কলকাতা: উত্তমকুমার তখন খ্যাতির মধ্যগগনে। তাঁর সঙ্গে একই ছবিতে অভিনয় করতে হবে! প্রথমটায় বেশ আড়ষ্ঠ ছিলেন তিনি। কিন্তু সেটে পা রাখতেই অবাক কাণ্ড। ক্যামেরার বাইরেও উত্তমকুমার যেন তারকা নন, তাঁর নিজের দাদাই। বড় দাদার মত আগলে রেখেই গোটা ছবিতে অভিনয়টা করিয়ে নিলেন যেন। জড়তা কেটে গেল খুব অল্প সময়ে। তৈরি হল 'মৌচাক'। মহানায়কের মৃত্যুবার্ষিকীতে উত্তম-স্মৃতির ঝাঁপি খুললেন রঞ্জিত মল্লিক


চার দশক পেরিয়েও উত্তমকুমারেই বুঁদ বাঙালি। প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে প্রেমের আবেগের শেষ কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তমকুমার। কেরিয়ারের শুরুতে বেশ কয়েকটি ছবিতে মহানায়কের সাহচর্য্য পেয়েছিলেন তিনি। পর্দার আড়ালে কেমন ছিলেন কিংবদন্তি? রঞ্জিত মল্লিক বলছেন, 'মৃত্যুর এতদিন পরেও যদি উত্তমকুমার মানুষের মনে বেঁচে থাকেন, তাহলে সেটা ওঁর নিষ্ঠা আর নিজের কাজ নিয়ে খুঁতখুঁতানির জন্য। কখনও নিজের অভিনয় নিয়ে খুশি হতে দেখিনি। মনে করতেন, কোনও শট দিয়ে খুশি হওয়া মানেই সব শেষ। কাজের প্রতি কী অসম্ভব নিষ্ঠা ছিল। এত আমুদে মানুষ অথচ শ্যুটিং-এর সময় প্রায় কথাই বলতেন না। স্ক্রিপ্টে ডুবে থাকতেন। ওঁর মনে হত, কথা বললে চরিত্র থেকে বেরিয়ে আসবেন। মনসংযোগ নষ্ট হবে।'


 কলেজ জীবন থেকেই উত্তমকুমারের অন্ধ ভক্ত ছিলেন। 'মৌচাক'-এ সেই উত্তমকুমারের সঙ্গেই অভিনয় করার প্রস্তাব পেয়ে প্রথমে একটু ভয়ই পেয়েছিলেন রঞ্জিত মল্লিক। তবে শ্যুটিং শুরুর প্রথম দিন থেকেই ম্যাজিক। অভিনেতা বলছেন, 'মৌচাক থেকে দুই পৃথিবী, প্রত্যেকটা চরিত্রের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যগুলো ওঁকে সূক্ষভাবে ফুটিয়ে তুলতে দেখেছি চোখের সামনে। সবাই ওঁকে একজন প্রেমিক হিসাবে দেখেই অভ্যস্থ। কিন্তু ততটাই ভালো অভিনয় করতেন একজন ফ্যামিলিম্যান হিসাবে, দাদা হিসাবে। মৌচাক ছবিটায় আমায় যেন বড় দাদার মতই আগলে রেখেছিলেন অফ ক্যামেরাও। অভিনয়টা করিয়ে নিয়েছিলেন। সেটে সহ অভিনেতার জড়তা কাটিয়ে দেওয়ার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল ওঁর।'


উত্তমকুমার যেন নিজের হাতেই নিজেকে তৈরি করেছিলেন। রঞ্জিত মল্লিক বলছেন, 'ওঁর শুরুর দিকের ছবিগুলোর অভিনয়ের সঙ্গে পরবর্তীকালে অভিনয়ের কত ফারাক। এটা সম্ভব হয়েছিল কেবলমাত্র ওঁর নিজেকে তৈরি করার চেষ্টার জন্য। পর্দার বাইরেও একজন ভালো মানুষ ছিলেন। বহু লোকের নানারকমভাবে সাহায্য করতেন কিন্তু সেই কথা কাউকে জানতে দিতেন না কখনও।'