তোর্ষা ভট্টাচার্য, কলকাতা: কখনও রবীন্দ্রসঙ্গীত, কখনও ধ্রুবদী.. নাচের ছন্দে তাঁরা পা মেলান ময়ূরের মতো, দর্শকদেরও যান নেশা লাগে চোখে। যে যুগে সোশ্যাল মিডিয়ায় 'ভাইরাল' হয়ে যাওয়াটাই ট্রেন্ড, সেই যুগে তাঁরা ভরসা রেখেছেন শিক্ষায়, ভারতীয় নৃত্যকলায়। আধুনিক গানের সঙ্গেও তাঁরা দিব্যি মিলিয়ে দিতে পারেন ভরতনাট্যম, কত্থক বা লোকনৃত্য। পায়েল বসাক ও দ্বৈপায়ন চৌধুরী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল তাঁদের প্রায় সমস্ত নাচই। কেবল নাচের সঙ্গী নয়, বাস্তবেও তাঁরা স্বামী-স্ত্রী। সদ্য 'দাদাগিরি' (Dadagiri)-র মঞ্চ মাতিয়ে এসেছেন এই যুগল, প্রশংসা অর্জন করে নিয়েছেন খোদ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)-র থেকেও। কে এই পায়েল আর দ্বৈপায়ন? সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় এই যুগলের গল্প শুনল এবিপি লাইভ (ABP Live)।


ছোটবেলা থেকেই নাচ ভালবাসতেন পায়েল, দ্বৈপায়নের সঙ্গে আলাপ সেই সূত্রেই। এবিপি লাইভকে পায়েল বলছেন, 'ছোটবেলায় আমি আর দ্বৈপায়ন, কৃষ্ণনগরের একই জায়গায় নাচ শিখতাম। সেই থেকেই বন্ধুত্ব। ও আমার থেকে ৩ বছরের বড় হলেও, বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম আমরা। তারপরে ক্লাস এইট থেকে দ্বৈপায়ন কলকাতায় নাচ শিখতে শুরু করে। তখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ কমে এসেছিল। তারপরে ২০১৮ সালে আমারা একসঙ্গে রাধা-কৃষ্ণের ওপর একটা অনুষ্ঠান করি, সেই আবার দেখা। সেখান থেকেই আমাদের ফের বন্ধুত্ব আর তারপরে সম্পর্কের শুরু। খুব অদ্ভুতভাবে, আমাদের প্রেমের কথা না জেনেই, বাড়ি থেকে আমাদের সম্বন্ধ করেছিলেন বিয়ের।'


পায়েল পেশায় নৃত্যশিল্পী হলেও, দ্বৈপায়ন ইঞ্জিনিয়ার। কর্মসূত্রে বেশিরভাগ সময়টাই কাটে ইউএসএ (USA)-তে। দুজন দুই জায়গায়, আর তখনই নাকি শুরু হয়েছিল তাঁদের এই ডুয়েট নাচ! কিভাবে? পায়েল বলছেন, 'তখনও আমরা সম্পর্কে রয়েছি, বিয়ে হয়নি। করোনা পরিস্থিতিতে দ্বৈপায়নই জোর করে আমার নামে একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলিয়েছিল। কিন্তু লং ডিসট্যান্স রিলেশনশিপে একসঙ্গে নাচ কীভাবে সম্ভব? তার ওপরে ও বিদেশে, আমি কলকাতায়। আমরা তখন আলাদা আলাদা নাচ করে, এডিট করে একসঙ্গে নাচের ভিডিও তৈরি করতাম। পোশাক থেকে শুরু করে আবহ.. সবটাই এমনভাবে সাজাতাম যে ভিডিও দেখে মনে হত আমরা একই সঙ্গে নাচ করছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ধীরে ধীরে তেমন ভিডিও আপলোড করাও শুরু করি। ২০২১ সালে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের দিনই আমরা একটা রিল তৈরি করেছিলাম, 'প্রেমের জোয়ারে' গানটার সঙ্গে নাচ করে। হঠাৎ সেই রিলটা ভাইরাল হয়ে যায়। তারপর থেকেই মানুষের এত ভালবাসা পাচ্ছি।'


পায়েল আর দ্বৈপায়নের নাচ, সবটাই তো সাবেকি ঘরানার। নৃত্যশিল্পী বলছেন, 'বর্তমানে আমরা দেখি, বেশিরভাগ নৃত্যশিল্পীই পাশ্চাত্য নৃত্যের দিকে ঝুঁকছেন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা চেষ্টা করি, কীভাবে আমাদের ভারতীয় নৃত্যকলাকে আরও বেশি করে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা যায়। আমি ছোট থেকেই কত্থক শিখেছি। আমরা সাধারণত কোরিওগ্রাফিতে ভরতনাট্যম, ফোক বা কত্থকই রাখার চেষ্টা করি। এখন কলকাতা আর USA -তে মিলিয়ে মিশিয়ে থাকলেও নিয়মিত অনলাইন ক্লাস করাই। আমার অনেক বিদেশি ছাত্রছাত্রীরাও রয়েছেন। প্রত্যেককেই দেখেছি ভারতীয় নৃত্যকলায় আগ্রহ দেখাতে।'


দ্বৈপায়ন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে চাকুরি করেন। তার পাশাপাশি নাচ তাঁর প্যাশন। আর পায়েল? তিনি বলছেন, 'ছোট থেকেই আমার বাড়ির সবাই শুনছেন, 'মেয়ে তো, নাচ করে কী করবে? বিয়ের পড়ে তো ছেড়েই দিতে হবে'। বাবা-মা এইসবে কান দেননি। আর বিয়ের পড়ে নাচকে আরও জড়িয়ে ধরতে পেরেছি। এখন একটা প্রযোজনা সংস্থাও চালাই। দ্বৈপায়ন নাচের সঙ্গে সঙ্গে গানও লেখে। আমাদের সারাদিনই নাচের কথা, গানের কথা, চর্চা চলতেই থাকে। আর বর্তমানে যতটুকু পরিচিতি পেয়েছি, তাতে দ্বৈপায়ন আমায় যে সমর্থনটা করেছেন সেটা বলার নয়।'


আরও পড়ুন: Anupam-Prashmita: অনুপমের 'টার্কিস হলিডে', বিয়ের পরে প্রশ্মিতার সঙ্গে প্রথম সফর


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।