কলকাতা: ২১ জানুয়ারি, প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে পরিচালক সায়ন্তন ঘোষালের (Sayantan Ghoshal) নবতম সৃষ্টি 'স্বস্তিক সংকেত' (Swastik Sanket)। ইতিমধ্যেই বেশ ভাল সাড়া মিলছে দর্শক মহল থেকে। হাজার ব্যস্ততার ফাঁকেও পরিচালক ধরা দিলেন এবিপি লাইভের (ABP Live) একান্ত সাক্ষাৎকারে। সময় বের করে জানালেন 'স্বস্তিক সংকেত' সম্পর্কিত বেশ কিছু গল্প।
বেশ কিছুদিন ধরেই কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় দেখা যাচ্ছিল এক বিশেষ পোস্টার। স্বস্তিক চিহ্ন আঁকা, আবার হঠাৎ দেখে হিটলারের শাসনের কথাও মনে হতে পারে। আসলে কীসের গল্প বলবে 'স্বস্তিক সংকেত'? 'এই ছবির গল্প শুরু হয় ১৯৪৩ সালে, যখন হিটলারের (Adolf Hitler) শাসন চলছে। হিটলারের একাধিক কুকর্মের কথা তো আমাদের সকলেরই জানা। হলোকাস্ট, গ্যাস চেম্বার, ইহুদিদের হত্যা করা, এই সমস্ত চলছে এমন একটা সময়ে ছবির শুরু। হিটলার শত্রুপক্ষকে মারার জন্য বৈজ্ঞানিকদের দিয়ে একটা ভাইরাস তৈরি করান। সেটা ভুল কাজে ব্যবহার করছিলেন। সেটা বুঝতে পারেন আবিষ্কর্তা বৈজ্ঞানিক। স্বভাবতই তাঁর সেটা পছন্দ হয় না। তিনি ওই ভাইরাসের অ্যান্টিডোট এক ছাত্রকে দিয়ে যান যে সাংকেতিক ভাষায় সেটি লুকিয়ে রাখে, লন্ডনে।'
এরপর গল্প এসে উপস্থিত হয় বর্তমান সময়ে। 'ছবির প্রধান চরিত্র রূদ্রাণী (অভিনয়ে নুসরত জাহান), সাধারণ বাঙালি মেয়ে। সে একটি বই লেখে, ক্রিপ্টোগ্রাফি নিয়ে। লন্ডনে সেই বই লঞ্চ করতে যায়। সেখানেই ওর স্বামীও থাকে। সেখানে গিয়ে ও বুঝতে পারে যে ভাইরাস ফ্ল্যাশব্যাকে দেখানো হচ্ছিল, সেটাই ফিরে এসেছে। আর এগুলো ফিরিয়ে আনছে এখনকার নিও-নাৎজি দল। তারা হিটলারের আদর্শে বিশ্বাসী। এই সময়ে দাঁড়িয়ে তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইউরোপ থেকে অ-ইউরোপীয়দের সরিয়ে দেওয়া। এই গোটা রহস্যের ঘেরাটোপে ফেঁসে যায় রূদ্রাণী। ওর আর ওর স্বামীর কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় যে কীভাবে এই ভাইরাসকে থামাবে। বা আদৌ সেটা সম্ভব কি না!'
