কলকাতা: কোনও দলের মুখপাত্র হিসেবে নয়, এবিপি আনন্দর অনুষ্ঠানে এসে একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে নিজের মতামত রেখেছিলেন অভিনেত্রী। কিন্তু তারপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক কদর্য মন্তব্য, খুন এমনকী ধর্ষণের হুমকি! এর আগেও একাধিকবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছেন, কিন্তু এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এই প্রথম, এবিপি আনন্দকে জানালেন দেবলীনা দত্ত ও তথাগত মুখোপাধ্যায়।


সম্প্রতি এবিপি আনন্দর 'স্বর-গরম' অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন দেবলীনা দত্ত। সেখানে আলোচনার শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে দেবলীনা বলেন, 'আমি নিজে নিরামিশাষী কিন্তু গরু ও পাঁঠা ভালোই রান্না করতে পারি।' দেবলীনার এই মন্তব্য থেকেই বিতর্কের ঝড় ওঠে। কেবল বিতর্ক নয়, কমেন্ট বক্স ভরে যায় অকথ্য, আপত্তিকর মন্তব্যে। এমনকী খুন ও ধর্ষণের হুমকিও দেওয়া হয় অভিনেত্রীকে।  এবিপি আনন্দকে মোবাইল ফোনে দুঃসহ সেই অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন দেবলীনা ও তথাগত।



সোমবার সন্ধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় গোটা ঘটনার বিবরণ দিয়ে একটি পোস্ট করেন তথাগত। বিবৃতির সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সব মন্তব্যের স্ক্রিনশটও পোস্ট করেন তথাগত। ভয় হচ্ছে? 'না, তার থেকে অনেক অনেক বেশি রাগ ... ' মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে বলছিলেন তথাগত। দেবলীনার স্বামী হিসাবে এই ঘটনা কতটা বিব্রত করেছে তাঁকে? উত্তরে অভিনেতা বললেন, 'প্রথমেই আমার মনে হয়েছে, যারা এরকম মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় করতে পারেন তাঁরা এই ধরনের চিন্তাই মনের মধ্যে লালন করেন। দেবলীনা কেবল একটা মুখ। সুযোগ পেলে তাঁরা তো তাঁদের পাড়ার মেয়েটিকেও ধর্ষণ করতে পারেন।' এখানেই থামলেন না তথাগত। বললেন, 'খুব লক্ষ্যণীয়ভাবে, যাঁরা এইসব মন্তব্য করছে বেশিরভাগের প্রোফাইলে রয়েছে রাম, সীতা, শিব বা কৃষ্ণের ছবি। সেলিব্রিটি শেমিং-এর প্রবণতা রয়েছে, কিন্তু এই ঘটনা তার থেকেও অনেক কদর্য। একটা বিশেষ দলের লোকই এই ধরনের মন্তব্য করছে। আর সবচেয়ে ভয়ের, এদের অনেকেই বাংলার মানুষ নয়, কেউ দিল্লি, কেউ লখনউ, কেউ বা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। এরপর তো সাধারণ মানুষ ও  সংবাদমাধ্যমের বাকস্বাধীনতাও প্রশ্নের মুখে পড়বে।' আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন? 'আমরা সাইবার সেলে আগামীকালই অভিযোগ দায়ের করব' বললেন তথাগত।



একটা মন্তব্য নিয়ে এত তোলপাড়, কিন্তু নিজের বক্তব্য স্পষ্ট করে বলতে গলা কাঁপল না দেবলীনার। এই প্রতিক্রিয়া কি অপ্রত্যাশিত? প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন দেবলীনা। বললেন, 'যাঁরা এই ধরনের মন্তব্য করছেন, তাঁদের অভিযোগ, আমার কথায় হিন্দুত্ববাদে আঘাত লেগেছে। সেটাই তাঁদের আপত্তির কারণ। তাহলে হিন্দুধর্মের কোন ধর্মগ্রন্থে লেখা রয়েছে যে কোনও মহিলার ওপর রেগে গেলে তার শাস্তি গণধর্ষণ? শুধু তাই নয়, তাঁরা রীতিমতো বারংবার লিখছেন, এখনও গণধর্ষণ হল না কেন! কেউ যদি এইসব মানুষদের প্রোফাইলে যান, তাঁদের ধারণা হবে হিন্দুত্ববাদে শাস্তি হল গণধর্ষণ, মাথা কেটে রাস্তায় রেখে দেওয়া বা গণপিটুনি। এরা কি হিন্দুধর্মকে মাটিতে মেশাচ্ছেন না?' দেবলীনা আরও বলেন, একজন বিজেপি কর্মী তাঁর  পোস্টে লিখেছেন, টাকার বিনিময়ে আমরা বাঁদর নাচ করি। তাহলে স্মৃতি ইরানির পেশা ঠিক কী? বাবুল সুপ্রিয় একবার প্রকাশ্যে বলেছিলেন তিনি গো-মাংস খেয়েছেন আবার ঈদও উদযাপন করেছেন। সেই বিষয়ে কোনও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে বাবুলদার এই ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবকে আমি সমর্থন করি। আমার বাড়িতে অনেক মুসলিম বন্ধু এসে আমার হাতে রান্না পর্ক খেয়েছেন।' শেষ করার আগে দেবলীনা বললেন, হিন্দুধর্মের নতুন অর্থ বের করলেন এই সমস্ত মানুষেরা। কোনও কারণে তাঁদের যদি কারও ওপর রাগ হয় তাহলে গণধর্ষণ করতেও তাঁরা পিছপা হবেন না।"

এর আগে এনআরএস-এ কুকুর হত্যাকাণ্ডে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন দেবলীনা-তথাগত। সেই সময় পুলিশের লাঠিতে আহত হয়েছিলেন দেবলীনা। 'সেই অভিজ্ঞতাও নিন্দনীয় ছিল, কিন্তু এই সমস্ত কুরুচিকর মন্তব্যের সামনে সেই ঘটনা ফিকে হয়ে গিয়েছে' দেবলীনার গলায় শ্লেষ। ফোন করতে করতেই পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা হল দেবলীনার। ওই পিঠের কথা শোনা গেল না। দেবলীনাকে পরিচিতের উদ্দেশে বলতে শোনা গেল, 'হ্যাঁরে.. ওটা নিয়েই কথা বলছি। আরে না না.. আমার কিচ্ছু হবে না..'