কলকাতা: মুম্বই থেকে সদ্য ফিরেছেন বনগাঁর বাড়িতে। ১০ মাস পর মায়ের হাতের রান্না, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবদের শুভেচ্ছা, প্রতিযোগীতার পরেও ব্যস্ততা তুঙ্গে ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চে সাড়া ফেলে দেওয়া একমাত্র বাঙালি কন্যার। তাঁর সুরেলা কণ্ঠ মন জয় করেছে সবার। আর তিনি জিতে নিয়েছেন ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চে দ্বিতীয় স্থান। অরুণিতা কাঞ্জিলাল। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে, দর্শক, অরুণিতার গানে মুগ্ধ সকলেই। নিজের শিকড়ে ফিরে শুভেচ্ছাবার্তায় ভাসছেন অরুণিতা। কিন্তু সেই ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করে জমিয়ে আড্ডা দিলেন এবিপি লাইভের সঙ্গে।
প্রশ্ন: ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরল সেরার শিরোপা নিয়ে। পরিবার থেকে পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু, সবাই কী বলছেন?
অরুণিতা কাঞ্জিলাল: এতদিন পরে বাড়ি ফিরলাম, সবাই ভীষণ খুশি। আমি নিজেই ভাবতে পারিনি অত বড় একটা মঞ্চে গিয়ে গান গাইতে পারব। এত কিছু শিখতে পারব। পাড়ার সবাই বাড়িতে দেখা করতে আসছেন। সবাই বলছেন, আমরা ভীষণ খুশি তুমি এত বড়া একটা জায়গায় পৌঁছেছো। আমাদের আশীর্বাদ সবসময় তোমার সঙ্গে রয়েছে। এই কথাগুলো শুনতে যেমন ভালো লাগে, তেমনই মনে হয় দায়িত্ব বেড়ে গেল। এই আশীর্বাদ, ভালোবাসাটা ধরে রাখা জরুরী। আমি আমার ১১০ শতাংশ দিয়ে চেষ্টা করব আমার গান দিয়ে সবাইকে খুশি রাখার।
প্রশ্ন: বনগাঁ থেকে মুম্বইয়ের ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চ, এই যাত্রাটা কেমন ছিল?
অরুণিতা: আমি কোনও কিছু ভেবে ইন্ডিয়ান আইডলে যাইনি। মা বাবাও কখনও আমার ওপর প্রত্যাশার বোঝা চাপিয়ে দেননি। ভাবিনি ফিনালে অবধি পৌঁছব। সবার সঙ্গে গাইব, শিখব, এটাই কেবল মাথায় ছিল। সেইসময় লকডাউন চলছিল। বাবা-মা বললেন, একবার চেষ্টা করে দেখো। তারপর আমার ইন্ডিয়ান আইডলে যাওয়া। ওখানে গিয়ে এত ভালো মানুষদের সঙ্গে মিশেছি, এত কিছু শিখেছি, বন্ধু পেয়েছি। এত যত্নে আমায় রেখেছিলেন সকলে.. ভাবতে পারিনি। বাড়িতে আমার একটা পরিবার আছে, আর ইন্ডিয়ান আইডল আরেকটা পরিবার। যখন বাড়িতে জানালাম, আমি মনোনীত হয়েছি, মা-বাবা খুশি হয়েছিলেন ভীষণ। তবে ওনারা বেশি কিছু বলেন না, ভিতর ভিতর খুশি হন। আমায় কেবল বলেছিলেন, মনসংযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তবে তুমি কেবল নিজের লক্ষ্য স্থির রেখো।'
প্রশ্ন: অরুণিতার গান শেখার শুরুটা কী করে?
অরুণিতা: আমার প্রথম গুরু আমার মা। আমার মামার বাড়ির পরিবারের সবাই গানের সঙ্গে যুক্ত।
প্রশ্ন: নেটিজেনরা বলছেন, ইন্ডিয়ান আইডলের মঞ্চে সেরার শিরোপার সবচেয়ে যোগ্য দাবিদার আপনি। সেই জায়গা থেকে আপনি দ্বিতীয় স্থানে। খারাপ লেগেছিল?
