ABP Exclusive: 'এটা মাস্টারের নয়, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কান্না', সৌমিত্রকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন অভিনেতা

'সেসময় পুলুদার কাছে প্রথম স্বীকার করেছিলাম 'অভিযান'-এর ওই বিশেষ দৃশ্য দেখে আমার মুগ্ধতার কথা। তবে সাহস করে জড়িয়ে ধরার কথা বলতে পারিনি।'.. স্মৃতিচারণায় পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

Continues below advertisement

কলকাতা: তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee) সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Roy) নায়ক। রুপোলি পর্দার এই পাড়ে বসে তাঁর ছবি দেখে মুগ্ধ হন এক উঠতি অভিনেতা। ছবির নাম 'অভিযান'। সেই যেখানে ওয়াহিদা রহমানের সামনে দাঁড়িয়ে এক বোতল মদ গলায় উপুড় করে দিচ্ছেন সৌমিত্র, দৃশ্যটা নাড়া দিয়ে গিয়েছিল তাঁকে। হোক পুরুষ, মনে হয়েছিল, এই অভিনেতাকে একবার জড়িয়ে ধরতে পারলে যেন জীবন সার্থক। নিজের ভিতরে থাকা সত্তাটা সেদিন যেন হেসে বলেছিল, 'সে কোথায়, আর তুমি কোথায় পরাণ!' অথচ সময়ের নিয়মে সেই তারকাই প্রাণের বন্ধু হয়ে গিয়েছিলেন। কিংবদন্তির জন্মদিনে জীবনের 'দ্বিতীয় প্রিয় মানুষের' সঙ্গে কাটানো স্মৃতি রোমন্থন করলেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Paran Bandopadhyay)। 

Continues below advertisement

'অভিযান'-এর নায়কের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ এল গৌতম ঘোষ পরিচালিত 'দেখা' ছবিতে। একসঙ্গে কাজ করলেন। তখন সবে সবে বন্ধুত্ব গড়ে উঠছে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে। স্বভাবসিদ্ধ হাসি মিশিয়ে এবিপি লাইভকে অভিনেতা বললেন, 'সেসময় পুলুদার কাছে প্রথম স্বীকার করেছিলাম 'অভিযান'-এর ওই বিশেষ দৃশ্য দেখে আমার মুগ্ধতার কথা। তবে সাহস করে জড়িয়ে ধরার কথা বলতে পারিনি। মনে হয়েছিল, উনি তো রসিক মানুষ। শুনলেই রসিকতা করে বলবেন, 'এ আর এমন কী ব্যাপার। নাও.. জড়িয়ে ধরো।' এমন হলে আমার সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হত। কাজ করলাম, কিন্তু সেই বার আর সেকথা বলা হল না।'

আরও পড়ুন: 'তুমি হৃদয়ে থেকে যাবে সৌমিত্র জ্যেঠু', কিংবদন্তির জন্মদিনে আবেগপ্রবণ ঋতুপর্ণা

এরপর ছোটপর্দার ধারাবাহিক। বীরেশ চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় 'কড়ি দিয়ে কিনলাম'-এ ফের একসঙ্গে পরাণ-সৌমিত্র। যেন সেই দিনের কথা এখনও চোখের সামনে সিনেমার মত ভেসে ওঠে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। একটু ঘোর লাগা গলায় বললেন, 'পুলুদার চরিত্রটা ওখানে ছিল একজন ধনী বৃদ্ধের। বাড়ির সবার কাজকর্ম তাঁর পছন্দ হয় না। তাঁকেও যে বাড়ির সবাই খুব একটা পছন্দ করে তা নয়। পরিবারের সঙ্গে থেকেও তাঁর জীবনে ভীষণ একাকিত্ব। আর আমার চরিত্রটা ছিল একজন মাষ্টারমশাইয়ের। তিনি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী। দলের ছেলেদের সঙ্গে তাঁর মত মেলে না। দিনের শেষে সেই মাষ্টারমশাই ও ভীষণ একা। যে বিশেষ দৃশ্যটার কথা বলছি, সেটা ছিল এইরকম.. আমি, মানে সেই মাষ্টার জানলার ধারে দাঁড়িয়ে গান গাইছে, যদি 'তোর ডাক শুনে কেউ না আসে..'। হঠাৎ সে শুনবে, অন্য একটা গলা তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে একই গান গাইছে। ভেজা চোখে পিছন ফিরে মাষ্টারমশাই দেখবেন, সেই বৃদ্ধ তার পিছনে দাঁড়িয়ে গান গাইছে। দুজনের চোখেই জল। আস্তে আস্তে দুজন দুজনের দিকে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে। দৃশ্য এখানেই শেষ। পরিচালক কাট বলে দিয়েছেন। পুলুদা আমার পিঠে হাত দিয়ে বললেন, পরাণ, কাট হয়েছে, আর কান্নার দরকার নেই। আমি ভেজা গলায় বললাম, এটা মাষ্টারের কান্না নয়, এটা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কান্না। আজ আমার স্বপ্ন সার্থক হল। পরে জানতে পেরে পুলুদা আমায় ফোন করে বলেছিলেন, বলোনি তো তোমার এই স্বপ্নের কথা? রসিকতা করে উত্তর দিয়েছিলাম, আগে কেন বলব?'

একবার থামলেন পরাণ, তারপর বললেন, 'অভিযান দেখতে দেখতে যে স্বপ্নকে অলীক বলে মনে হয়ছিল, মহাকালের নিয়মে আমার সেই স্বপ্ন সার্থক হয়ে গেল। তাও সবার সামনে.. ক্যামেরাকে সাক্ষী রেখে।'

Continues below advertisement
Sponsored Links by Taboola