কলকাতা: সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে থ্রিলার (Thriller) ঘরানার ছবি 'ইকির মিকির'-এর (Ikir Mikir) পোস্টার। পরিচালকের প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের (first full length movie) ছবি। বেশ আকর্ষণীয় তার পোস্টার, রয়েছেন একাধিক চেনা মুখ। ছবির গল্প থেকে গান, সবকিছু নিয়েই এবিপি লাইভের (ABP Live) সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় অভিনেতা-পরিচালক রাতুল মুখোপাধ্যায় (Ratool Mukherjee)।
প্রশ্ন: 'ইকির মিকির' ছবির গল্পটা ঠিক কীরকম?
রাতুল মুখোপাধ্যায়: ছবিটি মূলত একটি 'মৃত্যুরহস্য'। এক বহুতল বিল্ডিংয়ের এক সিকিউরিটি গার্ড খুন হয়। এই খুনে সন্দেহের তালিকায় প্রধানত দু'জনের নাম উঠে আসে। প্রথমজন এক ভদ্রমহিলা, যাঁর বয়স তিরিশের কোঠায়। অপরজন এক ভদ্রলোক যিনি ওখানে একটি পার্সেল ডেলিভারি করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশের জেরায় এই দুই প্রধান সন্দেহভাজনের সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি ঘটনার বর্ণনা আমরা দেখতে পাই। ঘটনার তৃতীয় একটি সংস্করণ আমরা ছবির শেষে দেখতে পাই, যেটাই হল আসল সত্যটা। গল্পে মহামারী একটা বেশ বড় ভূমিকা পালন করছে। যা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে খুবই প্রাসঙ্গিক।
প্রশ্ন: ছবিতে কাদের কাদের অভিনয় করতে দেখা যাবে? পোস্টারে তো একাধিক চেনা মুখ দেখা যাচ্ছে।
রাতুল: আমার ছবিতে রনি দা (রজতাভ দত্ত), রূপাঞ্জনা মিত্র, সৌরভ দাস, দেবপ্রসাদ হালদার, অপ্রতীম চট্টোপাধ্যায়, অনিন্দিতা রায়চৌধুরি আছেন। এছাড়া তিয়াশা বলে একটি বাচ্চা মেয়ে, ওর চরিত্রটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: ছবির শ্যুটিং শেষ?
রাতুল: হ্যাঁ। আমাদের ছবির শ্যুটিং শেষ, পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজও শেষ। সামনের মাসে একাধিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে ছবিটি। একটি নির্দিষ্ট ওটিটিকে 'গ্লোবাল রাইটস' দেওয়া আছে।
প্রশ্ন: ছবির নাম 'ইকির মিকির' কেন?
রাতুল: আমরা ছোটবেলা থেকে 'ইকির মিকির চাম চিকির' খেলে এসেছি। এটা আমাদের সকলের চেনা। এই ছড়াটা এই ছবিতে একজনের অবচেতনে প্রচণ্ড রকমের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ছবিতে বিভিন্নভাবে একাধিকবার এই ছড়াটা ফিরে ফিরে আসবে। ছবির শেষে জানতে পারা যাবে যে কেন 'ইকির মিকির'।
প্রশ্ন: সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন দেবজ্যোতি মিশ্র।
রাতুল: হ্যাঁ। দেবজ্যোতি মিশ্রের সুরে ছবির টাইটেল গানটা গেয়েছেন নিকিতা গাঁধী। গানের দৃশ্যায়নটা বেশ অন্যরকম। অ্যানিমেশনের ব্যবহার আছে। এছাড়া দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত ব্যবহার করা হয়েছে। এতদিন মানুষ যেভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীত দেখে এসেছেন, তার থেকে একেবারে আলাদাভাবে ছবিতে দেখানো হয়েছে, অবশ্যই গানটাকে ছোট না করেই। খুবই প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে গানগুলো। খুব শীঘ্রই গানটি মুক্তি পাবে।
প্রশ্ন: 'ইকির মিকির' আপনার প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি। সেটা সিনেমা হলের বদলে ওটিটিতে রিলিজ করানোর সিদ্ধান্ত কেন?
