কলকাতা: 'রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি'। কিন্তু কলকাতায় তিনি এলেই মাছের বিভিন্ন পদ খাওয়া চাইই চাই। শ্যুটিং ফ্লোর থেকে শুরু করে হোটেল, তাঁর মেনুতে থাকবে, 'একটুখানি ভাত আর মাছের ঝোল'। আর নলেন গুড়ের ২০টা রসগোল্লা একসঙ্গে খাওয়া নাকি 'কোনও ব্যাপারই না' তাঁর কাছে। মুম্বইবাসী এই অভিনেতা প্রায় ৩ বছর পরে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে ফিরছেন বাংলা ছবিতে। ১৩ অগাস্ট 'হইচই'-তে মুক্তি পাচ্ছে নতুন ওয়েব সিরিজ, 'রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি'। অচেনা অভিনেত্রীর সঙ্গে শ্যুটিংয়ের গল্প থেকে শুরু করে বাঙালিদের নিয়ে ছবি পরিচালনার ইচ্ছা, সবচেয়ে বিপজ্জনক শ্যুটিং-এর স্মৃতি.. রাহুল বসু-র একরাশ অভিজ্ঞতার গল্প শুনল এবিপি লাইভ


 


প্রশ্ন: সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় প্রথম বাংলা ওয়েব সিরিজে কাজ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, আজমেরি হক বাঁধনের মত সহ অভিনেতা, অভিনেত্রী। 'রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি'-তে কাজ করে কেমন অভিজ্ঞতা হল?


রাহুল বসু: ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতা। পরিচালক হিসাবে সৃজিতের যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে। অনির্বাণ খুব ভালো অভিনেতা। আমায় সৃজিত একদিন মেসেজ করেছিল, 'হাই আই অ্যাম সৃজিত'। এর আগে অনুষ্ঠানে আমাদের কয়েকবার দেখা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের কখনও কথা বলার সুযোগ হয়নি। আমি সেই মেসেজটার উত্তর দিতে, সেইদিনই আমায় চিত্রনাট্য পাঠিয়েছিল সৃজিত। যদি আমার চরিত্রটা আকর্ষণীয় লাগে, চিত্রনাট্য ভালো লাগে, তাহলে সেটা বড়পর্দা না ওটিটি সেগুলো নিয়ে আমি আর ভাবি না। চিত্রনাট্য পড়ে আমার ভীষণ ভালো লাগল। আমি আর সৃজিত একে অপরের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলাম। ব্যাস...। অনির্বাণের সঙ্গে আমার সেটের বাইরে খুব একটা আলোচনা বা গল্প করার সুযোগ হয়নি। তবে শট দেওয়ার আগে নিয়মিত রিহার্সাল দিতাম। তখনই বুঝেছিলাম ও ভীষণ বুদ্ধিদীপ্ত অভিনেতা। আর নিজের চরিত্রটা খুব ভালো করে বোঝে। তবে সৃজিত বা অনির্বাণের সঙ্গে তবু আগে থেকে আলাপ ছিল আমার। বাঁধনের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় সেটে। ঠিক শট দেওয়ার আগে। নতুন কারও সঙ্গে কাজ করাটা একটু কঠিন তো বটেই। ওর সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। মনে হয়েছিল ওর সঙ্গে বোঝাপড়া হতে সময় লাগবে। কিন্তু প্রথম শট থেকেই বাঁধন ভীষণভাবে তৈরি ছিল। ওর সমস্ত ডায়লগ মুখস্থ, সিন জানে... উল্টোদিকে আমি কখনও ডায়লগ মুখস্থ করায় বিশ্বাসী নই। আমি অভিনয়ের সময় অনুভূতি দিয়ে কথা বলি। বাঁধনকে দেখে সৃজিতকে বললাম, এবার আমার নার্ভাস ব্রেকডাউন হবে। তারপর আমি বাঁধনের হাতটাই ধরলাম। ওকে বললাম, তোমায় আমায় সাহায্য করতেই হবে। সৃজিত যখনই কাট বলত, আমরা পরের শটের জন্য রিহার্সাল করতাম।


 



 


প্রশ্ন: শুধু টলিউড বা বলিউড নয়, ৬টি ইন্ডাস্ট্রিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন। বিভিন্ন জায়গার কাজের ধরনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন কী করে?


