কলকাতা: 'মা আমায় কম সময় দিয়েছেন, আমি মাকে পর্যাপ্ত সময় দিয়েছি.. হ্যাঁ.. এটা আপনি লিখবেন...' কথাটা বলার সময় একটু জোরেই শোনাল বিশ্বনাথ বসু ( Bishwanath Basu)-র গলাটা। সেই জোর পরিতৃপ্তির, সেই জোর ভালবাসার, সেই জোর আদর মোড়া অভিযোগের। তিনি পরিবার ভালবাসেন, চান বেঁধে বেঁধে থাকতে। মাতৃদিবসের আগে, এবিপি লাইভের সঙ্গে বিশ্বনাথ ফিরে দেখলেন মায়ের সঙ্গে ফেলে আসা ভালবাসার মুহূর্ত, আদুরে অভিযোগ আর মা-ছেলের এক সরল সমীকরণের গল্পকে।
বড় হয়ে ওঠা একান্নবর্তী পরিবারে। বিলাসিতা নয়, বরং সংসারে একটা প্রচ্ছন্ন অভাবই দেখে এসেছেন তিনি। কিন্তু এখন... বদলে গিয়েছে সবটা। এখন মাকে নিজের সামর্থ্য ছাপিয়ে যেন খুশিটুকু নিংড়ে দিতে চান বিশ্বনাথ। এবিপি লাইভকে (ABP Live)-কে অভিনেতা বলছেন, 'মায়ের একটা লড়াই ছোট থেকে দেখে এসেছি। একান্নবর্তী পরিবারে দুর্গাপুজো হত। সেখানে বাড়ির সবার মধ্যে শাড়ি গয়না কেনার গল্পে যেন একটু পিছিয়ে পড়তে না। অভাব না দেখলেও, বাহুল্য দেখিনি কোনোদিন। ছোটবেলায় একবার পুরী বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে, ৮০ টাকা হারিয়ে যায় মায়ের। তারপর পুরো বেড়ানোটাই যেন ডুবে গিয়েছিল অন্ধকারে।'
সময় বদলেছে। মাকে ব্যাঙ্ককও ঘুরিয়ে এনেছেন বিশ্বনাথ। পরিবারে অভাব কেটেছে, তবে মায়ের ওপর অভিমান রয়ে গিয়েছে বিশ্বনাথের। চিরকালীন সংসারী মা নাকি অধিকাংশ সময় দিয়ে দিতেন কাজেই। কাছের মানুষগুলোর সঙ্গে কাটানোর সময়ের ভাঁড়ারে তাই টান পড়েছে চিরকাল। সময়ের অভাব অর্থের চেয়ে অনেক বেশি বিঁধত অভিনেতাকে। বিশ্বনাথ বলছেন, 'আমার বাবা একটু রাগী ছিলেন, তবে মা-কে ভীষণ ভালবাসতেন। হয়তো কখনও উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা চলছে.. বাবা মাকে ডাকতেন। একটু পাশে বসে একসঙ্গে সিনেমা দেখতে চাইতেন। মা কাজ মেটাতে গিয়ে আসতে পারতেন না প্রায় কখোনোই। ২০০৭-এ বাবা মারা যান। তখন আমি মাকে বলেছিলাম, 'কাজের জন্য তো লোক থেকে গেল মা... বাবা তোমার সঙ্গে চাইতেন, আজ সেই বাবা কই!' আমি হাজার কাজের ব্যস্ততাতেও মাকে পর্যাপ্ত সময় দিয়েছি, এখনও দিই।'
কাজের বাইরে বিশ্বনাথের জীবন জুড়ে শুধুই পরিবার। অভিনেতা বলছেন, 'আমি ভীষণ কাছের মানুষদের নিয়ে থাকতে ভালবাসি। বাড়িতে এখনও দুর্গাপুজো হয়। আমি নিজে সবাইকে ফোন করে নিমন্ত্রণ করি। দেশের বাড়িতে থাকতেই স্বচ্ছন্দবোধ করেন মা। ওখানে গিয়ে ওঁর সঙ্গে যতটা পারি সময় কাটাই। মাকে বলি, কাজ করতে হবে না, তুমি কেবল মা দুর্গার মন্ডপে থাকো। দুই মাকে একসঙ্গে দেখি। আমরা পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে গল্প করি। আমি বিশ্বাস করি, সকালবেলার কড়াইয়ের ডাল, পোস্ত, রবিবার দুপুরের পাঁঠার মাংসের মতোই প্রতিটা সম্পর্ককে নিংড়ে তার স্বাদটা উপভোগ করে নিতে হয়। আমি মাকে নিয়ে বিদেশে গিয়েছি। দিনে ৩বার মাকে ফোন করি নিয়ম করে, যাবতীয় গল্প ভাগ করে নিই। সকালে উঠে বিছানায় বসে প্রথম ফোনটা মাকে করি আবার রাতে শ্যুটিং থেকে ফেরার সময়ও মা-কে ফোন করে সারাদিনের খবর দিই। আসলে আমি মা চলে যাওয়ার পরে লোহার গেট ধরে কেঁদে বলতে চাই না, তোমার জন্য আমি কিছু করতে পারলাম না। আমি মাকে পর্যাপ্ত সময় দিই চিরকাল সে আমার যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন। যে আধারে কোনও হিসেব না করে ঢেলে দেওয়া যাবে সবটা.. স্বীকারোক্তি থেকে শুরু করে অশান্তি, মনখারাপ থেকে শুরু করে সাফল্যের খবর... আমার কাছে সেই আধারটারই নাম মা।'