কলকাতা: বংশী চন্দ্রগুপ্ত (Bansi Chandragupta) 'পথের পাঁচালী' (Pather Panchali) ছবির আর্ট ডিরেক্টর (Art Director)। অনীক দত্ত (Anik Dutta) পরিচালিত 'অপরাজিত' (Aparajito) ছবির চন্দ্রগুপ্ত কিচলুর চরিত্র তৈরি তাঁরই আদলে। আর সেই চরিত্রে নিখুঁত অভিনয় করে প্রশংসিত শোয়েব কবীর (Shoaib Kabeer)। বাংলা ছবি এই প্রথম। এর আগে একাধিক হিন্দি সিরিজ ও সিনেমায় কাজ করেছেন। কেমন ছিল এই পর্যন্ত তাঁর অভিজ্ঞতা? 'অপরাজিত'র হল ভিজিটের মাঝেই ফোনে আড্ডা দিলেন এবিপি লাইভের সঙ্গে। 


প্রশ্ন: প্রথম বাংলা ছবি 'অপরাজিত'। অনীক দত্তের হাত ধরে পথচলা শুরু বাংলা চলচ্চিত্র জগতে। কীভাবে অফারটা পেলেন?


শোয়েব কবীর: আমার বন্ধু ঋত্বিক পুরকাইত, এই ছবিতে সে দেবাশিষ অর্থাৎ অপরাজিত রায়ের সহকারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ও প্রথম আমাকে বলে যে অনীক দত্ত একটা নতুন ছবি করছেন। আমি সেই সময়ে হিন্দিতে একটা ওয়েব সিরিজের কাজ সদ্য শেষ করেছি, কাজ খুঁজছি। তো ঋত্বিকের কথা শুনে আমি অনীক দাকে মেসেজ করি। আমি আশা করিনি যে কোনও উত্তর পাব। কিন্তু অনীক দা নতুনদের নিয়ে খুবই সিরিয়াস। তিনি রিপ্লাই করেন, স্ক্রিপ্ট পাঠান। এরপর অডিশন দিই। তারপর প্রায় এক দেড় মাস পর হঠাৎ ফোন পাই যে আমি সিলেক্টেড। এত বড় প্রজেক্টের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি আনন্দিত।


প্রশ্ন: বাংলা ছবিতে প্রথম কাজ। এত বড় পরিচালক, এত বড় প্রজেক্ট। এই ছবির মাধ্যমে বাংলা দর্শক আপনাকে চিনতে পারছেন বেশি। প্রথমে কি ভয় লাগছিল?


শোয়েব: দেখুন এটা তো আমার কাজ। মুম্বইয়ে আমি প্রথম কাজ শুরু করি ২০১৯ সালে। '২৬/১১'-এ আমি আজমল কাসভের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এরপর একে একে বেশ কিছু ন্যাশনাল সিরিজে কাজ করেছি। ফলে আমি জানতাম 'অপরাজিত' বড় প্রজেক্ট, কিন্তু ভয় করেনি কখনও। আমি জানতাম আমরা দক্ষ মানুষের হাতে, দক্ষ টেকনিশিয়নদের হাতে আছি। ফলে সেই চাপও ছিল না। 


কিন্তু ছবিটিতে এমন এমন সব চরিত্রদের পুনর্নিমাণ করা হয়েছে যে সেখানে সামান্য ভুল হলেও বড় সমস্যা হয়ে যেত। সেই চিন্তাটা ছিল। মানে আমরা এমন মানুষদের জুতোয় পা গলাতে গিয়েছি যেখানে একেবারে ফিট করা কোনওদিন সম্ভব না। ফলে আমাদের সেই একটা দায়িত্ব ছিল। যে চরিত্রগুলো যেন মানুষের মনে ছাপ ফেলতে পারে।


প্রশ্ন: অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন আজমল কাসভের মতো একটা চরিত্র দিয়ে। কীভাবে তৈরি করেছিলেন নিজেকে?


