কলকাতা:  ৮০-৯০ এর দশকের ছোটবেলার আবেগ। পুজোবার্ষিকীর উন্মাদনার সঙ্গেই মিশে আছে ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পান্ডব গোয়েন্দা’র নস্টালজিয়া। মা দুগ্গা তাঁর  চার সন্তানকে নিয়ে ধরাধামে আসার আগেই পুজো সংখ্যার পাতায় পোষ্য পঞ্চুকে নিয়ে হাজির হত বাবলু, বিলু, ভোম্বল, বাচ্চু আর বিচ্চুর গোয়েন্দা দল - পাণ্ডব গোয়েন্দা। শিগগিরি এই সিরিজ টেলিভিশনের পর্দায় ধারাবাহিক হিসেবে আসতে চলেছে। সম্প্রতি মুক্তি পেল তারই ট্রেলার। আর তাই নিয়েই মাথাচাড়া দিয়েছে যাবতীয় বিতর্ক।
কিশোর বাবলু-বিলুর জায়গায় এতো তরুণ পাণ্ডব গোয়েন্দা। এখানেই চমকের শেষ নয়, ট্রেলারে একটি প্রেমের গান ও বাবলুর প্রতি বাচ্চুর আড়চোখ চাহুনি দেখে কপালে চোখ উঠেছে অনেক দর্শকের। পাণ্ডব গোয়েন্দার মধ্যে আবার প্রেম এল কোত্থেকে? প্রশ্ন তুলেছেন দর্শক। সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে গেছে মিমে। এবার কি তাহলে 'পাণ্ডব গোয়েন্দা'তেও দেখা যাবে সাংসারিক কূটকাচালি? প্রশ্ন অনেকের।



 এই বিষয়ে যাবতীয় বিতর্কের নিরসন করে প্রযোজক জানিয়ে দেন, তাঁরও বেড়ে ওঠা পাণ্ডব গোয়েন্দা পড়েই। তাই সেই আবেগের সঙ্গে ছিনিমিনি করার প্রশ্নই ওঠে না। বাবলু-বিলুদের বয়স বেড়ে যাওয়া নিয়ে যুক্তি, 'একটা বাচ্চা ছেলের হাতে বন্দুক ধরাবো কী করে? আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী ২১ বছর বয়স হওয়ার আগে তো কেউ বন্দুক রাখতে পারেন না। তাহলে বাবলুর হাতে বন্দুক থাকবে কীভাবে? তাছাড়া ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় দশকের পর দশক ধরে পাণ্ডব গোয়েন্দা লিখেছেন। সেখানে তারা আস্তে আস্তে বড় হয়েছে। টেলিভিশন ধারাবাহিকে তো সেই সুযোগ নেই। '



এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, পাণ্ডব গোয়েন্দায় পঞ্চু কেন অ্যানিমেটেড ক্যারেক্টার? প্রযোজক জানান, তিনি নিজে একজন পশুপ্রেমী হয়ে কিছুতেই একটি কুকুরকে রোজ-রোজ শুটিংয়ে পরিশ্রম করাতে পারেন না। তিনি দেখেছেন এই পরিস্থিতিতে কুকুররা কতটা কষ্ট পায়।

শুরু হয়ে গিয়েছে পাণ্ডব গোয়েন্দার শ্যুটিং। করোনা পরিস্থিতিতে নানা বিধি মেনে অনেক কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করতে হচ্ছে। বাবলুর ভূমিকায় অভিনয় করছেন রব দে, বিলুর হচ্ছেন ঋষভ চক্রবর্তী, ভোম্বলের চরিত্রে ময়ূখ চ্যাটার্জি। বাচ্চুর ভূমিকায় অনুমিতা দত্ত এবং বিচ্চুর ভূমিকায় শ্রীতমা মিত্র অভিনয় করছেন।



লেখক ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি ধারাবাহিকটির বিষয়ে আশাবাদী। ট্রেলার দেখে অনেক বিষয়ে বিতর্ক হচ্ছে ঠিকই, তবে যতক্ষণ না এপিসোড দেখছেন, ততক্ষণ তিনি বিরূপ মন্তব্য করবেন না। মানুষই শেষমেষ বলবে, কাজ ভাল হল কি না।

তাবলে কী আমূল বদলে যাবে পাণ্ডব গোয়েন্দার গল্প? সেখানে চলে আসবে বাবলু-বাচ্চুর প্রেম! এই নিয়ে তো সোশ্যাল মিডিয়ায় চর্চা কম হয়নি।  জানা গেল, "বাবলুর সঙ্গে বাচ্চুর প্রেম, এটা গল্পেও নেই  যেমন, সিরিয়ালেও থাকবে না। পাণ্ডব গোয়েন্দার বাচ্চু তার 'বাবলুদা'র প্রতি একটু 'পোজেসিভ' ঠিকই, কিন্তু সেখানে প্রেম আসবে না। তাই তো বুদ্ধি করেই ব্যবহার করা হয়েছে 'পরিণীতা' ছবির 'প্রাণ দিতে চাই , মন দিতে চাই' গানটি, যেখানে একতরফা ভাললাগার বিষয়ই আছে। বাবলুর জীবনে প্রেমও আসবে...'প্রেমিকা গোকূলে বাড়ছে'। কিন্তু সেটা বাচ্চু কোনও ভাবেই নয়।"

ধারাবাহিক তৈরির খাতিরে একটা নির্দিষ্ট ছকে গল্পটা বাঁধতেই হয়। তার একটা বৃহত্তর অ্যাঙ্গেল থাকবেই। মূল ঘটনা এক রেখে আনুষঙ্গিক পরিবর্তন তো আসবেই। মাথায় রাখতে হবে রাত ১০টার সময় তো শুধু ছোটরা নয়, পরিবারের সকলে মিলেই টিভি দেখবেন। তাই ধারাবাহিকটি সবারই মনোগ্রাহী করে তুলতে হবে। মত নির্মাতাদের।