কলকাতা: স্কুলে পড়ার সময়েই প্রথম শুধু বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে পুজোয় বেরোনো শুরু। আর প্রথমবারেই বাসে টিকিট না কেটে সফর। তখন অষ্টম বা নবম শ্রেণি হবে। টিকিট ছাড়া বাস সফর তখন অ্যাডভেঞ্চারের সমান। সেই খুনসুটির দিনগুলো এখন কাজের চাপে বদলে গিয়ে জায়গা করে নিয়েছে ভার্চুয়াল স্ক্রিনে। দিনগুলো বড্ড মিস করেন সঙ্গীত পরিচালক নবারুণ বসু। এবিপি লাইভের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন ছেলেবেলার পুজোর স্মৃতি। 


বাঙালি বাড়িতে পুজো মানেই উন্মাদনা, হইচই। নবারুণ বলেন, 'একদম ছোটবেলায় দেখতাম পুজোর সময়ে শহরের বাইরে যাঁরা থাকেন তাঁরা কলকাতায় আসছেন। সেই সময়ে অবশ্যই রাত জেগে ঠাকুর দেখাটা ছিল মাস্ট।' নবারুণের নিজের বিশেষ পছন্দের ছিল পুজোর আলোকসজ্জা। তাঁর কথায়, 'আমরা দক্ষিণ কলকাতায় থাকতাম। তাই উত্তর কলকাতার মণ্ডপ আর আলোকসজ্জা দেখার একটা আলাদা আনন্দ ছিল।' 


এরপর খানিক বড় হয়ে যখন নবম-দশম শ্রেণির ছাত্র নবারুণ, তখন বন্ধুদের সঙ্গে রাত জেগে ঠাকুর দেখার ছাড়পত্র মেলে। শুধু বন্ধুরা বা কখনও কেবল ছেলে বন্ধুরাই দল বেঁধে ঠাকুর দেখতে বের হতেন, সেখানে অ্যাডভেঞ্চার তো ছিলই। 'তখনই প্রথম বন্ধুরা দল বেঁধে বাসের একদিক দিয়ে উঠে অন্যদিক দিয়ে নেমে গেছিলাম, টিকিট না কেটে। যদিও খুব ছোট্ট ডিসট্যান্সে এটা করেছিলাম,' হাসতে হাসতে বললেন নবারুণ। তিনি আরও বলেন, 'যে সমস্ত বন্ধুদের সঙ্গে সবসময় দেখা হয় না, তাদের সঙ্গে পুজোতেই একমাত্র দেখা হত। আর তখন আমরা একসঙ্গে গোটা শহর ঘুরতাম। সেটা আমার কাছে খুব স্পেশাল।'


এখন নবারুণ বসুর পুজোর সময় বেশিরভাগটাই কাটে শহরের বাইরে। কখনও অন্য শহরে অনুষ্ঠান তো কখনও ভিন দেশে। তাঁর কথায়, 'এখন পুজোটা বেশিরভাগই সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা হয়। কলকাতায় থাকলেও সাধারণত পুজোয় অনুষ্ঠানই থাকে, তাই পুজোয় ঘোরা বা বেড়ানো আর সেভাবে হয়ে ওঠে না।'


ছোটবেলায় নবারুণ বসুর কাছে পুজোর একটা অন্যতম আকর্ষণ ছিল পূজাবার্ষিকী বা পুজো সংখ্যা। নবারুণ বলছেন, 'স্কুলে ছুটি পড়লেই বিভিন্ন পুজোবার্ষিকীগুলো গোগ্রাসে গিলতাম ছোটবেলায়। এখনও বইগুলো কিনি, কিন্তু খুব মনোযোগ দিয়ে যে পড়া হয়ে ওঠে তা নয়।' 


হাতে হাত রেখে অষ্টমীর সন্ধ্যা ম্যাডক্স স্কোয়ারে কাটানোর চিত্রটা বেশিরভাগ বাঙালির কাছেই খুব পরিচিত। তবে নবারুণের মতে, 'পুজোয় প্রেম আমি ওই বিজ্ঞাপনে বা সিনেমাতেই কেবল দেখেছি। আমার কখনও পুজোয় প্রেম আসেনি।' তবে কলকাতায় পুজোর যে আলাদা উদ্দীপনা আছে সেটা অন্য কোথাও গিয়েই পাননি নবারুণ, অকপটে স্বীকার করলেন সে কথা। 


এবছর পুজোয় এখনও শহরে থাকারই কথা রয়েছে তাঁর। যদিও অতিমারী পরিস্থিতিতে এই বছর ঠিক কীভাবে পুজো কাটবে সেটা বোঝাও যাচ্ছে না। করোনা আবহে পুজোর কী কী বিধিনিষেধ জারি হচ্ছে তার অপেক্ষায় রয়েছেন নবারুণ। 'কোনওবার তো দেখা হয় না, তাই এবার ইচ্ছে আছে কাছাকাছি কিছু মণ্ডপ ঘুরে দেখার। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই সমস্ত সতর্কতা মেনে তবেই বেরোব।'


আরও পড়ুন: Exclusive: দাদুর সঙ্গে মাঝরাত্রে লুকিয়ে ঠাকুর দেখতে যেতাম: সৌরসেনী