তোর্ষা ভট্টাচার্য্য, কলকাতা: সম্প্রতি তাঁর কেরিয়ার প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন সেই ১৮ বছর আগে। প্রথম। ডায়েরির পাতা উল্টোতে উল্টোতে কয়েকদিন আগেই, চোখ আটকে গিয়েছিল সেই দিনটায়। সোশ্য়াল মিডিয়ায় শেয়ার করে নিয়ে, স্মৃতিচারণ করেছিলেন বটে.. তবে সে মাত্র কয়েকটা লাইন। আর আড়ালেও রয়ে গিয়েছিল কত কথা, স্মৃতি, স্বপ্নপূরণের গল্প। ফেব্রুয়ারিরই এক সন্ধেয়, এবিপি লাইভের (ABP Live) কাছে ফেলে আসার ১৮ বছরের ভাললাগা, খারাপ লাগা, স্বপ্নপূরণ, প্রথম উপার্জনের গল্প শোনালেন রুক্মিণী মৈত্র (Rukmini Maitra)। 


ছোট থেকেই রোজ ডায়েরি লেখেন রুক্মিণী। সেই অভ্যাসেই মনে পড়েছিল ১৮ বছর আগে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর দিনটা। রুক্মিণী বলছেন, 'বাবার থেকে আমি ডায়েরি লেখার অভ্যাসটা পেয়েছি। ছোট থেকে শুরু করে এখনও আমার প্রায় প্রতিটা কাজ, ইচ্ছা, স্বপ্ন, ভাললাগা সমস্ত কিছু লিখে রাখি ডায়েরিতে। সেদিন ডায়েরিটা উল্টোতে উল্টোতে চোখে পড়ল দিনটা। তখন বয়স মাত্র ১২। সেই প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। এখনও মনে আছে, প্রথম উপার্জন ছিল হাজার পাঁচেক টাকা। সেই চেকটা গিয়ে ঠাকুরের সামনে রেখেছিলাম। এই অভ্যাস আমার এখনও রয়েছে। মহরতের সময় পাওয়া শগুনের টাকা, যে কোনও চেক... সমস্ত আমি পাওয়ার পরে আগে ঠাকুরের কাছে রাখি। এমনকি চিত্রনাট্যও পাওয়ার পরে ঠাকুরের সামনে রাখি। এখনও এই অভ্যাসটা বজায় রেখেছি। সরস্বতী পুজোর সময় এখনও ঠাকুরের কাছে বই দিই আমি।'


যখন প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন তিনি স্কুলে পড়ছেন। হঠাৎ এমন পরিচিত হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয়েছিল? একটু হেসে রুক্মিণী উত্তর দিলেন, 'প্রথম শ্যুটিংয়ের পরে আরও ২ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। ততদিনে মডেল হিসেবে পরিচিতি বেড়েছে আমার। তখন সম্ভবত ক্লাস ৯। একটা ছুটির পরে, স্কুলে গিয়ে একদিন ৬৭টা অটোগ্রাফ দিতে হয়েছিল। জুনিয়র থেকে সিনিয়র দিদিরা, সবাই অটোগ্রাফ নিয়েছিল আমার। এখন তো সেলফির যুগ। তবে কেরিয়ারের শুরুর দিকে হলেও সেই অটোগ্রাফের উন্মাদনাটা অনুভব করেছি আমি। তবে... শুধু এমন সুখস্মৃতি নয়, মনখারাপও রয়েছে বিস্তর। আমি গার্লস স্কুল, কলেজে পড়ে বড় হয়েছি। সেই সময়ে ফেস্ট নিয়ে একটা ভীষণ উন্মাদনা ছিল। ওই একটা দিনই অন্যান্য স্কুলের ছেলেমেয়েরা আসবে। আমি একবারই গিয়েছিলাম ফেস্টে। দেখলাম, দিব্যি নতুন বন্ধুত্বে মজে সবাই। আমার প্রিয় বন্ধুকেও এসে কফি ডেটের কথা বলছে কেউ। তবে আমায় এক্কেবারে পাত্তা দিচ্ছে না! ওদের কাছে আমি তখন আর পাঁচটা মেয়ের মতো সাধারণ নই। মডেল। প্রেমপ্রস্তাব তো দূরস্ত, 'ম্যাম' বলে ডেকে কথা বলছে আমায়। এই অভিজ্ঞতা হওয়ার পরে আর ফেস্টে যাইনি।'


