কলকাতা: তাঁর ছোটবেলা কেটেছে কলকাতা থেকে বেশ দূরে, কোচবিহারে। ফলে ছেলেবেলার পুজো বলতে কলকাতার জাঁকজমকপূর্ণ পুজো নয়, বিভিন্ন বাড়ির ছোট ছোট পুজোই বেশি মনে পড়ে। তাঁর কাছে দুর্গাপুজো মানেই নতুন গানের ক্যাসেট থেকে পূজাবার্ষিকী। যদিও বহুদিন ফেরত যাওয়া হয়নি কোচবিহারে। এবিপি লাইভের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সেই ছেলেবেলায় ফিরে গেলেন কবি ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৌষিকী দাশগুপ্ত। 


ছোটবেলার পুজো বললে প্রথমেই কী মনে পড়ে? কৌষিকী দাশগুপ্ত জানান, 'আমি ছোটবেলা একটা জেলা শহরে কাটিয়েছি। সেখানকার পুজো এখনকার কলকাতার পুজো থেকে সম্পূর্ণই আলাদা ছিল। এখানে তো পুজো আসার অনেক আগে থেকেই বড় বড় ক্লাবের বড় করে খুঁটিপুজো দেখতে পাই। কিন্তু ছোটবেলায় তো এত টাকাপয়সা খরচ করে পুজোর ব্যাপারটা ছিল না। ছোট ছোট বাড়ির পুজো অনেক বেশি দেখতাম তখন।' কবির মতে ছোটবেলায় 'পুজোর অন্যান্য সাংস্কৃতিক দিকগুলো যেমন পুজোর গানের ক্যাসেট আসবে, পূজাবার্ষিকী বের হবে, সেই সঙ্গে অন্য নতুন বই বেরোবে, এই স্বাদগুলো পেতাম।' তিনি বলেন, 'মনে আছে, ছোটবেলায় একটা কী দুটো নতুন জামা কেনা হত আর তাতেই খুশি থাকতাম। পুজোর আনন্দটাই আসল ছিল।'


'ছোটবেলায় পুজোর সময়ে আমরা ছোটরা ঘোরার থেকেও এক জায়গায় একসঙ্গে বসে কথা বলে, ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে বেশি এনজয় করতাম। অনেক মতামত আদান-প্রদান হত। এখন যদিও সবটাই ভীষণ গ্ল্যামারাস হয়ে গেছে। ছোটবেলায় চাকচিক্য ছিল না এত, কিন্তু পুজোর একটা অপেক্ষা, একটা আন্তরিকতা ছিল,' বলছেন অধ্যাপক।


ছেলেবেলার পুজোর কথা বলতে গিয়ে কবি বলেন, 'জেলার যে নিজস্ব মফঃস্বলের স্বাদ আছে সেটা এখনও কলকাতার থেকে জেলার পুজোকে আলাদা করে।'


এখনও 'বাজল তোমার আলোর বেণু' গানটা শুনলেই এক ঝটকায় পৌঁছে যান ছোটবেলায়। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের 'মহিষাসুরমর্দিনী' এখনও অতীতের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে বাঙালিকে। কবি জানান, 'বাজল তোমার আলোর বেণু' গানের সুর ভেসে এলেই পুজো এসে গেছে মনে হয়। তাঁর মতে কিছু জিনিস কখনও বদলায় না, যেমন বাঙালির এই ভোরবেলা উঠে রেডিওয় 'মহিষাসুরমর্দিনী' শোনার অভ্যেসটা। 'সেই যে সকালে উঠতে হবে, পুজো আসছে, ভোরবেলায় রেডিওতে মহিষাসুরমর্দিনীর গান ভাসছে, সেই আমেজটাই অসাধারণ ছিল। তারপর দূরদর্শনের মহালয়া দেখার অসম্ভব একটা ঝোঁক ছিল,' বলেন তিনি।


করোনা আবহেও গতবারের থেকে এবারের পুজো হয়তো একটু ভাল অবস্থায় কাটতে পারে বলে আশা কবির। তবে হঠাৎ করে বাঁধনছাড়া উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলে ফের বিপদ আসতে সময় লাগবে না বলেও সাবধান করেন। বাড়ির পাশের বিগ বাজেট পুজো এড়িয়ে ছোট মণ্ডপে অঞ্জলি দেওয়া, বাড়ির লোকজনের সঙ্গে সময় কাটানো, বই পড়া, এইভাবেই মোটামুটি এখন পুজো কাটে কবি তথা অধ্যাপক কৌষিকী দাশগুপ্তের।


আরও পড়ুন: 'সুন্দরী মেয়ে ভোগ খেতে এলে খিচুড়ি পরিবেশন নিয়ে প্রতিযোগিতা চলত'


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI