কলকাতা: লুক সেট করে তাড়াহুড়ো করে চলে গিয়েছিলেন অন্য কাজে। মনিটারের দিকে নজর দেওয়ার সময়ই হয়নি। রাতে ফিরে দেখলেন, মোবাইলে লুক সেট-এর ছবি পাঠিয়েছেন পরিচালক, সঙ্গে লেখা, 'একটু বড় স্ক্রিনে দেখো'। টিভিতে দেখতে বসলেন। প্রথমটা বিশ্বাস হল না। মোবাইল নিয়ে গেলেন স্ত্রীর কাছে। ছবিটা দেখিয়ে বললেন, 'চিনতে পারছো'? একঝলক দেখে মুখ ঘুরিয়ে স্ত্রী বললেন, 'এই ছবি তো বহুবার দেখেছি। ইন্টারনেটে। নতুন কী দেখব! তারপরেই চমক। স্বামীর কথা শুনে হাত থেকে ফোন নিয়ে ভালো করে দেখলেন নবনীতা। অবিকল সত্যজিৎ রায়। মোবাইল নামিয়ে দেখলেন, সামনে দাঁড়িয়ে হাসছেন তিনি। জিতু কমল। অনীক দত্তর 'অপরাজিত'-র সত্যজিৎ রায়। 


মুক্তি পাওয়ার পরেই বেশ জনপ্রিয় হয়েছে সত্যজিৎ রায় হিসেবে জিতু কমলেন লুক। এই জনপ্রিয়তা আর প্রত্যাশা কী চাপ বাড়াচ্ছে? জিতু বলছেন, 'আমি প্রথমে কিছুই জানতাম না। শরীর খারাপ ছিল তাই গলাকে বিশ্রাম দিতে ফোন বন্ধ করে রেখেছিলাম। জানতাম ছবি প্রকাশ পাবে, কিন্তু একটা জনপ্রিয় হয়ে যাবে ভাবিনি। রাতে মোবাইল খুলে প্রথমেই পরিচালককে মেসেজ করেছিলাম।' এর আগে ছোটপর্দা, বড়পর্দা ও নাটকের মঞ্চে অভিনয় করেছেন জিতু। কিন্তু এই ধরণের চরিত্র অবশ্যই প্রথম। অফার পেয়ে কেমন লেগেছিল? পর্দার সত্যজিৎ বলছেন, 'আমার জীবনে সব সুযোগই এসেছে এমন অপ্রত্যাশিতভাবে। নাটকের মঞ্চের হাত ধরে আমার অভিনয়ে আসা। সেখানেও একটা বড় চরিত্রের সুযোগ পেয়েছিলাম এমনই অকস্মাৎ। কাবুলিওয়ালা নাটক মঞ্চস্থ হবে। হঠাৎ রহমত-এর চরিত্র যে করবে, সে অসুস্থ হয়ে পড়ল। ওই প্রমপ্ট করতাম ওর চরিত্রটা তাই মুখস্থ ছিল। আমায় মঞ্চে নামিয়ে দেওয়া হল। প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করলাম, তাও এমন হঠাৎ করে। 


নাটকের মঞ্চ থেকে অভিনয় শুরু, অনেক পুরনো দিনের চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন জিতুু। বলছেন, ফাল্গুনীদার নাটকে দলে গোরা নাটকে অভিনয় করতাম। পুরনো দিনের গোটা গোটা বাংলা বলার ধরনটা সেখান থেকেই শেখা।' এখনও সেটা কাজে লাগছে.. বলেই এক লাইন ছবির সংলাপ আওড়ালেন জিতু, বাচনভঙ্গি আর গলায় সত্যজিতের ছোঁয়া।


 'এম এস ধোনি-দ্য আনটোল্ড স্টোরি'-তে অভিনয় করার পর, সুশান্ত সিং রাজপুতের জীবনের বাকি সমস্ত কাজকে তুলনা করা হয়েছিল ওই ছবির সঙ্গে। সত্যজিৎ রায় হিসাবে পর্দায় জনপ্রিয়তা পেলে জিতুর ক্ষেত্রেও কী সেই পরিস্থিতি হতে পারে? একটু হেসে অভিনেতা বললেন, 'জীবনে প্রথম পর্দায় অভিনয় শুরু করে একটা ৪৭ বছরের লোকের চরিত্র দিয়ে। ছোটপর্দায়। তখন আমায় বয়স বড়জোর ২৫। সেসময় সবাই বলেছিল, বয়স্ক চরিত্রে টাইপকাস্ট হয়ে যাব। তারপর আরও বিভিন্ন চরিত্র পেয়েছি। আমার মনে হয় সবটাই নির্ভর করে চিত্রনাট্যের অফার পাওয়ার ওপর।'


কিংবদন্তির চরিত্র, কেমন প্রস্তুতি নিচ্ছেন জিতু? অভিনেতা বললেন, 'রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। চিত্রনাট্য ওল্টাচ্ছি আর দেখছি, কোন সিন আমায় ছাড়া নেই। সবেতেই আমি। সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে, নিজের মত করে চরিত্র বা তার চালচলন ইমপ্রোভাইজেসন করতে পারব না। বাঙালির আবেগ জুড়ে রয়েছে এই মানুষটার সঙ্গে। প্রতি মুহূর্তে বাঙালির অনুভূতি, আশার কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হচ্ছে। একা একা কথা বলছি, রাস্তায় কথা বলতে বলতে হাঁটছি.. পাগলের মত।'


পরিচালক অনীক দত্তের সঙ্গে প্রথম কাজ। জিতু বলছেন, 'আমায় সত্যজিৎ রায় করে তোলার জন্য পরিচালক অনবরত খাটছেন। খুঁটিনাটি সবকিছু শিখিয়ে দিচ্ছেন, শুধরে দিচ্ছেন বারবার। ওনার মুখ আর মনের ফারাক নেই। নতুন বা পুরনো, ভালো কাজ করলে উনি ভালো বলতে জানেন।' ছবিতে বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারের দৃশ্য রয়েছে। সেই দৃশ্যে জিতুর সাক্ষাৎকার নেবেনশমীক বন্দ্যোপাধ্যায় । বাস্তব জীবনে তিনিই সত্যজিৎ রায়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বহুবার। খবরটা পরিচালকের মুখে শুনে আল্পুত হয়েছিলেন জিতুও। 


এই ছবির প্রধান ভূমিকায় আবীর চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় করার কথা ছিল। সূত্রের খবর, ডেট নিয়ে কিছু সমস্যা হওয়ার জন্যই প্রধান চরিতিরে দেখা যাবে জিতুকে। অভিনেতা বলছেন, 'আবীরদা আমার সিনিয়ার আর টলিউডের একজন অন্যতম ভালো অভিনেতা। উনি অভিনয় করলে উনিও হয়তো ভালো করতেন। ওনার মা-বাবার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আমি নিজের ১০০ শতাংশ দিয়ে এই চরিত্রে নিজের সেরা অভিনয়টা দেওয়ার চেষ্টা করব।'