কলকাতা: 'ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে আসতেন কিশোর কুমার। বাবার সঙ্গে এক কার্পেটে বসে গান গাইতেন। যখনই কলকাতায় কিশোর কুমার ও আর ডি বর্মনের শো হত, মঞ্চের পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে গান শুনতাম আমি আর বোন। ছোটবেলার যাঁর অন্ধ ভক্ত ছিলাম, বড় হয়ে তিনিই আমার ছবিতে গান গাইবেন! প্রযোজকের কাছে শুনে প্রথমটা বিশ্বাসই হয়নি!' এক নিঃশ্বাসে বলছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।


বুধবার, ৪ অগাস্ট কিংবদন্তি কিশোর কুমারের জন্মদিন। 'গুরু'-কে সম্মান জানানোর জন্য একসময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন তিনি। ব্যস্ত শ্যুটিং শিডিউলের মধ্যেও সময় বের করে কিশোর কুমারকে নিয়ে এবিপি লাইভের সঙ্গে আড্ডায় মজলেন প্রসেনজিৎ।



১৯৮৬ সালের 'অমর সঙ্গী' ছবি যেন খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল প্রসেনজিৎ। সেই ছবির 'চিরদিনই তুমি যে আমার' গানটা ছাড়া প্রসেনজিৎ হয় না, এমনটাই মনে করেন নায়ক। প্রসেনজিৎ বলছেন, '৩৫ বছর পরে এখনও চারিদিকে ভাইরাল হয়ে আছে কিশোর কুমারের 'চিরদিনই তুমি যে আমার'। বাংলার বাইরে এখনও অনেকে এই গানটিই গান। আমার সোশ্যাল মিডিয়ায় এখনকার নতুন প্রতিভারাও এই গান গাইছে। ওই গানটা আর প্রসেনজিৎতে শুরুর কাজ অমরসঙ্গী আজীবন জুড়ে থাকবে। আমি 'গুরুকে জানাই প্রণাম' নামে পর পর ৩ বছর একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। কেবলমাত্র কিশোর কুমারকে সম্মান জানানোর জন্য। ওনাকে উদযাপন করার জন্য। উনি মারা যাওয়ার ২৫ বছর পরেও কিশোর কুমারকে নিয়ে আজও একই রকম পাগলামো। উনি সবসময় আমার কাছে চিরনতুন থাকবেন।'


'কিশোর কুমার জুনিয়ার' ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রসেনজিৎ। ছবির প্রেক্ষাপট ছিল কিংবদন্তি শিল্পীর গান। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? প্রসেনজিৎ বলছেন, 'ছবির সমস্ত গান গেয়েছিলেন কুমার শানু। তবে গানগুলি তো কিশোর কুমারের। ওনার অতগুলো গানে লিপ দেওয়া আমার কাছে আশীর্বাদ। যে গানগুলো শুনে আমরা ছোট থেকে বড় হয়েছি, যে গানে কখনও অমিতাভ বচ্চন, কখনও উত্তমকুমার লিপ দিয়েছেন.. সেই গানে লিপ দেওয়াটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঠিক যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল লালনের চরিত্রে অভিনয়।'


কিশোর কুমারের গলায় প্রসেনজিতের সবচেয়ে প্রিয় গান 'জিন্দেগি এক সফর হ্যায়'। কথা বলতে গিয়ে তাঁর কথায় উঠে এল সত্যজিতের সঙ্গে কিশোর কুমারের 'চারুলতা' ছবির স্মৃতি। সেই ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার জন্য কিশোর কুমারকে বেছেছিলেন সত্যজিৎ। প্রথমটা রাজি হননি তিনি। কিন্তু তারপর পর্দায় ইতিহাস গড়েছিল 'আমি চিনি গো চিনি তোমারে'।



ছোট থেকেই কিশোর কুমারের সান্নিধ্য পেয়েছেন। ছোটবেলায় যাঁর ভক্ত ছিলেন, পরবর্তীকালে তাঁর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন প্রসেনজিৎ। সেই স্মৃতি উস্কে অভিনেতা বললেন, 'চিরদিনই তুমি যে আমার'-এর কথা সবার মনে থাকবে, কিন্তু আমার বহু ছবিতে গান গেয়েছেন কিশোরবাবু। 'অমরসঙ্গী' ছবিরও আগে উনি আমার লিপে আরও একটি গান গেয়েছিলেন, 'ধোঁয়া ধোঁয়া ধোঁয়া'। গানটা এখনও খুব জনপ্রিয়। প্রযোজক যেদিন আমায় বললেন, তোমার গান গাইছেন কিশোর কুমার, আমার অবিশ্বাস্য লেগেছিল। ভদ্রলোককে ছোটবেলা থেকে আমার বাড়িতে দেখে এসেছি। বাবার সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। এক কার্পেটে বসে হারমোনিয়াম নিয়ে গান গাইতেন দুজনে। কিন্তু আমি বড় হওয়ার পর কিশোর কুমার আমার ছবিতে গান গাইছেন এটা প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি। যেদিন রেকর্ডিং ছিল মুম্বইয়ে আমি গিয়েছিলাম। উনি আমায় চিনতে পেরেছিলেন। বাবার দীর্ঘদিনের বন্ধু, একসঙ্গে ছবিও করেছিলেন ওঁরা। আমায় অনেক আশীর্বাদ করেছিলেন। কলকাতায় কিশোর কুমার এবং আর ডি বর্মন শো করতে আসলে মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে গান শুনতাম। ওটা মিস হত না। আমি আর আমার বোন ওনাদের অন্ধ ভক্ত ছিলাম।'