কলকাতা: সাম্প্রতিক সময়ে হাতির প্রসঙ্গ উঠলেই সকলের মনে পড়ে যেতে বাধ্য কেরলে খাবারের সঙ্গে বাজি খেয়ে ফেলে মারাত্মক যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে পুকুরের মধ্যে নেমে পড়া আর শেষটায় মারা যাওয়া এক হস্তিনীর কথা। মনে পড়ে যাবে প্রায়শই উত্তরবঙ্গে রেললাইন পার হতে গিয়ে কাটা পড়া হাতিদের কথা। আবার দেশের বিভিন্ন জঙ্গলে চোরাশিকারীদের হাতে নিহত হাতিদের কথাও তো ভোলার নয়।দাঁতের জন্য বার বার এই হাতিদের প্রাণ দিতে হয় বন্দুকের গুলিতে। প্রসঙ্গটা তোলায় ‘আদর’ ছবির পরিচালক দেবদূত ঘোষ বলছেন, ‘ঘোড়া, হাতি এই ধরনের ওয়াইল্ড অথচ পোষ মেনে যায় এমন প্রাণীদের সঙ্গে এক সময়ে মানুষের নিকট সম্পর্ক ছিল। আস্তে আস্তে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফসলের ক্ষেতে হাতি তাড়ানোর জন্য যারা বাজি রাখছে খাবারের সঙ্গে তাদের যুক্তি যে তাদের ফসল নষ্ট হয়ে গেলে বারো মাস কী করবে! কিন্তু বাজিটা হাতি খেয়ে ফেলে যে অত বড় প্রাণীটাও বিপদে পড়বে এমনটা ভেবে দেখছে না। অর্থাৎ কীনা হাতির প্রতি দরদটা কাজ করছে না।সেটা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।’
নিজের ছবির জন্য দীর্ঘদিন শ্যুটিং করেছেন ত্রিপুরায়। উত্তরবঙ্গ, উত্তর-পূর্ব ভারতে হাতি সম্পর্কে খানিকটা জানতে হয়েছে দেবদূতকে। বললেন, ‘আমি শুনেছি নর্থ বেঙ্গলে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে রেললাইন অনেকগুলো জায়গাতেই ব্রিজের উপর দিয়ে হওয়ার কথা হয়েছে বার বার, কিন্তু হয়নি এখনও। তাই হাতি বুঝতে না পেরে কাটা পড়ছে লাইনে।‘ কোথাও কি উদ্যোগ নেওয়া হয়নি? ‘অবশ্যই হয়েছে।এই যেমন অসমে বন্যার জল বন্যায় সমতলে জমে গেলে হাতিরা জাতীয় সড়ক পার হয়ে উঁচু পাহাড়ের দিকে হাঁটা দিতে শুরু করে। হাতিদের সাহায্যের জন্য সমতল জঙ্গলের ভিতরেও কিছু কিছু কৃত্রিম পাহাড়ের মতো কনস্ট্রাকশন গড়া শুরু হয়েছে যাতে হাতিকে ট্রাভেল করতে না হয়, জাতীয় সড়ক না পেরোতে হয়।তবে করোনা আবহে অনেক কাজের সঙ্গে সঙ্গেই এসব উদ্যোগও অনেকটা চাপা পড়ে গেল। তবে অভয়ারণ্য মেনটেন করতে পারলে যে জঙ্গলের প্রাণী বাড়ানো যায় তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ ভারতের বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া।‘
ছবির প্রসঙ্গে আসা গেল। মূল কাহিনি প্রায় একই রেখে প্রভাতকুমারের গল্প বলার নিজস্ব ফ্লেভারটা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছেন দেবদূত। কাহিনি এ রকম, ত্রিপুরার খড়কাই গ্রামের আইনজীবী জয়রাম মুখোপাধ্যায় সকলের সম্মানের পাত্র। এক জমিদারের দ্বারা অপমানিত হয়ে তিনি একদা একটি হাতি কেনেন। বছর কয়েক পরে নাতনির বিয়ের সম্বন্ধ আসে। টাকার দরকার। এক আত্মীয় জয়রামকে হাতিটি বিক্রি করার পরামর্শ দেয়।কিন্তু সেটা কি তিনি প্রাণে ধরে করতে পারবেন? তাঁর পরিবারের লোকেরাও কি তাতে রাজি হবেন? সে কাহিনি ছবিতে উপজীব্য। করোনা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার খানিক আগেই ত্রিপুরার কৈলাশহরে শ্যুটিং শেষ করে ফেলেছিলেন তিনি। ডিসেম্বরে ছবিটি রিলিজের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির যদি উন্নতি না হয় তবে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ছবিটি রিলিজ করার কথাও মাথায় রেখেছেন দেবদূত।
জয়রামের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রজতাভ দত্ত। ডিএফও শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায় ও বড় বৌয়ের ভূমিকায় যথাক্রমে সব্যসাচী চক্রবর্তী ও বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়।মানুষের সঙ্গে পশুর সম্পর্ক, মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির ভালোবাসার মতো বিষয়গুলি দর্শক ছবিটির মধ্য দিয়ে উপভোগ করবেন বলে মনে করছেন দেবদূত ঘোষ। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই কোনও কোনও গল্প মনে থেকে যায়। এটাও তেমনই আমার এক অত্যন্ত পছন্দের গল্প। তাছাড়া পৃথিবীটা যে মানুষের একার নয়, অন্য প্রাণীদেরও ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার আছে তা এই গল্পে স্পষ্ট বলা আছে।এই মেসেজটা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া খুব জরুরি বলে মনে করছি।‘
‘আদর’-প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের কাহিনিতে মানুষ আর হাতির ভালোবাসার গল্প পর্দায়
ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ
Updated at:
08 Aug 2020 06:00 PM (IST)
হাতি আর মানুষের পারস্পরিক স্নেহ-ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে বাংলা ছবি ‘আদর’ তৈরি করছেন করছেন বাংলা চিত্র, মঞ্চ, সিরিয়ালের চেনামুখ দেবদূত ঘোষ। ছবির কেন্দ্রে রয়েছে এক হস্তিনী।প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে ছবিটি তৈরি হচ্ছে।পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে লিখছেন ইন্দ্রনীল শুক্লা
NEXT
PREV
বিনোদন (entertainment) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -