কলকাতা: ২০১৭ সালে মুক্তি পায় বাংলা ফিচার ছবি 'অন্দরকাহিনী'। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা সরকার। পরিচালনায় অর্ণব মিদ্যা। একাধিক চলচ্চিত্র উৎসবে যে ছবি মনোনীত হয়, দেখানো হয়, এবং এযাবৎ মোট ৩৯টি পুরস্কার ঝুলিতে ভরেছে। এবার সেই 'অন্দরকাহিনী'-এর পরিচালক অর্ণব মন দিয়েছেন ওয়েব ছবি বানানোয়। শ্যুটিং শেষ, সম্প্রতি শেষ হয়েছে গান রেকর্ডিংও। শীঘ্রই মুক্তি পাবে গানটি। তারই আগে পরিচালক অর্ণব মিদ্যা এবিপি লাইভকে দিলেন একান্ত সাক্ষাৎকার।
এবিপি লাইভ: প্রথমেই বলুন করোনা অতিমারীর আবহে কেমন আছেন?
অর্ণব মিদ্যা: আসলে সম্প্রতি একজন বন্ধুকে হারিয়েছি। ফলে এখন বেঁচে আছি এটাই বড় ব্যাপার।
এবিপি লাইভ: আপনার নতুন ওয়েব ছবি আসছে 'অ্যাওয়েটিং', কতটা উত্তেজিত?
অর্ণব মিদ্যা: আমার প্রথম কাজই ছিল একটি ফিচার ফিল্ম, 'অন্দরকাহিনী'। তারপর বেশ অনেকগুলো ফিচার ফিল্মের কথা হয়েছে, কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে সেগুলির কাজ পিছিয়েছে। হয়তো সামনে কিছু ছবির শ্যুটিং শুরুও হবে। তার মাঝেই একটা ওয়েব ফিল্ম করলাম। নাম 'অ্যাওয়েটিং'। বেশ অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা। ফিচার ছবি ও ওয়েব ছবির মধ্যে আড়ম্বর থেকে শুরু করে গোটা ছবির প্ল্যানিংয়ের বেশ তফাত রয়েছে। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে বেশ নতুন একটা অভিজ্ঞতা। এছাড়া একটা নতুন প্ল্যাটফর্মের জন্য কাজ করে বেশ এক্সাইটেড লাগছে।
এবিপি লাইভ: আপনার প্রথম ছবির ক্ষেত্রে বলা যায় প্রায় জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবটাই নিজের হাতে করেছিলেন, এবারে একটা ওয়েব প্ল্যাটফর্মের জন্য কাজ। কতটা আলাদা ছিল কাজের ধরন?
অর্ণব মিদ্যা: প্রথমত আমি মনে করি, ফিচার ছবি হোক বা ওয়েব ছবি, যে কোনও কাজই একটা টিমগেম। এবার এই টিমের মধ্যে কেউ বেশি দায়িত্ব পালন করে কেউ খানিক কম। আমার আগের ছবির ক্ষেত্রে সবকিছু আমি না করলেও, একটা বড় অংশের কাজ আমি নিজের হাতে উতরেছি। কারণ প্রথম দিকে সেই অর্থে এটা বড় বাজেটের ছবি তো ছিল না। পরে 'ক্রাউড ফান্ডিং'-এর ব্যবস্থা করা হয়।
তাছাড়া আমার কাজ গল্প বলা। ফিচার ফিল্মে গল্প বলার একটা কাঠামো থাকে, একটা সময় থাকে। সেখানে ওয়েব ছবির ফরম্যাটটা বেশ আলাদা। ওয়েব প্ল্যাটফর্মের সুবিধা-অসুবিধা দুইই আছে। এখানে অসুবিধা বা চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে প্রত্যেক মুহূর্তে দর্শককে ধরে রাখতে হচ্ছে। একইসঙ্গে গল্পের ট্রিটমেন্ট যেন কোনওভাবে নড়ে না যায় সেই দিকেও নজর রাখতে হয়।
এছাড়া একটা মিথ আছে ওয়েবে থ্রিলার ঘরানার ছবি বা সিরিজ দর্শকেরা বেশি পছন্দ করেন। সেখানে দাঁড়িয়ে আমার ছবিটা একটা সম্পর্কের টানাপোড়েনের গল্প বলে। এই অবস্থায় ওয়েবের জন্য আমার গল্পটা পুরো ধরে রাখাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে চেষ্টা করেছি। আশা করছি দর্শকদের ভাল লাগবে।
আরও পড়ুন: যীশুকে ভাইফোঁটা দিচ্ছেন কৌশিকী! হাসিতে ফেটে পড়লেন কুমার শানু, মোনালিরা
এবিপি লাইভ: আপনার শেষ ছবি 'অন্দরকাহিনী' মুক্তি পেয়েছিল ২০১৭ সালে। অজস্র চলচ্চিত্র উৎসবে মনোনীত হয়েছিল। প্রচুর পুরস্কার পেয়েছিল। সমালোচকরাও খুব প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু তারপরের ছবির কাজ ২০২১ সালে। প্রায় ৪ বছরের একটা ফাঁক কেন?
