মুম্বই ও কলকাতা: করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশজুড়ে লকডাউনের মধ্যেই র্যাপার বাদশার ‘গেন্দা ফুল’ গান নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের ঝড় উঠেছে। এক বাঙালি লোকগীতি শিল্পী ও সংগীতকার রতন কাহারের গান নিজের বলে তিনি চালিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এজন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে বাদশা বলেছেন, সংগীতশিল্পী রতন কাহারকে যে কোন উপায়ে পারেন, সাহায্য করতে চান।
জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজের আকর্ষণীয় ডান্স মুভ ও বাদশার র্যাপের জন্য গানটি সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠে। কিন্তু এই গানের যে পংক্তিগুলি শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, সেই পংক্তিগুলির প্রকৃত রচয়য়িতা অন্য কেউ। যে পংক্তিগুলি নিয়ে বিতর্ক তা নেওয়া হয়েছে রতন কাহারের লেখা বাংলা লোকগীতি ‘বড় লোকের বেটি লো’ থেকে।
রতন কাহার বিস্মৃতপ্রায় শিল্পী। পশ্চিমবঙ্গের একটি গ্রামে থাকেন তিনি। শিল্পীর আর্থিক অবস্থা মোটেই ভালো নয়। গানের টুকলির ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, আমি বড় লোকের বেটি লো গান লিখেছিলাম। গানের সুর, কথা-সবকিছুই আমার। অনেকেই আমার গান নিয়েছেন, কিন্তু কেই আমার কোনও কৃতিত্ব স্বীকার করেননি। তাঁরা নিজেদের গান লিখতে পারেন না। তাঁরা আমার গান নিজেদের বলে চালিয়েছেনন। আমি কুঁড়ে ঘরে থাকি। আমার গানে থাকে মাটির স্পর্শ। তাঁদের আদালতে টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।
বীরভূমের সিউড়ির বাসিন্দা প্রবীণ শিল্পী বলেছেন, আমি মানুষের কাছে শুধু ভালোবাসা চাই। আমার কোনও স্বার্থ নেই। টাকাপয়সার লোভ আমার নেই। দুঃখ একটাই, অনেক লোক গানটি গেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা কেউ সঠিকভাবে এই গান গাইতে জানেন না। আর এই গানের পিছনে যে আখ্যাণ রয়েছে, তাও তাঁরা জানেন না।
অন্য কারুর সৃষ্টিকে নিজের বলে চালিয়ে দেওয়ায় নেটিজেনদের রোষের মুখে পড়েছেন বাদশা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাদশা ইনস্টাগ্রাম লাইভে বলেছেন, রতন কাহার সাব, যেভাবে পারি, আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই।
রতন কাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার জন্যও বাদশা অনুরাগীদের আর্জি জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এই গান রতন কাহারের তা তিনি জানতেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি বলেছেন,আমি ওই গান রচয়িতার নাম খোঁজার চেষ্টা করেছি কিন্তু খুঁজে পাইনি। গান রিলিজ হওয়ার কয়েকদিন পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিডব্যাক থেকে জানতে পারি, রতন কাহারের নাম। বাংলার ওই প্রবীণ শিল্পী লিখেছিলেন বড় লোকের বেটি লো। শুনেছি ওঁর অর্থনৈতিক অবস্থাও ভাল নয়। আমি ওঁকে সম্মান দিয়ে সাহায্য করতে চাই।
বাদশা বলেছেন, এই ১৯৭২-এ গানের আগের সংস্করণগুলিতে আসল রচয়িতাকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়নি দাবি করে বাদশা লিখেছেন, গান রিলিজের আগে প্রয়োজনীয় খোঁজখবর করে প্রকৃত রচয়িতার কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। কোথাও রতন কাহারের নাম ছিল না। যে তথ্য পাওয়া গিয়েছেল, তা হল, এই গান বাংলার বাউলদের প্রচলিত লোকগীতি।