সিভি মাত্র দু’টো ছবি। টালিগঞ্জে তাতেই জোর চর্চা তাঁকে নিয়ে। তিনি কৌশানি। নায়িকাদের রাগাতে শুরু করেছেন। সরি নায়কদেরও। দেখা করলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়


সাক্ষাৎকারের আগেই বলেছিলেন সুইম স্যুটে তিনি স্বচ্ছন্দ নন। কিন্তু শ্যুটের জন্য নিজেই পরে ফেললেন হলুদ খোলামেলা শর্ট ফ্রক। ফোটোগ্রাফারের অনুরোধে শার্টের ফ্রন্ট বাটন খুলতে খুলতে বললেন—‘‘শ্যুটে প্রফেশনাল টাচটা খুব জরুরি। আমি সাহসী, সোজা কথা মুখের ওপর বলি, লুকটাও সেরকম হওয়া চাই’’।


 

সাহসী তো বুঝলাম। কিন্তু সোজাসুজি কথা বলেন এটা মেনে নিতে পারলাম না। ‘কেলোর কীর্তি’র শ্যুটে গিয়ে দেখলাম মিমি ও সায়ন্তিকার পাশে আপনি তো চুপচাপ!

আমি রির্জাভ নই। খুব টকেটিভ। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। দেখুন, ওরা সিনিয়র। নুসরত, মিমি, সায়ন্তিকা এরা একটা গ্রুপ। আমি ওদের থেকে অনেক ছোট। ওদের বন্ডিং অনেক স্ট্রং। কোনও দিন চাইনি ওদের মধ্যে হুট করে ঢুকে পড়তে।  তবে আউটডোরে থাকতে থাকতে বন্ডিং হয়েছে।

 

আপনাকে নিয়ে নাকি রাজ আর মিমির মধ্যে অশান্তি হয়েছিল?

না, আমি তো জানি না!

 

রাজ চক্রবর্তীকে জিজ্ঞেস না করে আপনি তো কিছুই করেন না। সদ্য যে ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট খুলেছেন সেটাও তো রাজ বলে দিয়েছেন!

রাজদা আর আমার সম্পর্ক খুব অন্য রকম। প্রথম ছবিতে আমার মধ্যে থেকে অ্যাক্টিংটা বের করেছে রাজদা। আজও যে কোনও প্রবলেমে পড়লে রাজদার অ্যাডভাইস নিই। অভিনয়ের খুঁতগুলো বলে দেয়। আর সামনে কোনও দিন প্রশংসা করে না। সবটাই পিছনে বলে। রাজদা আমার গডফাদার। এরকম একটা পিওর সম্পর্ককে কেউ যদি অন্য চোখে দেখে সেটা তার প্রবলেম! আমার না।

 

মিমির কোনও টেনশন আছে আপনাকে নিয়ে?

উফ্! এই হল আনন্দplus! এমন সব প্রশ্ন করে না! এই জন্যই আমি একটু দূরে থাকি বাবা!

আসল কথা হল কোয়েলদি আর মিমিদি আমার আইডল। কোয়েলদি মানুষ হিসেবে, আর মিমিদি কাজের জায়গা থেকে। মিমিদি কম সময়ে এত কাজ করে, নিজেকে একটা জায়গায় নিয়ে গেছে, প্রচুর ফ্যান ওর। ওর ক্যারিয়র গ্রাফটা ওপর দিকেই উঠছে। কীসের টেনশন?  ‘কেলোর কীর্তি’তে তো একসঙ্গে কাজ করলাম আমরা। দারুণ মজা হয়েছে পাটায়াতে।

 

‘কেলোর কীর্তি’, না ‘বাদশা দ্য ডন’ আপনি কাকে এক নম্বরে রাখবেন?

এই রে! আবার গণ্ডগোলের প্রশ্ন! এই উত্তরটা দিতেই হবে?

 

হ্যাঁ হবে...

‘সুলতান’ এক নম্বরে। আমি তো সলমন খানের অন্ধ ফ্যান। ‘কেলোর কীর্তি’র প্রোমোশনে অন ক্যামেরা বলেছিলাম ‘কেলোর কীর্তি’ দেখুন আর ‘সুলতান’। অফ ক্যামেরা যদি জানতে চান তো মুখ থেকে ‘সুলতান’ই বেরোবে। সলমন রাজি হলে, আমি ওকে বিয়েও করতে পারি।  সলমনের জন্য মরতেও রাজি!

 

আচ্ছা অঙ্কুশ, না বনি— আপনার আসল বয়ফ্রেন্ড কে? একটু বলবেন...

প্লিজ, একসঙ্গে ঘুরে বেড়ালে, গল্প করলেই কি বয়ফ্রেন্ড হয়ে যায়? দেখুন, আমাদের সব সিন হিরোর সঙ্গে হয়। শ্যুট হোক বা তার বাইরে ওদের সঙ্গেই তো থাকি সারাক্ষণ। দু’টো ইয়ং ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে সময় কাটালে  দূর থেকে লোকের মনে হতে পারে আমরা প্রেম করছি। বিশ্বাস করুন, আমাদের কিন্তু কোনও লাবি-ডাবি টক হয় না! সময় যতই বদলাক, গুড ফ্রেন্ড হলেও, লোকে অন্য চোখে দেখে। প্লিজ লিখবেন, আমি কিন্তু আজও সিঙ্গল।

 

আজ যদি বনি এসে লং ড্রাইভে যেতে বলে, আপনি যাবেন না?

