কলকাতা: সম্প্রতি 'হইচই'-এ (Hoichoi) মুক্তি পেয়েছে ঋত্বিক চক্রবর্তী (Ritwik Chakraborty) অভিনীত ওয়েব সিরিজ 'গোরা' (Gora)। অন্যদিকে আজই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে নুসরত (Nusrat), গৌরব চক্রবর্তী (Gourab Chakraborty), রুদ্রনীল ঘোষ (Rudranil Ghosh), শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় (Saswata Chatterjee) অভিনীত ছবি 'স্বস্তিক সংকেত' (Swastik Sanket)। সবমিলিয়ে বেশ ব্যস্তই পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল (Sayantan Ghoshal)। তবুও এবিপি লাইভের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলে শ্যুটিংয়ের ফাঁকে সময় বের করলেন। একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এল তাঁর কাজ সম্পর্কে নানা কথা। 


ভুলো মনের গোয়েন্দা 'গোরা' যেমন দর্শকদের খুব পছন্দ হয়েছে, তেমনই প্রশংসা পেয়েছে সমালোচকদেরও। কেমন অনুভূতি? এতটা সাফল্য কি আশা করেছিলেন পরিচালক? 'একটা কাজ সাধারণ মানুষের কাছে  পৌঁছলে, তাঁদের ভাল লাগলে, তখন একটা অদ্ভুত আনন্দ হয়। যে কোনও ছবি বা ওয়েব সিরিজ শ্যুটিং করতে করতে তো বোঝা যায় যে কীরকম দাঁড়াতে পারে জিনিসটা। "গোরা" তৈরির সময়েই এরকম একটা ধারণা হয়েছিল, আমরা আলোচনাও করতাম যে মনে হচ্ছে  ভালই হবে ব্যাপারটা। সকলের জন্য মনোরঞ্জক একটা জিনিস তৈরি করা উদ্দেশ্য ছিল। সেটায় আমার মনে হচ্ছে একটা সাফল্য পেয়েছি। অনেক দর্শকের কথা থেকেই বুঝেছি যে গোরা চরিত্রটা সকলের মনে খুব ধরেছে।' 


তিনি আরও বলেন, 'একটা জিনিস হচ্ছে গোয়েন্দা সবসময়েই বাংলার দর্শক পছন্দ করেন। তবে এটাও ঠিক এই গোয়েন্দা অর্থাৎ গোরা তো বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসেনি। সেই কারণে গোরার অলরেডি একটা ভক্তকূল তৈরি হয়ে আছে এমন ব্যাপার ছিল না। সাহিত্যের পাতা থেকে নিয়ে গোয়েন্দাদের পর্দায় ফুটিয়ে তুললে একটা অংশের দর্শক এমন থাকেনই যাঁরা, ভাল হোক বা খারাপ, দেখেনই। ফলে সেইটা "গোরা" তৈরির ক্ষেত্রে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে এটাও জানতাম "গোরা"য় ঋত্বিক দা (ঋত্বিক চক্রবর্তী) আছেন, ওঁর একটা আলাদা ফ্যানবেস আছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, এটা তাঁর প্রথম ওয়েব সিরিজ। তো সেই একটা আশ্বাসও ছিল। তাই আশা করেছিলাম যে গোরাকে দর্শক ভালবাসবেন। তবে হ্যাঁ, এই সাফল্য খানিকটা আশার ঊর্ধ্বেও চলে গেছে বলা যায়।'


কিন্তু গোয়েন্দা মানেই তো মগজে শান দেওয়া ব্যক্তির কথাই মাথায় আসে। "গোরা"র এমন চরিত্র, কী করে ভাবলে? 'চরিত্রটি সৃষ্টি করেছিলেন সাহানা দত্ত। তবে আমি কাজটার সঙ্গে একদম প্রথম থেকেই জড়িয়ে ছিলাম। তখনও স্ক্রিপ্ট লেখা হয়নি, গল্প লেখা হয়নি। আমরা প্রথম থেকেই ঋত্বিক দা-কে ভেবেই এগিয়েছি। আমার ধারণা এটা সকলেই বুঝতেও পারছেন যে এই চরিত্রটি ওঁর জন্যই তৈরি। আমরা প্রথম থেকেই আলোচনা করেছিলাম, যে দর্শক গোয়েন্দা যেভাবে দেখে অভ্যস্ত, মানে হাতে সিগারেট, গম্ভীরভাবে কথা বলছে, প্রচণ্ড ধূর্ত, সেই ইমেজটা পুরো ঘুরিয়ে দিতে হবে। মানে বলা যেতে পারে গোয়েন্দারা যা করেন, এই চরিত্রটি ঠিক তার উল্টোটা করবে। তবে সিরিজটি ভাল করে দেখলে বোঝা যাবে, চরিত্রটি কিছু স্তর আছে। গোরা সেই সমস্ত জিনিসই মনে রাখে না যে খুঁটিনাটিগুলোর ওঁর প্রয়োজন নেই। দরকারি জিনিস ওঁর ঠিকই মনে থাকে। মানে যেমন নাম মনে রেখে কী হবে, কিন্তু বুদ্ধি দিয়ে কেস সে সমাধান করতে পারে।'


আরও পড়ুন: Gora Exclusive: বদমেজাজি, খিটখিটে গোরাকে দর্শকদের ভালোবাসার যোগ্য করে তোলা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ: ঋত্বিক


একইসঙ্গে একের পর এক ওয়েব সিরিজ, সিনেমার কাজ করছেন পরিচালক। তবে আপাতত ফোকাসে কোনটা? 'আমার কাছে কোনও বিভেদ নেই। দুটোই সমান প্রাধান্য দিয়ে চলছে। যেভাবে মনযোগ দিয়ে ওয়েব সিরিজ করছি, সেভাবেই করছি সিনেমা। প্রথম দিকে এই ধারণাটা ছিল যে ওয়েব সিরিজ আলাদা রকমের মাধ্যম, সেখানে আলাদাভাবে কাজ করতে হয়। টেকনিক্যাল জায়গা থেকে খানিক আলাদাভাবে শ্যুটিং করা হত। মোবাইল ফোনের কথা ভেবে ক্লোজ শট বেশি নেওয়া, ওয়াইডে বেশি যাওয়া যাবে না। তবে সেই ধারণাগুলো এখন ভেঙে গেছে। স্মার্ট টিভি আসার পর থেকে মানুষ জায়ান্ট স্ক্রিনেও ওয়েব সিরিজ দেখেন। তাই এখন কোনও পার্থক্য নেই। এখন ছবির কাছাকাছি বাজেটও পাওয়া যাচ্ছে ওয়েব সিরিজের জন্য। ২০১৭ সালে ব্যোমকেশ যখন করেছি তখনের মানসিকতার সঙ্গে এখন অনেক ফারাক হয়েছে। মাধ্যমটা ক্রমশ পরিণত হচ্ছে। ফলে আমার কাছে এখন দুটো কাজই সমান প্রাধান্যের।'