রাতুল: প্রেক্ষাগৃহেই রিলিজ করাতে চেয়েছিলাম। আগের বছরই ছবিটা সিনেমা হলে রিলিজ করানোর ইচ্ছে ছিল। কিন্তু করোনার কারণে হয়নি। এখন সিনেমা হল যখন আবার খুলেছে তখন সেখানে বড় বড় ব্যানারের ছবি মুক্তি পাচ্ছে। আমার ছবি সেখানে ছোট। নানা প্রতিকূলতার কথা মাথায় রেখে ওটিটি বেছে নিয়েছি। তবে এখন ওটিটিতে ছবি এখন সকলেই দেখে। পরে অবশ্যই বড়পর্দার জন্য ছবি তৈরি করব।
প্রশ্ন: এর আগে আপনার একটি ছোট ছবি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রয়েছে।
রাতুল: হ্যাঁ। 'হইচই'-তে আছে। ছবির নাম 'পালক'। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ও রূপাঞ্জনা মিত্র অভিনয় করেছিলেন। ছবিটি ১২টা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পায়। 'কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব'-এ 'কম্পিটিশন' ক্যাটেগরির সেরা দশে ছিল ছবিটি। ওই ছবির পর ফের অভিনয় থেকে সাময়িক বিরতি নিয়ে 'ইকির মিকির' শুরু করি।
প্রশ্ন: অভিনয় না পরিচালনা, কোনটা বেশি প্রাধান্য পায়?
রাতুল: আমি এখনও মূলত একজন অভিনেতাই। আমি প্রথমে আইটি সেক্টরে কাজ করতাম। কিন্তু আমার শৈল্পিক সত্ত্বাকে জিইয়ে রাখতে সেটা ছেড়ে আমি পাঁচটা টেলিভিশন শো করি। দু'টো ছবি করি। তারপর অভিনয় থেকে বিরতি নিয়ে ছবি তৈরি। দুটো কাজেই সমান মজা পাই।
প্রশ্ন: বাংলার দর্শক যেমন থ্রিলার পছন্দ করেন তেমনই সহজে সন্তুষ্টও হন না। সেক্ষেত্রে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবিতে 'থ্রিলার' ঘরানা বেছে নেওয়াটা কি ঝুঁকিপূর্ণ নয়?
রাতুল: আমি ছবিটা নিয়ে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী। এই ১০৪ মিনিট দর্শক নিজের জায়গা ছেড়ে উঠতে পারবেন না। আমার বিশ্বাস এটা অন্য ধরনের ছবি হবে। আর সেটা সম্পূর্ণ সম্ভব হয়েছে আমার টিমের জন্য। তাঁরা এমনভাবে নিজেদের সবটা ঢেলে কাজ করেছে প্রতিকূলতার মধ্যেও, ওঁদের প্রত্যেকের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন: ছবির মুক্তি কবে?
রাতুল: ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে মুক্তি পাবে। পৃথিবী-ব্যাপী মুক্তি প্রথমে। চেষ্টা চলছে একই সময়ে যদি ভারতেও রিলিজ করানো যায়। এর মধ্যে, ট্রেলার, মিউজিক ভিডিও ইত্যাদি মুক্তি পাবে ধীরে ধীরে।
প্রশ্ন: এরপর কী কী কাজ রয়েছে আপনার হাতে?
রাতুল: অনেকদিন ধরে একটা ইন্টারেস্টিং ওয়েব সিরিজ লেখা রয়েছে, অ্যান্থোলজি। রাহুল লিখেছে (রাহুল মুখোপাধ্যায়, দেবের 'কিশমিশ' ছবির পরিচালক)। ওঁর গল্পে কাজ করতে আমি ভীষণ কমফর্টেবল। সেই অ্যান্থোলজি নিয়ে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।