কলকাতা: আলাপের শুরু 'বিসর্জন' ছবির হাত ধরে। সেই ছবিতে জয়া আহসান (Jaya Ahsan)-এর লুক সেট হয়েছিল তাঁর হাতে। সময় পেরিয়েছে.. 'অর্ধাঙ্গিনী'-র সৌজন্যে এবার জয়ার সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নিলেন তিনি। চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় (Churni Ganguly)। কিন্তু শুধুই কি পর্দাভাগ? গল্পে বোনা হল এক এমন সমীকরণ, যেখানে তাঁদের পক্ষে একে অপরের উপস্থিতিই অস্বস্তিকর। কিন্তু পর্দার বাইরে দুই অভিনেত্রীর সম্পর্ক কেমন? গল্প বলায় কোন অন্য স্বাদ, অন্য সমীকরণ নিয়ে আসবে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় (Kaushik Ganguly)-র নতুন ছবি? এবিপি লাইভের প্রশ্নের উত্তরে চূর্ণী যেন ঝলমলে নদীই?


ছবির নাম 'অর্ধাঙ্গিনী'। এই শব্দবন্ধে চূর্ণী কতটা বিশ্বাসী? পরিচালক, অভিনেত্রী বললেন, 'আমরা কথায় কথায় এই শব্দটা ব্যবহার করি বটে, কিন্তু এমন অর্ধেকের হিসেব সত্যিই হয় না। নিজের ব্যক্তিত্বটা বজায় রেখে, মানুষ সবটাই একটা সম্পর্ককে দিয়ে দেয়। অর্ধেকের থেকে তা অনেকটা বেশি। আর তাই বোধহয়, বিচ্ছেদের যন্ত্রণাও এত বেশি।'


পর্দায় তাঁদের মধ্য এক অদ্ভুত অবর্ণনীয় সম্পর্ক। একজন প্রাক্তন স্ত্রী, অন্যজন বর্তমান। কিন্তু পর্দার বাইরে চূর্ণী জয়া সমীকরণটা কেমন? চূর্ণী বলছেন, 'সেটে দৃশ্য তৈরি করতে করতেই সময় চলে যেত। তবে জয়া আর আমার পর্দার বাইরে ভীষণ ভাল সম্পর্ক। কৌশিকের সঙ্গে ও প্রথম কাজ করেছিল বিসর্জনে। সেসময়ে ওর লুক সেট করেছিলাম আমি। কোন দৃশ্যে ও কী পোশাক পরবে, চুল কেমন থাকবে, সিঁদুর কতটা ঘাঁটা থাকবে সবই আমার হাতে তৈরি। ছবির এডিটিংয়ের সময় কৌশিক ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল অন্য একটা কাজে। শট বাছা থেকে শুরু করে কোনটা রাখা হবে, কোনটা ফেলা হবে... সবটা দেখেছিলাম আমি। সেই থেকেই জয়ার অভিনয়সত্ত্বার সঙ্গে আমার পরিচয়। ও কী কী বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারে তখনই বুঝেছিলাম। বিসর্জনের সময়েই জয়ার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে গল্প হত। গল্পটা শুরু হল চা নিয়ে, তারপর আমাদের পোষ্য থেকে শুরু করে নানা আলোচনা, গল্প চলে যেত বিভিন্নদিকে। ভীষণ মিষ্টি সম্পর্ক ওর সঙ্গে আমার। তবে অর্ধাঙ্গিনীর শ্যুটিংয়ের সময় গল্প করার সময় ভীষণ কম পেয়েছি। দুজনেই নিজের চরিত্র নিয়ে, সেটাকে ঘষামাজা করতেই ব্যস্ত ছিলাম।'


প্রাক্তন স্ত্রী আর বর্তমান স্ত্রী মুখোমুখি, অদ্ভুত এই সম্পর্কের সমীকরণকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্য নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছিলেন চূর্ণী? অভিনেত্রী বলছেন, 'আমি প্রথমেই চিত্রনাট্য পড়েছিলাম খুব ভালভাবে। আমার চরিত্রটা এমনই যে ভীষণ কাটা কাটা কথা বলে, কিন্তু সবসময় যে এত কড়া কথা বলতে চায় তাও নয়। প্রাক্তন আর বর্তমান স্ত্রী কে একসঙ্গে সাহায্য করছেন অসুস্থ স্বামীকে.. এই পরিস্থিতি কখোনোই স্বাভাবিক হতে পারে না। সেই অস্বস্তিকে মাথায় রেখেই আমরা দৃশ্যগুলো তৈরি করেছিলাম। কোন পরিস্থিতিতে আমার চরিত্র কতটা বলে ফেলছে আবার কতটা চাপা থাকছে.. এই মানসিক টানাপোড়েনটাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।'


কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায় এর আগে একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন চূর্ণী। সেই সমস্ত ছবি আর অর্ধাঙ্গিনীর মধ্যে পার্থক্য কোথায়? চূর্ণী বললেন, 'বিশাল পার্থক্য। এই ছবিতে কৌশিক আমাদের কাউকে পরিচালনা করেনি। কেবল বলে দিত কোন সংলাপ বলতে হবে বা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে বা বসতে হবে। কীভাবে বলব সেটা কখনও ধরিয়ে দেয়নি আমাদের। এটা ও সব ছবিতেই করে থাকে। কিন্তু 'অর্ধাঙ্গিনী'-র ক্ষেত্রে একেবারে চুপ। একটা সময় তো আমি আর জয়া ভাবতে শুরু করলাম যে ও কিছুই বলছে না কেন? তাহলে কি ওর কাজ পছন্দ হচ্ছে না? কয়েকটা দৃশ্য পরে আমি ধরে নিলাম যে আমরা তাহলে ঠিক পথেই হাঁটছি, ও হয়তো খুশি। ও আমাদের অভিনয়ের জন্য খোলা মাঠ ছেড়ে দিয়েছিল। আমরা যা খুশি করি..'


সম্পর্কের সমীকরণ, জটিলতা, চিরকালই ছিল সমাজে। কিন্তু সেই জটিলতাকে ছবির পর্দায় তুলে এনে কী সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্মাতারা? চূর্ণী বলছেন, 'এটা ঠিক সাহসিকতা নয়। কৌশিক সবসময়েই চেষ্টা করেছে ওর ছবির মধ্যে দিয়ে একটা অন্য দৃষ্টিকোণ তুলে ধরতে। একজন বর্তমান স্ত্রী আর একজন প্রাক্তন, তাদের মধ্যে সম্পর্কটা রেষারেষির হবে সেটাই স্বাভাবিক বলে ধরে নেয় সমাজ। কিন্তু তার বাইরেও যে সম্পর্কের অনেক রকম সমীকরণ হতে পারে, তা দেখাবে অর্ধাঙ্গিনী'।


আরও পড়ুন: Causes of Sweating: গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘামতে শুরু করি কেন, এর পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ কী ?


আরও পড়ুন: Bad Cholesterol: ব্যাড কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য কী কী খেতে পারেন? রইল তারই তালিকা