অরুণিতা: একেবারেই না। আমি যেখানে পৌঁছেছি, সেটাই আমার জন্য একটা খুব বড় পাওনা। কখনও ভাবিনি ফাইনালে পৌঁছে যাব। তাছাড়া, সারা পৃথিবীর লোক আমায় ভালোবেসেছেন, আশীর্বাদ করেছেন। এটা আমার বিশাল পাওনা। সবাইকে বলতে চাই, এভাবেই ভালোবেসে আমার পাশে থাকুন। কখনও আপনাদের নিরাশ করব না। আমি ওই মঞ্চে গিয়েছিলাম শিখতে। আর যা যা শিখতে পেরেছি, সেটা অনেক বড় পাওয়া।
প্রশ্ন: ইন্ডিয়ান আইডল সবচেয়ে সেরা কোন স্মৃতি উপহার দিল?
অরুণিতা: হোটেলে একসঙ্গে থাকা থেকে শুরু করে সেটে যাওয়া, এমন কোনও মুহূর্ত নেই যেখানে আমরা গানবাজনা ছাড়া ছিলাম। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গিটার নিয়ে জ্যামিং করতাম। যখনই যার সঙ্গে কথা হত, গান নিয়েই আলোচনা হত। প্রত্যেক প্রতিযোগীর মধ্যে স্বতন্ত্রতা আছে। সবার থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমার কখনও মনে হয়নি আমি একটা প্রতিযোগীতায় গিয়েছি। আর সেটে প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই তারকারা আসতেন। সেগুলো দারুণ এক একটা অভিজ্ঞতা। প্রত্যেকটা এপিসোডই ভীষণ স্মরণীয়।
প্রশ্ন: একটা এপিসোডে কর্ণ জোহর আপনার হাতে উপহার তুলে দিয়ে বলেছিলেন, 'ধর্ম প্রযোজনা সংস্থা পরিবারে স্বাগত..'
অরুণিতা: কর্ণ স্যারের মত অত বড় একজন মানুষ আমায় বলছেন, 'ধর্ম প্রযোজনা সংস্থা পরিবারে স্বাগত..'। আমার কাছে ওই দিনটা স্বপ্নের মতই ছিল.. না না, স্বপ্নই ছিল। (হাসি)
প্রশ্ন: সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ অরুদীপ। অর্থাৎ, অরুণিতা আর পবনদীপ। এই ট্যাগটা তোমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
অরুণিতা: আমরা ২ জন প্রচুর ডুয়েট গেয়েছি আইডলে। মানুষ সেটাকে ভালোবেসেছেন। মানুষের ভালো লেগেছে তাই তাঁরা এটা বলেন। আমি এগুলো নিয়ে খুব একটা ভাবি না।
প্রশ্ন: তোমার আর পবনদীপের সম্পর্ক নিয়ে চারিদিকে গুঞ্জন। পবনদীপ বিজেতা হওয়ায় কেমন লেগেছে?
অরুণিতা: আমরা যারা সেরা ১৫ জন ছিলাম, তাদের সবার মধ্যেই ভীষণ ভালো বন্ধুত্ব। আমি যেখানে থাকি, বনগাঁতে, এখানে আমার খুব কম বন্ধু আছে। ইন্ডিয়ান আইডলে গিয়ে এত বন্ধু পেয়ে যাওয়া.. প্রত্যেকেই এতটা পাশে থেকেছে.. কোনও একজনকে আমি প্রিয় বন্ধু বলতেই পারব না। আমি কেন, কেউই বলতে পারবে না। কখনও মনে হয়নি, আমরা একে অপরের প্রতিযোগী। সবাই গানটাকে ভালোবেসেই কাজ করতাম। পবনদীপের সঙ্গেই আমি সবচেয়ে বেশি ডুয়েট গেয়েছি। আর সেরা ৬ জন যারা ছিল, প্রত্য়েকে যোগ্য প্রতিযোগী। পবনদীপ জয়ী হয়েছে তাতে আমরা সবাই ভীষণ খুশি। তবে, অন্য কেউ জিতলেও হলেও কিন্তু খুশিই হতাম।
প্রশ্ন: অরুণিতার গানে মুগ্ধ আট থেকে আশি। প্রেম প্রস্তাব আসছে?
অরুণিতা: (হাসি) প্রচুর আসে। ইমেলে অনেক লোকজন পাঠায়। অনেকে তো সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দেয়। বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর দিয়ে লেখে, আমার বাড়ি চলে এসো। তোমায় বিয়ে করব। খুব মজা লাগে এগুলো।