শোয়েব: আসলে কী বলুন তো, আমি খুব ইনস্টিঙ্কট (Instinct) বা সহজাত প্রবৃত্তি যেটাকে বলে, সেটা খুব ফলো করি। একটা প্রাথমিক প্রস্তুতি তো নিশ্চয়ই নিই। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে একটা খুব ভাল জিনিস হয়েছে যে আজমল কাসভের রেফারেন্স বিশেষ নেই। আমরা কিছু মাত্র তথ্য জানি যে একটা ছেলে এসেছিল, বন্দুক চালিয়েছে, সন্ত্রাস তৈরি করে চলে গেছে। তাতে সুবিধা যেটা যে চরিত্রের গঠনটা সম্পূর্ণ নিজের মতো করা যায়। মানে যদি আমি এটা দর্শককে বোঝাতে চাই ধরুন, আজমল কাসভ ল্যাংচা খেতে ভালবাসতেন তাহলে সেভাবেই আমাকে অভিনয়টা করতে হবে যে দর্শক বিশ্বাস করেন। 


একই সুবিধা আমার হয়েছিল বংশী চন্দ্রগুপ্তের ক্ষেত্রে। ভারতের প্রথম আর্ট ডিরেক্টর তিনি। কিন্তু সত্যজিৎ রায় বা বিজয়া রায়ের সম্পর্কে যে পরিমাণে তথ্য আমরা পাই তত কিন্তু বংশী চন্দ্রগুপ্ত সম্পর্কে জানা যায় না। ফলে আমি চন্দ্রগুপ্ত কিচলু চরিত্রটি করার জন্য একটা রেফারেন্স পয়েন্ট খোঁজার চেষ্টা করলাম। ওই সময়ের মানুষের ম্যানারিজম আত্মস্থ করার চেষ্টা করলাম। দেখবেন আমার চরিত্রটি হিন্দিতে বেশি কথা বলে, পকেটে হাত দিয়ে পেট ফুলিয়ে বসে, পেতে চুল আঁচড়ায় ঠিক সত্তর আশির মানুষদের মতো। তখন আমি 'গুরু' ছবির অভিষেক বচ্চনকে রেফারেন্সে রাখি। 


এভাবেই রেফারেন্স টেনে নিজের মতো করে তৈরি করার চেষ্টা করি চরিত্রগুলোকে। 


প্রশ্ন: অভিনয়ে আসা কীভাবে?


শোয়েব: আমি কলেজে নাটক লিখতাম। তো সেই সময়ে আমার যিনি বান্ধবী ছিলেন তিনি অনুপম খেরের কাছে আমার লেখা একটা নাটক পাঠান। তখন ওরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। নাটকটা স্ক্রিপ্টে কনভার্ট করার কথা জানায়। এরপর সেই স্ক্রিপ্টে খানিক খামতি লাগে ওঁদের। তাই আমাকে তিন মাস ওঁদের সঙ্গে ওঁদের ইনস্টিটিউশনে কাজ করতে ডাকা হয়। ওই তিন মাসে বুঝে যাই যে আমি খুবই খারাপ লিখি। তখন মুম্বইয়ে কাস্টিং শুরু করি। আমি জানতাম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই কিছু একটা করতে হবে। এরপর হঠাৎই একটা সিরিজের অডিশন চলাকালীন ডিরেক্টরই বলেন যে তুমি অডিশনটা দাও। সেটায় সিলেক্ট হই। তারপর থেকে চলছে একটার পর একটা। 


প্রশ্ন: এখন তো একের পর এক কাজ? 


শোয়েব: হ্যাঁ। 'হাফ ম্যারেজ' বলে একটা সিরিজ দিয়ে শুরু। তারপর '২৬/১১'-এ আজমল কাসভ। এরপর 'ব্ল্যাক উইডোজ'। এরপর এই বছরে আমার পাঁচটা রিলিজ আছে। একটা 'অপরাজিত' মুক্তি পেয়ে গেছে। এরপর অর্জুন দত্তের অ্যান্থলজিতে 'বিরিয়ানি'-তে ভিলেনের অভিনয় করছি। এরপর জি স্টুডিওজে সুনীল শেট্টি ও বিবেক ওবেরয়ের সঙ্গে 'ধারাভি ব্যাঙ্ক'-এ কাজ করেছি। এছাড়া সৌরভ চক্রবর্তীর পরিচালনায় 'সাড়ে সাঁয়ত্রিশ' বলে একটা সিরিজ করেছি। দেবালয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে অ্যামাজন প্রাইমের একটি রিলিজও আছে। 


আরও পড়ুন: IMDb Rating: তালিকার শীর্ষে 'অপরাজিত'! পিছনে ফেলল জনপ্রিয় 'কেজিএফ: চ্যাপ্টার ২'-কেও


প্রশ্ন: তার মানে আপাতত খুশি বেশ?


শোয়েব: (জোরে হাসতে হাসতে) কেউই কি খুশি? এখন বলিউডে একটা বড় কাজের কথা চলছে। সেটা ক্র্যাক করতে পারলে তখন মনে হবে আরও বেশি কিছু চাই। জীবনে অসন্তোষ প্রচুর তবে হ্যাঁ এটাও ঠিক আপাতত কাজ নিয়ে বেশ ব্যস্ত আছি।