কলকাতা: পরনে সাদা পাজামা, পাঞ্জাবি। হন্তদন্ত হয়ে এসেই বললেন, 'সরি, একটু অপেক্ষা করতে হল'। নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে এক কাপ কফি আনিয়ে নিলেন কেবল। একবার চুমুক দিয়ে বললেন, 'আপনি ছবি নিয়ে কথা বলবেন তাই না? 'দুজনে' -তে আমার নামটা.. হ্যাঁ মনে পড়েছে। অমর। বলুন..' শুরু হল পুরোদস্তুর রাজনৈতিক এক নেতার রুপোলি পর্দায় ফেরার গল্প। এবিপি লাইভের সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় অভিনেতা সোহমকে যেন ছাপিয়ে গেলেন বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী।


একদিকে রাজনীতি, বিধায়কের দায়িত্ব, অন্যদিকে অভিনয়, কী করে সামলাচ্ছেন সোহম? হাসতে হাসতে অভিনেতা বললেন, 'এটা আমার নিজের কাছেও একটা বড় প্রশ্ন। যখন 'দুজনে' সিরিজটা শ্যুট করি, তখন রাজনৈতিকভাবে এতটা ব্যস্ত ছিলাম না। এখন আবার ব্যস্ততা বেড়েছে, তাই শ্যুটিংয়ের চাপ একেবারে কমিয়ে ফেলেছি। তবে দুটো একসঙ্গে আসলেও মানিয়ে নেব। মানসিকভাবে তৈরী সেটার জন্য।'


সোহম টলিউডের অন্যতম 'ফ্যামিলি ম্যান'।  এত ব্যস্ততার মধ্যে পরিবারের জন্য সময় বের করছেন কি করে? সোহম বললেন, 'পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই তো রাজনীতিতে আসা, ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। জীবনটা আগের মত থাকবে এটা ভাবা উচিত নয়। আমি এখন মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। মুখ্যমন্ত্রী আমায় বিশ্বাস করে যে জায়গাটা দিয়েছেন তার মর্যাদা তো রাখতেই হবে। সেটাই আমার প্রথম কাজ। এরপর আসে, আমি যার জন্য পরিচিতি পেয়েছি। আমার অভিনয়। মানুষ প্রথমে আমায় ভালোবেসেছিলেন অভিনয়ের জন্যই। সেটার সঙ্গে আপোস করতে পারি, কিন্তু সেটাকে ছেড়ে দিতে পারব না। বছরে আছে চারটে পাঁচটা ছবি করতাম, এখন ২টো করব। আর এরমধ্যে পরিবারের জন্যও ঠিক সময় বেরিয়ে যাবে। প্রথমে একটু চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি নিজের জন্যও সময় বের করে নিতে পারছি। তবে বাড়ির সাহায্য না পেলে কিছুই করতে পারতাম না। অভিনেতা সোহম হয়েছি পরিবারের জন্যই। আবার নতুন ভূমিকাতেও বাড়ির সবাই সাহায্য করছেন। সময় দিতে না পারলেও অভিযোগ করছেন না, মানিয়ে নিচ্ছেন। সেগুলোই আমার এগোনোর পাথেয়। '


 


আরও দেখুন:


যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলিং করে, তারা অতৃপ্ত আত্মা: সোহম


 