(একটু ভেবে) হ্যাঁ যাব। এই তো কথা হচ্ছিল আমাদের। ও ওর কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছে। আমিও। সময় পেলে আমরা  লং ড্রাইভ, হ্যাং আউট এগুলো করব! তাতে কী? এখন ঝটপট সম্পর্ক, প্রেম, বিয়ে, এ সব হয় না আর। বনিকে খুব বিশ্বাস করি। বাকিটা সময় বলবে। শ্যুট হয়ে গেছে, তারপর কী করব? হয়তো বনিও আছে... তো তখন আমরা ডিস্কে যাব, ডিনার করব, এটাই তো স্বাভাবিক! এখন ‘কানেক্ট’ করাটাই আসল।

 

প্রোডিউসারদের সঙ্গে আপনার কানেক্টের থিয়োরিটা কী? ভাল চরিত্রের জন্য প্রোডিউসারদের সঙ্গে ডেট করতে পারেন?

জানেন, আমি খুব লাকি! ভেঙ্কটেশের মতো প্রো়ডাকশন হাউসকে প্রথম থেকে পাশে পেয়েছি। জানি বিপদে পড়লে ওরা আমায় বাঁচাবেন। তাই প্রো়ডিউসার আমার জীবনের ফাদার ফিগার হয়ে এসেছেন। এটা বিরাট পাওয়া। এখন কমার্শিয়াল ছবিতে চরিত্রটা কতটা ইম্পর্ট্যান্ট সেটা বুঝে কাজ করতে চাই।

 

শুধু কমার্শিয়াল ছবিতে থাকবেন?

না। খুব ইচ্ছে করে সৃজিতদার ছবিতে কাজ করতে। ওরকম মাপের একজন পরিচালক। স্ট্রিক্ট পরিবেশে কাজ করলে অনেক কিছু শিখতে পারব।

 

আপনাকে স্ট্রাগল করতে হয়নি। আপনার ফ্যামিলিও  ফিনানশিয়ালি সাউন্ড...

দাঁড়ান, একটা কথা বলি। আমি যে ব্রেক পেয়েছি সেটা আমার মতো অনেক মেয়েই পায়নি। আমার মতো অভিনেত্রী অনেক আছে। কিন্তু তারা শুধু স্বপ্ন দেখছে। আমি চাইনি অভিনেত্রী হতে। তবে হোর্ডিং, পোস্টার দেখে কখনও মনে হত যদি নায়িকা হতাম! পড়াশুনায় ভাল ছিলাম। এমবিএ করতে চেয়েছিলাম। ‘পারব না আমি ছাড়তে তোকে’-র পর আমি নতুন কৌশানিকে আবিষ্কার করলাম। ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আমি অনেক খারাপ কথা শুনেছি। কিন্তু আমার সঙ্গে খারাপ কিছু হয়নি।

 

আপনি কি মেকআপ ফ্রিক? সেদিন একটা চ্যানেলের অনুষ্ঠানে মেকআপ কিট চেয়ে বসলেন যে?

ও, হ্যাঁ। এখন মেকআপ করতে শিখছি। তাই একটা দারুণ মেকআপ কিট দেখে ওটাই চুজ করলাম। তবে আমি ন্যাচারালি বিউটিফুল, আমার মেকআপ করার দরকার হয় না।

 

একটু বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে গেল না?

না, মিনিমাম লেভেল অব কনফিডেন্স নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে হবে। আরে মুম্বইও  যেতে হবে তো।

 

কী করবেন মুম্বইয়ে?

আগে রণবীর সিংহকে মিট করব। যে আমাকে এটা করিয়ে দেবে সে যা চাইবে আমি তাই দেব! ওর কোনও ছবি মিস করি না। আর ওর জন্য দীপিকা পারফেক্ট। দীপিকার মতো আমারও একজন বয়ফ্রেন্ড হোক! যে তার গার্লফ্রেন্ডকে স্পেস দেয়, এত রেসপেক্ট করে।

 

বেশির ভাগ নায়িকারা প্রোডিউসার বিয়ে করছে, আপনার কী প্ল্যান?

নায়িকারা এখন সবাই চালাক। রানি মুখোপাধ্যায়কেই দেখুন না।

 

আপনি কাকে বাছবেন, হিরো না প্রোডিউসার?

আরে আপনি তো কালঘাম ছুটিয়ে দিচ্ছেন!

 

একটুও ঘাম হচ্ছে না তো! দারুণ লাগছে...

জোর করে, প্ল্যান করে, প্রেম হয় না। আমার কাছে ফিলিংস অনেক বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। কী জানি কখন ধাক্কা খাই, তাই প্রেমে পড়তে চাই না।

 

‘পারবো না আমি ছাড়তে তোকে’ তে তো সুইমস্যুট পরেছিলেন? ফটোশ্যুটে পরলেন না কেন?

দেখুন, দর্শকরা সকালে কাগজ খুলেই আমায় সুইম ওয়্যারে দেখবেন, এটা ঠিক নয়। ছবিতে কোনও একটা কনটেক্সট-এ এলে সেটা অন্য কথা। আমার কাছে ফ্যান-রা আগে, তারপর সব। চুমুর ক্ষেত্রেও তাই। এখন সিনেমায় টেকনিক্যালি চুমু খাওয়া যায়, কিন্তু সত্যি স্মুচিং সিন থাকলে একটু চাপ আছে।

 

কিন্তু সৃজিতের ছবিতে যদি স্মুচিং সিন থাকে?

ওরে বাব্বা, তা হলে শেষ হয়ে যাব! সময় চাই আরেকটু... ওখানে তো নিজেকে ঢেলে দিতে হবে। খুলে বেরিয়ে আসার জন্য সময় চাই...