অর্ণব মিদ্যা: প্রথমত 'অন্দরকাহিনী' যথেষ্ট সময় নিয়ে করা একটি ছবি। ২০১৭ সালে গোয়া চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথম ছবিটা দেখানো হয়। তারপর প্রায় দুই থেকে আড়াই বছর বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমি ছবিটা নিয়ে ঘুরেছি। প্রথম ছবির তৈরির পর আমার উদ্দেশ্য ছিল যে আমার কাজটা এমন উচ্চতায় নিয়ে যাব যাতে মানুষ আমাকে ভরসা করে। তাঁদের যাতে এটা মনে হয় যে এই ছেলেটা ভাল কাজ করে বা করতে পারে। ছবি তৈরির সঙ্গে ডিস্ট্রিবিউশন, মার্কেটিং বা পাব্লিসিটিও তো বড় একটা অংশ। সিনেমা এমন একটা মিডিয়াম যেখানে দর্শক ট্রেলার বা পোস্টার দেখেই সিনেমা হলে আসেন। ছবি খারাপ লাগলে টাকা ফেরত পাওয়ার উপায় নেই। সেই কারণে প্রথম ছবি দিয়েই মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করার চেষ্টা করেছি। তাই সমালোচকদের কাছে পৌঁছে যাওয়া বা বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে পৌঁছে যাওয়া আমার উদ্দেশ্য ছিল। সেই কাজে আমি অনেকটা সময় দিয়েছি। প্রায় ৫১টা চলচ্চিত্র উৎসবে 'অন্দরকাহিনী' দেখানো হয়েছিল। সৌভাগ্যবশত, প্রায় ৩৯টি পুরস্কারও পেয়েছে আমার ছবি। যার মধ্যে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার হিসেবে প্রিয়ঙ্কাই পায় প্রায় ১৩টা।
তাছাড়া ছবি আমি প্যাশন থেকে তৈরি করি, এটা আমার জীবিকা নয়। তাই আমি ধৈর্য্য ধরে, সময় নিয়ে সিনেমা তৈরি করায় বিশ্বাসী। এরপর গত দেড় বছর ধরে কোভিডের কাঁটা তো ছিলই। ফলে করোনা মহামারীর কথা বাদ দিলে, আমি ইচ্ছাকৃতভাবেই প্রত্যেকটা কাজে বেশি সময় দিই।
ছবি সৌজন্য: অর্ণব মিদ্যা
এবিপি লাইভ: তাহলে 'অ্যাওয়েটিং' কোনও চলচ্চিত্র উৎসবে যাচ্ছে?
অর্ণব মিদ্যা: কর্তার ইচ্ছায় কর্ম হয়। ফলে কোনও চলচ্চিত্র উৎসবে যাবে কি না সেটা ওটিটি কর্তৃপক্ষ ঠিক করবেন কারণ এটা তাঁদের জিনিস। যদিও প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে যে কিছু ফেস্টিভ্যালে হয়তো পাঠানো হবে।
এবিপি লাইভ: ছবিটা নিশ্চয়ই সাধারণ কোনও সম্পর্কের গল্প বলবে না। একটু বিস্তারিত যদি জানান...
অর্ণব মিদ্যা: এক কথায় বলতে হবে এটি একটি প্রতীক্ষার গল্প। চারটে প্রধান চরিত্র। সুনন্দার স্বামী সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। স্বামীর অপেক্ষায় দিন কাটে সুনন্দার। এর মধ্যে একদিন হঠাৎই স্বামী ফোন করে বলেন যে তিনি বাড়ি ফিরছেন, কিন্তু বছর খানেক কেটে গেলেও তিনি ফিরে আসেন না। সুনন্দার সঙ্গে থাকে তাঁর ননদ দিয়া (অনুষা বিশ্বনাথন), যে শারীরিক প্রতিবন্ধী। ননদকে নিয়েই দিন কাটে তাঁর। এরই মাঝে সুনন্দার জীবনে আসেন তাঁর স্বামীর ছোটবেলার বন্ধু। তিনি পেশায় ডাক্তার। সুনন্দার সঙ্গে তাঁর একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ত্রিকোণ প্রেমের গল্পে সুনন্দা শেষ পর্যন্ত কাকে বেছে নেবে, এবং দিয়া অর্থাৎ ওঁর ননদের ঠিক কী ভূমিকা, এই পুরোটা নিয়েই একটা সম্পর্কের গল্প বুনেছি।
আরও পড়ুন: Nirbhaya Trailer: সমাজের লক্ষ্মী 'নির্ভয়া', মুক্তি পেল প্রিয়ঙ্কা-গৌরব-হিয়া অভিনীত নতুন ছবির ট্রেলার
এবিপি লাইভ: বারবারই আপনি বলেছেন এই ছবির গান একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শ্রোতারা কী আলাদা শুনবেন এই ছবির গানে?