রূপোলি পর্দার হিট জুটি, একসঙ্গে পা রাখল ওটিটিতে। সম্প্রতি হইচই-তে মুক্তি পেয়েছে সোহম চক্রবর্তী আর শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় অভিনীত 'দুজনে' সিরিজটি। প্রথমবার ওটিটিতে কাজ শ্রাবন্তী-সোহমের। পুরনো জুটি কিন্তু প্ল্যাটফর্ম আলাদা। কেমন অভিজ্ঞতা হল? সোহম বলছেন, 'ওটিটি সম্পর্কে প্রথমে খুব একটা ধারণা ছিল না। তবে সিরিজের গোটা টিমটা খুব ভালো। অভিনেতা হিসাবে কাজ করার অনেক সুযোগ পেয়েছি। প্রথমে ওটিটিতে কাজ করা নিয়ে একটু দ্বিধায় ছিলাম। কিন্তু মণিদা, শ্রীকান্তদা আমায় সাহস দিলেন। আর গল্পটা পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছিল। রাজি হয়ে গেলাম। আর শ্রাবন্তীর সঙ্গে রুপোলি পর্দার রয়াসনটা এই গল্পেও রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে অনেক রহস্যের জট। দুজনে-তে প্রথমবার আমি দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করলাম। সেটা বেশ আকর্ষণীয় লেগেছে। একটু ভয়ও পেয়েছিলাম। দর্শকদের ভালো লাগলে সেটাই বড় পাওনা।'


দিনভর ব্যস্ততা। নির্বাচনের প্রচার থেকে শুরু করে বিধায়কের দায়িত্ব। সবকিছুই সামলাচ্ছেন সোহম। বিধায়ক না অভিনেতা? জীবনের কোন ভূমিকাটা বেশি পছন্দের সোহমের? 'আমার কাছে এই মুহূর্তে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং বিধায়কের ভূমিকাটা' বললেন সোহম। তারপর যোগ করলেন, 'অভিনয়ের জন্য মানুষ নায়ক সোহমকে ভালোবেসেছেন। কিন্তু বিধায়ক সোহমকে বাস্তবের নায়ক হয়ে উঠতে হবে। মানুষের পাশে থাকতে হবে। সিনেমায় সাধারণ মানুষ আর নায়কের মধ্যে পর্দার দূরত্ব থেকে যায়। বিধায়ক সোহমকে সমস্ত দূরত্ব সরিয়ে প্রত্যেকটা মুহূর্তে মানুষের পাশে থাকতে হবে। সেই চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতেও করব।'


 



 


রাজনীতি এবং অভিনয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় হামেশাই ট্রোলিং-এর শিকার হতে হয় এই দুই পেশার মানুষদের। আর অভিনেতা-অভিনেত্রীরা রাজনীতিতে এলে তা কার্যত দ্বিগুণ হয়ে যায়। ট্রোলিং-এর শিকার হয়েছেন শ্রাবন্তীও। সোহম বলছেন, 'যাঁরা ট্রোলিং করেন তাঁরা আসলে অতৃপ্ত আত্মা। তাঁরা খুব ভালোই জানেন, জীবনে কিছু করতে পারবেন না। সুতরাং কুরুচিপূর্ণ কথা বলে যে সাফল্য পেয়েছে তাঁকে অপমান করা যাক। তবে জনসমক্ষে এইসব বলে হিরো হওয়া যায় না। যাঁরা কুরুচিকর ট্রোলিং করছেন, তাঁদের পরিবার যদি জানতে পারে, খারাপই লাগবে। নিন্দুকদের কথায় কান দিই না। প্রত্যেকেই নিজেদের ক্ষমতায় সাফল্য অর্জন করেছেন। সেটাকে সাধুবাদ জানানো উচিত।' কাজের ফাঁকে বন্ধু শ্রাবন্তীর সঙ্গে গল্পে ট্রোলিং প্রসঙ্গ উঠেছে কখনও? সোহম বললেন, 'আমাদের কাজ নিয়ে, ছবি নিয়ে কথা হত। বেশিরভাগ সময় তো রিহার্সালেই চলে যায়। শ্রাবন্তীর সঙ্গে ব্যক্তিগত বিষয়ে কোনও আলোচনা হত না।'


 



 


এত ব্যস্ততার মধ্যেও যখন একটু সময় বের করতে পারেন, কী করতে ভালোবাসেন সোহম? চণ্ডীপুরের বিধায়ক বললেন, 'আমার পার্টি, লাউড মিউজিক ভালো লাগে না। গান শুনি আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারি। এছাড়া পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাই। ওটাই আমায় সবচেয়ে শান্তি দেয়।'