তবে গোটা পৃথিবীর চোখে যতই বড় হয়ে যান না কেন.. রুক্মিণী কিন্তু পরিচিত হয়েও নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন ছোট্ট এক বালিকাকে। অভিনেত্রী বলছেন, 'ক্যামেরার সামনে আমায় যতই পরিণত লাগুক না কেন.. আমি কিন্তু সেটে ভীষণ ছেলেমানুষি করতাম। হঠাৎ শ্যুট থামিয়ে বলতাম, খেলতে ইচ্ছা করছে। আমায় অবশ্য সেই সুযোগও দিতেন সবাই। ভীষণ স্নেহ করতেন, প্রশয় পেতাম। শ্যুট হচ্ছে, তার মধ্যে মডেল প্লেন প্লেন খেলছে। খেলা শেষ করে তারপরে আবার আসবে ক্যামেরার সামনে। আসলে আমার মডেলিংয়ের বন্ধুরা আমায় বড় হতে দেখেছে। তাই এখনও এত ভাল সম্পর্ক সবার সঙ্গে। আর হ্যাঁ.. এখনও মনে পড়ে, এই মডেলিংয়ের সূত্র ধরেই আমার প্রথম ভিক্টোরিয়ার সামনে ঘোড়ার গাড়ি চড়া। তার আগে বহুবার দেখেছি... কখনও চড়া হয়নি। এমন করেই আমার ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্নগুলো পূরণ হয়েছে কেরিয়ারে।'


পর্দার সামনে কাজ আর পড়াশোনা, এই দুটো সামলানো বেশ কঠিন। অল্প বয়সে উপার্জন করতে শুরু করলে অনেকেই দিকভ্রান্ত হয়ে যান। রুক্মিণী বলছেন, 'এই সমস্যা আমার কখনও হয়নি। কারণ মডেলিং করার সময় প্রচুর সিনেমার অফার পেলেও আমি কাজ করিনি। ১০ বছর সিনেমার থেকে দূরে থেকেছি শুধুমাত্র পড়াশোনার জন্যই। বাবা-মা এই বিষয়ে কড়া ছিলেন। পড়াশোনা শেষ করতেই হবে। এছাড়া আমার বন্ধুরাও সবসময় যেন আমায় বাস্তবের মাটিতে টেনে নামিয়ে আনত। এত বছর পরেও কেউ যদি আমায় বলেন যে রুক্মিণীর অহংকার নেই, তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমার বাবা-মা আর বন্ধুদের। প্রথম প্রথম উপার্জন করে গোটাটাই তুলে দিতাম মা-বাবার হাতে। তারপর অবশ্য যা যা আবদার করে চেয়ে নিতাম সেটা উপার্জনের চেয়ে অনেক বেশি। তবে টাকা কখনও আমার মাথা ঘুরিয়ে দেয়নি।'


মধ্য়বিত্ত পরিবারে ক্যামেরার সামনে কাজ নিয়ে অনেক সময় অনেক ছুৎমার্গ থাকে। রুক্মিণী কখনও এমনটা অনুভব করেছেন? অভিনেত্রী বলছেন, 'আমার কেরিয়ার গড়ে তোলার পিছনে আমার পরিবারের সবচেয়ে বেশি অবদান যদি কারও থেকে থাকে, সেটা আমার মা আর দিদা। কলকাতা থেকে মফঃস্বল, দেশ এমনকি বিদেশেও সবসময় আমার সঙ্গে মা বা দিদা যেতেন। ১৮ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত আমার সমস্ত কাজে ওঁরা সঙ্গে থাকতেন। সেই সময়ে ততটা উপলদ্ধি করতে পারিনি এর গুরুত্ব। এখন বুঝি পরিবারের সমর্থনটা কী ভীষণ জরুরি। মা-দিদা এমন করে পাশে না থাকলে, আমি হয়তো রুক্মিণী মৈত্র হতামই না।'


আরও পড়ুন: Dev on Mithun: মিঠুনদার জন্য দলের সঙ্গে লড়েছি, আমার কাছে কর্তব্য আর রাজনীতি আলাদা: দেব


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।