কলকাতা: ছোটবেলার পুজো কেটেছে বীরভূমে। রামপুরহাট সেসময় মফঃস্বল। কলকাতা থেকে শিল্পী এসে প্রতিমা তৈরি করতেন পুজোর। রেল কলোনির পুজোর কর্তা ছিলেন বাবাই। সারা বছর তিনি অপেক্ষা করতেন, কখন পুজো আসবে। যাত্রাপালা, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, সব মিলিয়ে জমজমাট ছিল ছোটবেলার পুজো। সময় বদলেছে। কলকাতা শহরও তাঁঁকে উপহার দিয়েছে পুজোর অম্লমধুর স্মৃতি। নিম্নচাপ কেটেছে। আকাশে ফিরেছে শরতের চেনা মেঘ। বিকেলের পড়ন্ত রোদ গায়ে মেখে এবিপি লাইভকে ছোটবেলার পুজোর গল্প শোনালেন সঙ্গীতশিল্পী সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়।


পুজোর সময় মুক্তি পাচ্ছে তাঁর নতুন অ্যালবাম 'গান শোনার গান'। শিল্পীর পরিকল্পনা, তিনি কোনও চিত্রায়ণ করবেন না। কেবল গানের কথা থাকবে, আর তাতে ভর করেই নিজের মত চরিত্র কল্পনা করে নেবেন শ্রোতারা।


ছোটবেলার পুজোর আমেজটা একেবারে অন্যরকম ছিল। সুরজিৎ বলছেন, 'টিনের চালা বাঁধা, প্রতিমার মাটি আনা থেকে শুরু করে চক্ষুদান, মণ্ডপ, সবটাই গড়ে উঠত চোখের সামনে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম পুজোর দিনগুলির জন্য। রেল কলোনিতে কলকাতা থেকে কারিগর এনে প্রতিমা তৈরি করা হত। যখন সেই ঠাকুরের চোখ আঁকা হত, তখন কাউকে ঠাকুর দেখতে দেওয়া হয় না। আমাদের বাচ্চাদের একেবারেই অনুমতি ছিল না। দরজা বন্ধ করে চক্ষুদান করতেন শিল্পী। আর আমরা শুয়ে পড়ে দরজার তলা দিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম চোখ আঁকা হল কি না। প্রত্যেকবার শিল্পী বুঝতে পেরে ভিতর থেকে বকুনি দিতেন। ব্যাস, সবাই ছুট্টে পালাতাম।


পুজো মানেই প্রেম। বড় হয়ে পুজো কেটেছে কলকাতায়। কোনও বিশেষ ঘটনা মনে পড়ে? হাসতে হাসতে সুরজিৎ বলছেন, 'একটা ঘটনা এখনও দগদগে ঘায়ের মত হয়ে আছে। আমাদের ৩ বন্ধুর সঙ্গে ঠিক পুজোর আগে তিনটি মেয়ের আলাপ হয়েছিল। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল, ভবানীপুরের বিশেষ একটি পুজোয় তারা আসবে, আর আমরাও যাব। সারা রাত ঘুরব, খাওয়াদাওয়া করব। সেই কথা মতো ষষ্ঠীর দিন সেজেগুজে আমরা অপেক্ষা করছি। ৫টা বাজল, ৬টা বাজল.. রাত ১০টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে রইলাম। 'না রে আসবে.. না রে আসবে না.. ওই তো আসছে মনে হচ্ছে'.. শেষ অবধি কেউ এল না। তারপর অবশ্য তাদের মধ্যে কারও সঙ্গেই আর দেখা হয়নি কোনওদিন। সেদিন বুঝেছিলাম কত বড় বোকা বনেছি।'