কলকাতা: ছবির পোস্টারেই ছিল, 'সপরিবারে দেখার ছায়া ছবি'। 'বল্লভপুরের রূপকথা' (Ballavpurer Rupkotha) ৭৫ দিনের সফর পার করল যেন সেই ম্যাজিকে ভর করেই। যে ছবির হাত ধরে বড়পর্দায় পা রাখলেন পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্য (Anirban Bhattacharyya), সেই ছবিই তৈরি করল রূপকথা। ৭৫ দিনেও প্রেক্ষাগৃহ ভর্তি দর্শক দেখে উচ্ছ্বসিত পরিচালক। এবিপি লাইভের মুখোমুখি হয়ে ক্যামেরার পিছনের গল্প করলেন 'রূপকথা'-র রূপকার। 


একসময় সপরিবারে বা ছোটদের সঙ্গে দেখার ছবি বলতে ছিল 'গুপি গাইন বাঘা বাইন', 'হীরক রাজার দেশে' বা 'সাড়ে চুয়াত্তর'। এখন সপরিবারে দেখার মতো ছবি কম হচ্ছে বলে মনে হয় পরিচালকের? তাই কী 'বল্লভপুরের রূপকথা'-র অবতারণা? অনির্বাণ বলছেন, 'পারিবারিক গল্প কমে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছিল, বল্লভপুরের রূপকথা ভীষণ অন্যরকমের একটা ছবি। বাদল সরকারের নাটকটার মধ্যেই সেই বিষয়টা ছিল। তবে বাদলবাবুর নাটক হলেও, এটা ভীষণ হালকা ধরণের গল্প। এর মধ্যে কোনও গুঢ়্য কথা হচ্ছে না। তবে যেহেতু বাদলবাবুর নাটক, সেখানে একেবারেই কোনও রূপকের ব্যবহার নেই তা বলা যায় না। কিন্তু বল্লভপুরের রূপকথায় সেটাকে বেশি জোর দেওয়া হয়নি চিত্রনাট্যের ক্ষেত্রেও তাই। 'বল্লভপুরের রূপকথা'-একটা ভীষণ প্রাণখোলা নাটক। এটা হরর কমেডি নয়, একটা নিপাট, দরাজ, দিলখোলা কমেডি ছবি। কাজটা দর্শকদের ভাল লেগেছে, দেখেছেন, ব্যাস এটুকুই।'


রূপকথার ৭৫ দিনটা কেমন ছিল? একটু হেসে অনির্বাণ বললেন, '৭৫ দিনটা দারুণ.. কিন্তু রূপকথা শুরুর দিনটা .... আমরা সমস্ত কলাকুশলীরা মে মাসের গরমে বাগচী বাড়িতে শ্যুট করেছি। সেই রূপকথাটা অন্যরকম ছিল। স্নান করার জন্য লাল জল, অদ্ভুত আবহাওয়া আর একটা শেষ না একটা ভৌতিক শিডিউল। সেই দিনটার কথা মনে পড়লে ভীষণ অবাক লাগছে। আজকের দিনটাকে রূপকথা বলব নাকি সেই দিনটাকে রূপকথা বলব.. দুঃস্বপ্নের রূপকথা, জানি না।'


আরও পড়ুন: Manobjomin Exclusive: সহজে ভেঙে পড়েন শ্রীজাত, ছবি তৈরি নিয়ে নতুন পরিচালককে কী পরামর্শ দিয়েছিলেন সৃজিত?


দুঃস্বপ্ন? অনির্বাণ বললেন, 'হ্যাঁ.. শিডিউল শেষ হচ্ছিল না। সেটা দুঃস্বপ্নের মতোই। আমাদের সহকারী পরিচালকেরা একটা কথা বলেছিলেন, ওই বাড়িতে নাকি কিছু একটা সমস্যা রয়েছে। সত্যিই তাই। বাড়ির বাইরে আমাদের যা যা লোকেশন ছিল, সব জায়গায় বেরোতাম, চটপট শ্যুটিং মিটিয়ে ফিরে আসতাম। কিন্তু ওই বাড়ির হলঘরের শ্যুটিং যেন আর শেষ হতে চাইত না। শেষমেশ আজ এসে সেই দিনটার কথা ভাবলে ভালো লাগছে।'


৭৫ দিনের সেরা প্রশংসা কোনটা ছিল? অনির্বাণ বলছেন, 'অনেকেই নিজেদের ভাল লাগার কথা জানিয়েছেন। তবে আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমার ছবি সঙ্গে যুক্ত এমন কিছু মানুষের মতামত, যাঁরা বাংলা জানেন না। যেমন অমিত কুমার বা খুব বিখ্যাত পরিচালক রবি কিনাগি। এমন কিছু মানুষ আমার ছবিটা দেখে ভীষণ উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন। সেটা আমার ভীষণ ভাল লেগেছিল। মনে হয়েছিল, ভাষার গন্ডি পেরিয়ে ছবি যেন কথা বলতে পারছে।'


'বল্লভপুরের রূপকথা' কী পরিচালক অনির্বাণের খিদে আরও বাড়িয়ে দিল? হেসে উঠে অনির্বাণ বললেন, 'পরিচালক হিসেবে আমি যেমন খিদেটা জানি, তেমন ব্যথাটাও জানি। এই দুয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখেই চলতে হবে। আমার মাথা ঠাণ্ডা আছে। আবার নতুন কাজ করব। তবে খিদের চোটে এমন খেয়ে নিলাম যে হজম হল না, সেটা আমি করব না।'