নয়াদিল্লি: দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যে প্রকাশ্যে ফের নক্ক্যারজনক ঘটনা। ভোজপুরী তারকা পবন সিংহের বিরুদ্ধে অভিনেত্রীকে অশালীন ভাবে স্পর্শ করার অভিযোগ উঠল। পরিস্থিতি এমন হল যে ওই অভিনেত্রী ভোজপুরী ছবিতে অভিনয় না করার সিদ্ধান্ত নিলেন। (Pawan Singh)
হরিয়ানার অভিনেত্রী অঞ্জলি রাঘবের সঙ্গে পবন অশালীন আচরণ করেন বলে অভিযোগ। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে একই মঞ্চে দেখা যায় পবন ও অঞ্জলিকে। সেখানে অঞ্জলির কোমরে হাত দিতে দেখা যায় পবনকে। অঞ্জলি অস্বস্তি প্রকাশ করলেও, পবন সংযত হননি। এমনকি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাবে বলে দর্শকদের তরফে সতর্ক করা হলেও, কোনও হেলদোল ছিল না পবনের। (Anjali Raghav Quits Bhojpuri Industry)
ওই ভিডিও সামনে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় ওঠে। কর্মক্ষেত্রে মেয়েরা যে নিরাপদ নন, ভিডিওটি তার জলজ্যান্ত প্রমাণ বলে মন্তব্য করেন অনেকেই। পবনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপেরও দাবি ওঠে। সেই আবহেই নীরবতা ভেঙেছেন অঞ্জলি। জানিয়েছেন, পবন তাঁর সিনিয়র। তাই কিছু বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। কিন্তু ভোজপুরী ছবিতে আর কাজ করবেন না তিনি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও বার্তা পোস্ট করেছেন অঞ্জলি। জানিয়েছেন, তিনি অস্বস্তিতে ছিলেন। কিন্তু কিছু বলতে পারছিলেন না। মঞ্চে তিনি হাসছিলেন কেন, কেন কিছু বলছেন না, সেই নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছিলেন। কিন্তু তিনি কিছু বলার সাহস পাচ্ছিলেন না বলে দাবি অঞ্জলির। তাঁর বক্তব্য, “অনেকেই বলছেন, আমি নাকি বিষয়টি উপভোগ করছিলাম, তাই মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাসছিলাম। কিন্তু অনুমতি ছাড়া কেউ স্পর্শ করলে সত্যিই কি খুশি হওয়া যায়? প্রথমে ভেবেছিলাম নতুন শাড়ি বা ব্লাউজের ট্যাগ দেখা যাচ্ছে হয়ত। তাই মুখে হাসি ধরে রেখেছিলাম। কিন্তু পরে যখন দেখলাম তা নয়, মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কী করণীয়, তা ওই মুহূর্তে বুঝে উঠতে পারিনি।”
অঞ্জলি জানিয়েছেন, অনুষ্ঠান মিটে গেলে পবনকে একহাত নেবেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু পবন তত ক্ষণে বেরিয়ে যান। কয়েক জনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথাও বলেন তিনি। কিন্তু পবন সিনিয়র, প্রভাবশালী এবং পবনের PR টিম বিষয়টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে সতর্ক করা হয় তাঁকে। সময়ের সঙ্গে বিষয়টি থিতিয়ে যাবে বলে আশ্বস্তবাণী পেয়েছিলেন। কিন্তু উল্টে তাঁর দিকেই আঙুল তোলা হচ্ছে দেখে আর চুপ থাকতে পারেননি নায়িকা।
অঞ্জলি বলেন, “অনুমতি ছাড়া কোনও মেয়েকে স্পর্শ করা একেবারেই সমর্থন করি না আমি। এটা অন্যায়, তার চেয়েও বেশি। হরিয়ানায় ঘটলে আমাকে কিছু বলতেই হতো না। মানুষই বুঝিয়ে দিতেন। কিন্তু লখনউতে ঘটেছে, যা আমার জায়গা নয়। শিল্পী হিসেবে নতুন কিছু করতে ভাল লাগে। কিন্তু আমি আর ভোজপুরী ছবিতে অভিনয় করব না।”
পবন বা তাঁর টিমের তরফে এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। কিন্তু পবনের স্ত্রী জ্য়োতি সিংহ একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছেন। তাঁর দাবি, পবন তাঁর ফোন ও মেসেজের জবাব দেন না। তাঁর বাবার সঙ্গেও দেখা করেননি পবন। গায়ে আগুন দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় দেখছেন না, জীবনের প্রতি ঘৃণা জন্মেছে বলেও জানিয়েছেন জ্যোতি।
পবনকে ঘিরে বিতর্ক এই প্রথম নয়। বিয়ের ছ’মাসের মধ্যে পবনের প্রথম স্ত্রী নীলমের দেহ উদ্ধার হয়। তিনি আত্মহত্যা করেন বলে দাবি করা হলেও, পবনের বিরুদ্ধে নীলমকে মেরে ফেলার অভিযোগ ওঠে সেই সময়। ভোজপুরী অভিনেত্রী অক্ষরা সিংহের সঙ্গে সম্পর্ক থাকাকালীনই পবন দ্বিতীয় বার জ্যোতিকে বিয়ে করেন বলে অভিযোগ। মদ্যপানের পর পবন তাঁকে মারধর করতেন, কেরিয়ার নষ্ট করে দিয়েছেন বলে পরে দাবি করেন অক্ষরা।
পবন যে ধরনের গানের জন্য পরিচিত, তা নিয়েও কম অভিযোগ নেই। মেয়েদের যেভাবে দেখানো হয় তাঁর গানে, মেয়েদের সম্পর্কে যে ধরনের কথা থাকে গানে, তা অশ্লীলতা বলে বার বার অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পবনকে আসানসোল থেকে প্রার্থী ঘোষণা করলে, সেই নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। বিজেপি সমর্থকরা পর্যন্ত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত আসানসোলের প্রার্থী হওয়া থেকে সরে দাঁড়ান পবন। নির্দল হিসেবে বিহার থেকে পরে ভোটে দাঁড়ান, যার দরুণ বিজেপি দল থেকে বহিষ্কার করে তাঁকে। নির্বাচনেও পরাজিত হন পবন।