ছবিতে একটি বিশেষ চরিত্রে দেখা যাবে রুদ্রনীল ঘোষকে। তাঁর চরিত্র সম্পর্কে পরিচালক বলেন, 'রুদ্রাণীর এই জট খোলার মধ্যেই ছবিতে একটি মিসিং লিঙ্ক রয়েছে। যে ছাত্রের কাছে ভাইরাসের অ্যান্টিডোট দেওয়া হয় সে একজন বাঙালি ছিল। সেই চরিত্রেই দেখা যাবে রুদ্রনীল ঘোষ। তাঁর ছেলে বর্তমান সময়ে বেঁচে রয়েছে, সেই চরিত্রেও রুদ্রনীল ঘোষ। তার কাছে গিয়ে কীভাবে বিভিন্ন ধাঁধা ও সংকেতের বুনন খুলে অ্যান্টিডোট উদ্ধার হবে সেটা নিয়েই গল্প। এবং এই সমস্ত ধাঁধার যে ক্লু, সেগুলোর সঙ্গে যোগ রয়েছে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর (অভিনয়ে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়)। নেতাজি ও হিটলারের সাক্ষাতের গোটা ইতিহাসটা আমাদের ছবিতে রয়েছে। এই অধ্যায়টা গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।'
এমন একটা বিষয় বেছে নেওয়ার কারণ কী? 'দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের লেখা "নরক সংকেত" বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি ছবিটি। গল্পটা পড়ে ভীষণ ভাল লেগেছিল। যদিও ছবির জন্য গল্পে বেশ কিছু যোগ-বিয়োগ করেছি আমরা। যেমন নেতাজির গোটা ব্যাপারটা গল্পে ছিল না। ওটা আমাদের সংযোজন। কিন্তু বইটা পড়ে ভীষণ সিনেম্যাটিক মনে হয়েছিল। ভিস্যুয়ালি খুব আকর্ষণীয় হবে মনে হয়েছিল। সেই সঙ্গে একটা মারণ ভাইরাস, যা এখনকার সময়ে প্রচণ্ড প্রাসঙ্গিক। সেই ব্যাপারটার সঙ্গে দর্শক খুব মিল খুঁজে পাবেন বলে মনে হয়।'
প্রেক্ষাগৃহ যখন মাত্র ৫০ শতাংশ দর্শকাসন নিয়ে খোলা হচ্ছে তখন এরকম ছবি মুক্তি কি একটু ঝুঁকিপূর্ণ নয় কি? 'আমার মতে এই ছবিটা খুবই উপভোগ্য হবে। ছবিতে কমেডি আছে, রোম্যান্স আছে, রহস্য-রোমাঞ্চ তো আছেই। পরিবারের সকলে একসঙ্গে বসে মজা করে দেখতে পারবে।' তবে এখন বহু ছবিই তো বড় পর্দার বদলে ওটিটিতে রিলিজ করানো হয়। তেমন কখনও ভেবেছিলে? 'না। আমরা ছবিটা বড়পর্দার জন্যই বানিয়েছি। ওটিটিতে হয়তো পরে আসবে। কিন্তু প্রথম মুক্তি সিনেমা হলের কথা ভেবেই তৈরি করা ছবিটি।'
ছবির এরকম প্লট, প্রেক্ষাপট, লোকেশন। সেখানে করোনাকালে শ্যুটিং কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল? 'শ্যুটিংটা সত্যিই খুব চ্যালেঞ্জের মধ্যে করেছি। তখন কোভিডের প্রথম ঢেউ কাটিয়ে সবেমাত্র কিছু আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা চালু হয়েছিল। সেই সময়ে প্রচুর বিদেশি অভিনেতাদের নিয়ে কাজ। বেশ ভয় পেয়েছিলাম প্রথমে যে কীভাবে কাজ হবে। অর্ধেক জায়গা তখন বন্ধ। কিন্তু ছবিতে তো আমি মাস্ক পরে চরিত্র হেঁটে যাচ্ছে দেখাতে পারব না। তবে ওখানে গিয়ে দেখলাম অতটা চ্যালেঞ্জিং নয়। ওখানকার লোকজনের থেকে বেশি আমরা মাস্ক পরেছিলাম। তবে আবহাওয়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। প্রচন্ড ঠান্ডা, তার মধ্যে যখন তখন বৃষ্টি। শ্যুটিংয়ের জন্য খুব খারাপ সেটা। আমাদের হাতে রিসোর্স এবং সময় দুটোই খুব কম ছিল। তখন ওই সিনগুলোতে বৃষ্টিকে ঢুকিয়েই শ্য়ুট করতে হয়েছে। আর কিছু করার ছিল না। আমার অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও ভীষণভাবে কো-অপারেট করেছে।'
এই ছবির হাত ধরেই প্রথমবার গৌরব চক্রবর্তীর (Gourab Chakraborty) সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন নুসরত জাহান (Nusrat Jahan)। ছবির গানগুলিও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে দর্শকদের মধ্যে। ছবি মুক্তির পর দর্শকদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় টিম 'স্বস্তিক সংকেত'।