রাহুল: সত্যি বলতে, খুব একটা পার্থক্য নেই ইন্ডাস্ট্রিগুলোর মধ্যে। প্রত্যেকেই ভীষণ গুণী, বুদ্ধিদীপ্ত আর সম্ভাবনাময়। নিজের কাজ নিয়ে সবাই ভীষণ প্রফেশনাল। তবে বাংলায় কাজ করে আমি সবচেয়ে বেশি মজা পেয়েছি। এখানকার মানুষদের কাজ নিয়ে একটা ভালোবাসা রয়েছে। সেটে সবাই জিজ্ঞাসা করে, আজ দুপুরে কী খাবেন.. বা আজ রুই মাছ হচ্ছে, একটু চেখে দেখবেন। এইগুলো কিন্তু কাজের বাইরে। কলকাতার মানুষদের সঙ্গে কাজ করছি প্রায় ২০ বছর হয়ে গেল। এখানকার মানুষ আমায় ভালোবেসেছেন। আমিও বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে বদলাতে দেখেছি। বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে শুধু সঠিক পরিচালক বাছতে হয়, যে আমায় বুঝবে.. তাহলেই কাজ করাটা সহজ হয়ে যায়।


 



 


প্রশ্ন: ২০ বছর কলকাতার সঙ্গে সম্পর্ক। প্রিয় বাঙালি খাবার কী?


রাহুল: কলকাতা এমন একটা শহর, যেখানে ১০ বছর ধরে হেঁটে ঘোরা যায়। তবু যেন কলকাতাকে চেনা শেষ হবে না। এত মানুষ, তাঁদের এতরকম রীতিনীতি, ধর্ম, সংস্কৃতি, জীবনধারণ.. কলকাতার অনেক জায়গা ঘুরেছি। শ্যুটিং-এর মধ্য়ে সময় হয় না। তবে আমি আগামী ২০ বছর ধরে কলকাতাকে আরও ভালো করে দেখতে চাই, চিনতে চাই। আর.. আমি ভীষণ মাছ ভালোবাসি। আমার বাবা বাঙালি। ভীষণ ভালো রান্না করতেন। মাছের ঝোল, মাছের ঝাল, মাছ ফ্রাই, ইলিশ, ভেটকি, পাবদা.. যে কোনও মাছ, যে কোনও পদ হলেই হল। শেফকে বলি আমায় সুক্তো না দাও, চচ্চড়ি না দাও, ডাল না দাও, কিচ্ছু না। খালি মাছের ঝোল আর একটুখানি ভাত। এছাড়া শীতকালে নলেনগুড়ের রসগোল্লা। এখনও আমি অনায়াসে একসঙ্গে ২০টা রসগোল্লা খেয়ে নিতে পারি। হ্যাঁ, আমি খেতে পারি না কারণ আমায় শরীরের জন্য অনেক নিয়মে মানতে হয়। কিন্তু ২০টা নলেনগুড়ের রসগোল্লা খাওয়া কোনও ব্যাপারই না।


 



 


প্রশ্ন: কেবল অভিনয় নয়, রাহুল পরিচালকও। টলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে ছবি পরিচালনার ইচ্ছা রয়েছে?


রাহুল: ভাবিনি, তবে আইডিয়াটা ভালো। বাংলায় এত প্রতিভা। পরম (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়), অনির্বাণ (অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য), পাওলি (পাওলি দাম), ঋতুপর্ণা (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত).. এদের সবার সঙ্গে আমি আগে কাজ করেছি। ওদের সঙ্গে আবার কাজ করতে পারলে ভীষণ ভালো লাগবে। বেশ কিছু মানুষ এখানে আছেন যাদের আমার বেশ পছন্দ। গতবার পরমের বাড়িতে গিয়ে অনেক উঠতি অভিনেতা অভিনেত্রীদের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। আপাতত আমি একটা চিত্রনাট্য লিখছি। এরপর নিশ্চয়ই বাংলাকে নিয়ে ভাবব। হয়ত 'হইচই' -কেই ফোন করব। এই প্রশ্নটার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি সত্যিই বাংলায় কাজ করার কথা ভাবব।


 


প্রশ্ন: শ্যুটিং করতে গিয়ে সবচেয়ে বিপজ্জনক অভিজ্ঞতা কী হয়েছিল?


রাহুল: 'শৌরিয়' ছবিতে আমার প্রথম শট ছিল, আমি উল্টো হয়ে বাঞ্জি জাম্প করছি। আমি আগে কখনও বাঞ্জি জাম্প করিনি। আমায় অনেক কিছু শেখানো হল। শট রেডি। আমি ৩০০ ফুট ওপর থেকে লাফ দিলাম। অর্ধেকটা গিয়ে বাঞ্জির দড়িটা হঠাৎ আটকে গেল। কেজের তলায় ক্যামেরা ছিল। বাঞ্জির দড়িটা ওখানেই জড়িয়ে ঝাঁকুনি খেয়ে আটকে গেল। ২০০ ফুট ওপর থেকে উল্টো হয়ে শূন্যে ঝুলছি আমি। ক্যামেরাটা এমন জায়গায় বসানো, কেউ দড়িটা ছাড়াতে পারছে না, টেনে তুলতেও পারছে না আমায়। শেষমেষ আমি ওই বাঞ্জির দড়িটা বেয়ে বেয়ে ওপরে উঠে আসি। সেদিন যদি ক্যামেরা ভেঙে যেত বা ঝাঁকুনিতে দড়িটা ছিড়ে যেত, তাহলে..... আমি হয়ত আজ থাকতামই না।