্যেই। তবে ব্যোমকেশের নতুন এই সিনেমা একটু আলাদা। কারণ? যে গল্পকে শেষ করে যেতে পারেননি ব্যোমকেশের স্রষ্টা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই খুনিকেই পর্দায় খুঁজে বের করবেন আবীর চট্টোপাধ্যায় (Abir Chatterjee)।
অসমাপ্ত গল্পকে সমাপ্ত করাই কী 'ব্যোমকেশ হত্যামঞ্চ'-র এক্স ফ্যাক্টর? এবিপি লাইভকে (ABP Live)-কে আবীর বলছেন, 'এর আগে যতবারই ব্যোমকেশ পর্দায় এসেছে, মানুষ জানতেন খুনি কে। কারণ, বাঙালি ব্যোমকেশ পড়েই বড় হয়েছে। কিন্তু এবার মানুষ যেমন সম্পূর্ণভাবে ব্যোমকেশের স্বাদ পাবেন, তেমনই বজায় থাকবে গল্পের উত্তেজনাও। দর্শক শেষপর্যন্ত ব্যোমকেশের মুখ থেকেই প্রথম জানবেন খুনি কে। তবে হ্যাঁ, আমরা জানি বাঙালির কাছে ব্যোমকেশ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সেটাকে পর্দায় তুলে ধরতে গিয়ে সামান্য পরিবর্তন করেছি বটে, কিন্তু খুব বেশি স্বাধীনতা নিই নি।'
কেবল গল্প নয়, এবার বদলে গিয়েছে ব্যোমকেশের অজিতও। 'ব্যোমকেশ হত্যামঞ্চ'-তে অজিতের ভূমিকায় অভিনয় করছেন সুহোত্র মুখোপাধ্যায়। প্রথম ছবিতেই অজিত-ব্যোমকেশের বন্ধুত্বের সেই চেনা রসায়ন সুহোত্রর সঙ্গে ফুটিয়ে তুলতে সমস্যা হয়েছিল? আবীর বলছেন, 'এই ছবিটা করার আগে সুহোত্রর সঙ্গে আলাপ পর্যন্ত ছিল না। আর গল্প অনুযায়ী, তখন ব্যোমকেশ আর অজিতের কিছুটা বয়স হয়েছে। দুজনে একই সংসারে থাকছে দীর্ঘদিন। মাঝে মাঝে কথা না বলেই বুঝে নেওয়া যায় এমন বোঝাপড়া। আর অজিত আর ব্যোমকেশের বোঝাপড়া, বিশ্বাস, ভরসাই তো গল্পের প্রাণ। একটু কঠিন তো ছিল অবশ্যই। তাই সুহোত্রর সঙ্গে প্রথমদিন শ্যুটিং থেকেই সেই সুরটা বেঁধে নিয়েছিলাম। আমি শুনেছিলাম সুহোত্র ভালো অভিনেতা। ওর সঙ্গে অভিনয় করে আরাম পেলাম।'
এই গল্পের একটা বড় অংশ নাট্যমঞ্চে। নাটক চলতে চলতে একেবারে ব্যোমকেশের চোখের সামনে খুন হয়। ছোটবেলা থেকে নাটকের পরিবেশে বড় হয়েছে আবীর। এই ছবি কী তাঁকে নস্ট্যালজিয়া ফিরিয়ে দিল? হাসতে হাসতে আবীর বললেন, 'ছোটবেলায় অনেক থিয়েটার দেখেছি বটে, কিন্তু আমার কাছে সেটা তেমন পছন্দের ছিল না। কারণ সন্ধেবেলা থিয়েটার দেখতে হলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তে হত বিকেলেই। ফলে আমার খেলার সময় নষ্ট হত। মনে হত, খেলা নষ্ট করে অন্ধকার হলে ৩ ঘণ্টা বসে থাকাটা কী খুব প্রয়োজন! বড় হয়ে অবশ্য মঞ্চে বহুবার অভিনয় করেছি আমি।'
এই গল্পের অন্যতম বিষয় বাণিজ্যিক থিয়েটার। আবীর বলছেন, 'এই ছবিতে খুব সুন্দরভাবে সেই সময়ের থিয়েটারে বাণিজ্যিক প্রভাব, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি, সংস্কৃতির অবক্ষয় সবকিছু সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কলকাতাকে দেখানো হয়েছে একটা টালমাটাল পরিস্থিতিতে। ব্যোমকেশের বাইরে গিয়ে এই ছবি সময়ের দলিল হয়েও থাকবে। আর এই প্রথম ব্যোমকেশের ছবি কলকাতায় শ্যুটিং হল, এর আগের প্রতিটা ব্যোমকেশই ট্যাভেলগ।'
'ব্যোমকেশ হত্যামঞ্চ'-র হাত ধরে প্রথমবার ব্যোমকেশ সিরিজে অভিনয় করলেন পাওলি। আবীর বলছেন, 'পাওলির সঙ্গে দীর্ঘদিন অভিনয় করছি। তবে ব্যোমকেশ পরিবারে ও নতুন সদস্য। ওকে নিয়ে আমি গর্বিত। যেভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ও কাজ করে যাচ্ছে যা প্রশংসার যোগ্য। এই ব্যোমকেশে এতজন বন্ধু একসঙ্গে কাজ করলাম, যেন পুর্নমিলন উৎসব।'