কলকাতা: ওটিটি থেকে পর্দা, পুলিশ অথবা সিরিয়াল কিলারের চরিত্রের অফার পেতে পেতে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন যেন। হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, তিনি বোম্বাগড়ের রাজা! 'হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী' ছবিতে অভিনয় তাঁর কাছে স্বপ্নপূরণ। নিখাদ রাজা, রানি, মন্ত্রীর গল্প শোনাতে পর্দায় আসছেন বোম্বাগড়ের রাজা! শুধুই রূপকথা নাকি তার মোড়কে লুকিয়ে রাজনৈতিক ব্যঙ্গ? বাস্তব জীবনে রাজা হলে কীভাবে রাজ্য চালাতেন অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়?


রামোজি ফিল্ম সিটিতে লম্বা শ্যুটিং, রাজা সাজা, কেমন ছিল হবুচন্দ্রের চরিত্রে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা? শাশ্বত বলছেন, 'ছোটবেলায় আমাদের ঘুম পাড়ানোর জন্য ঠাকুমা-দিদিমারা এইসব গল্পগুলো বলতেন। যে স্বপ্নটা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম অনেক রাত, এই বড় বয়সে এসে সেটা পূরণ হল। হঠাৎ দেখলাম আমি বোম্বাগড়ের রাজা। জীবনে এই অভিজ্ঞতাটা মনে থাকার মত। ওই পোশাক পরে, সৈন্য নিয়ে যখন রথে করে রাস্তা দিয়ে যেতাম, সত্যিই মনে হত আমি রাজা। আর দেবের সঙ্গে এর আগেও কাজ করেছি। ও টিম ম্যান। দেব বাঙালি আর বাংলাকে ভালোবাসে বলেই এই ছবিটার প্রযোজনায় কোনও কার্পণ্য করেনি।'


বাস্তবে যদি কোনও রাজ্যের 'রাজা' হতেন শাশ্বত? হাসতে হাসতে অভিনেতার উত্তর, 'চারিদিকে যা চলছে, আমি রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যেতাম। তখনই একটা গবুচন্দ্র মন্ত্রী এসে সব লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল। এখন তো একটাও হবুচন্দ্র রাজা খুঁজে পাওয়া যাবে না যে সরলভাবে ভাবতে পারবে। আর গবুচন্দ্র প্রত্যেক প্রজা। রাজার অবস্থা সত্যিই খুব কঠিন হয়ে যেত।'


ডিজনি, কার্টুন আর বিদেশি রূপকথার যুগে কী হারিয়ে যাচ্ছে ভারতের রূপকথা? শাশ্বত বলছেন, 'এখনকার বাচ্চারা কতজন বাংলা রূপকথা পড়ে জানি না। এর বড় কারণ হল, পড়ে শোনানোর লোক নেই। ছোট্ট পরিবারে রূপকথা বলার জন্য ঠাকুমা দিদিমাদেরও আর পাওয়া যায় না। তারা রূপকথা বলতে হ্যারি পটার বোঝে যেটা নিজের দেশেরই না। এটা খুব দুঃখজনক। আমার মনে হয়, যারা বাংলা ভাষাটাকে ভালোবাসে, তাঁদের এই ছবিটা দেখা উচিত। শিশুরা অন্তত জানবে, বাংলা রূপকথা ঠিক কেমন ছিল।'


লকডাউনের মধ্যে দীর্ঘদিন গৃহবন্দি শিশুরা। তাদের কথা ভেবেই কী পুজোয় এই উপহারের আয়োজন? শাশ্বত বলছেন, 'ছোট থেকে বড়, এই ছবিটা সবার জন্যই এক ঝলক তরতাজা হাওয়ার মত। এখন সমাজে সুস্থ বিনোদন খুঁজে পাওয়া দুস্কর। কারণ সমাজ থেকেই তো সুস্থতা উবে যাচ্ছে। চারিদিকে খুন, ধর্ষণ.. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো তো এই সমস্ত বিষয়গুলোর দিকেই ঝুঁকছে বেশি। যা যা অফার আসছে সিংহভাগই হয় পুলিশ অথবা সিরিয়াল কিলারের চরিত্রের। ভালোলাগার মত ছবি বাংলা হচ্ছেই না। আমার মনে হয় এই ছবিটা দেখলে মানুষের আয়ু বেড়ে যাবে।'