অর্ণব মিদ্যা: আমি চেষ্টা করেছি একটা সুদিং, মন ভাল করা গান রাখতে। গানটি লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন সঙ্গীত জগতের বিখ্যাত কম্পোজার রণজয় ভট্টাচার্য। গানটি গেয়েছেন বিখ্যাত ইমন চক্রবর্তী। সংক্ষেপে বলতে গেলে গানটি একটা ট্রান্সিশনাল পিরিয়ডে ড্রিম সিক্যোয়েন্সের কথা মাথায় রেখে তৈরি হয়েছে। এটি একটি রোম্যান্টিক গান, যা শ্রোতাদের একাকিত্বে সঙ্গ দিতে পারে। প্ল্যানিং রয়েছে নভেম্বরের মাঝামাঝি গানটি রিলিজ করানোর।
ছবি সৌজন্য: অর্ণব মিদ্যা
এবিপি লাইভ: আপনার প্রথম ছবি, নারীকেন্দ্রিক। দ্বিতীয় ছবির প্রধান চরিত্রও একজন গৃহবধূ। এই ছবিও কি নারীকেন্দ্রিক?
অর্ণব মিদ্যা: আমাদের প্রত্যেকদিনের জীবনে অনেক এমন ইস্যু আছে যেগুলো নিয়ে আমরা খুব আন্দোলন, মোমবাতি মিছিল করি। কিন্তু নিজেদের ঘরের ভিতর যে গণ্ডগোল ঘটে সেগুলো কেউ মুখ ফুটে বলে না। আমরা সবসময়েই বাইরের ঘটনা, অন্যের জীবন, অন্য দেশের সমস্যা নিয়ে বেশি আলোচনা করি, বলে আমার মনে হয়। 'অন্দরকাহিনী' ছিল সেরকমই একটা কনসেপ্ট যেখানে চারজন মেয়ের জীবন চারটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার কথা তুলে ধরা হয়েছিল। তবে আগামী ছবিতে চাঞ্চল্যকর তেমন কিছু না থাকলেও প্রেম-বিরহের গল্প থাকছে। একেবারে নারীকেন্দ্রিক না হলেও একজন মহিলার জীবনের অপেক্ষার মাধ্যমে আর পাঁচটা মহিলার জীবনের প্রতীক্ষার কথাই উঠে আসবে। সেই সঙ্গে আমাদের সামাজিক বাধার প্রভাবও দেখা যাবে।
এবিপি লাইভ: সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা, সাহিল ফুলের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
অর্ণব মিদ্যা: সাহিল মুম্বই থেকে এসেছে। খুব ভাল কাজ করছে। ওঁর চরিত্রটিও অবাঙালি। তার সঙ্গে ওঁর কথা বলার ধরন, চেহারা সব মিলে যায়। অন্যদিকে এই গল্পে প্রচুর ইমোশনাল স্তর আছে। নিজের অভিনয়ের মধ্যে সেটা খুব ভালভাবে সায়ন্তনী ফুটিয়ে তুলেছে। ক্লাইম্যাক্সে সায়ন্তনীর অভিনয় ওঁর জীবনের বোধ হয় অন্যতম সেরা পারফর্ম্যান্স।
এবিপি লাইভ: প্রিয়ঙ্কা সরকার - অর্ণব মিদ্যা জুটি দর্শক ফের কবে পাচ্ছে?
অর্ণব মিদ্যা: কথাবার্তা, চিন্তাভাবনা চলছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে আছে। এটার জন্যও 'অ্যাওয়েটিং' আসলে।
আরও পড়ুন: Sayantani Guhathakurta: দীপাবলির সাজে নজরকাড়া সায়ন্তনী, জানালেন কেমন ছিল তাঁর ছেলেবেলার কালীপুজো
এবিপি লাইভ: 'অ্যাওয়েটিং' কবে কোথায় মুক্তি পাচ্ছে?
অর্ণব মিদ্যা: এটা একটা প্রিমিয়াম ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য তৈরি হয়েছে। এরপর জাতীয় স্তরের কিছু জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও মুক্তি পাবে ধীরে ধীরে। ডিসেম্বরে রিলিজ করার পরিকল্পনা রয়েছে তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও কিছু নেওয়া হয়নি। তবে গানটা মুক্তি পেতে পারে নভেম্বরে। একদম নতুন একটা প্ল্যাটফর্মের জন্য তৈরি এই ছবি, ওঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন কবে মুক্তি পাবে সেই ব্যাপারে।
এবিপি লাইভ: এরপর কী কাজ আসছে?
অর্ণব মিদ্যা: লকডাউনে বেশ অনেকগুলো গল্প লিখতে, স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে পেরেছি। সেগুলোর কাজ চলছে। প্রি-প্রোডাকশনের কাজও শুরু হয়েছে বেশ কিছু গল্পের। তো দেখা যাক, হয়তো খুব শীঘ্রই বেশ কয়েকটা সুখবর দিতে পারব।