মুম্বই: প্রয়াত হলেন বলিউডের বিখ্যাত গীতিকার যোগেশ গৌর। লতা মঙ্গেশকর গতকাল ট্যুইট করে যোগেশের প্রয়ানের কথা জানিয়েছিলেন। হিন্দি সিনেমার অন্যতম সেরা গীতিকার যোগেশ। শান্ত স্বভাবের জন্য পরিচিত যোগেশের সঙ্গে সঙ্গীতকার সলিল চৌধুরীর যুগলবন্দিতে তৈরি হয়েছিল একটার পর একটা জনপ্রিয় গান। হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের 'আনন্দ' সিনেমার 'কহিঁ দূর যব দিন ঢল যায়ে'-সেই গানগুলির মধ্যে অন্যতম। তবে সংশ্লিষ্ট মহলে অনেকেরই আক্ষেপ, বলিউডে যোগেশ তাঁর প্রাপ্য পেলেন না।
বাসু চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাধিক সিনেমায় কাজ করেছেন যোগেশ। লিখেছেন বাসু চট্টোপাধ্যায়ের সিনেমার গান। 'রজণীগন্ধা', 'ছোটিসি বাত', 'মঞ্জিল', 'পসন্দ আপনা আপনা', 'বাতোঁ বাতোঁ মে', 'প্রিয়তম', 'উস পার','লাখোঁ মে এক', 'অপনে পরায়ে', 'শৌকিন', 'জিনা ইঁয়া'-র মতো ছবির জন্য যোগেশের কলম থেকে এসেছে একটার পর একটা কালজয়ী গান।
যোগেশের কবিতার কথা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেছেন লতা মঙ্গেশকর। তিনি বলেছেন, আমার ভালো লাগার বেশ কিছু গান লিখেছেন যোগেশজী। তিনি এমনই এক নীরব প্রতিভা। সাধারণ কথোপকথন থেকে তাঁর শব্দচয়ন, তবুও তা কাব্যিক হয়ে উঠত। 'রজণীগন্ধা' ও 'ছোটি সি বাত'সিনেমায় আমার 'রজণীগন্ধা ফুল তুমহারে' ও 'না জানে কিঁউ হোতা হ্যায় ইয়ুঁ জিন্দেগি কে সাথ'-এর মতো গান আজও জনপ্রিয়। এছাড়াও 'অন্নদাতা'-য় 'রাতোঁ কে সায়ে ঘনে', 'আনোখা দান'-এ 'মধভরি ইয়ে হাওয়ায়েঁ', 'উস পার'-এর 'তুমনে দিয়া পিয়া সব কুছ মুঝকো পানি প্রীত দায়াকে'-র মতো গান তিনি আমার জন্য লিখেছিলেন। আমার কাছে এই গানগুলি অপূর্ব। যোগেশজীর লেখা আমার পছন্দের গান 'কাঁহি দূর যব দিন ঢল যায়ে' (মুকেশের গাওয়া)।

হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের মিলি সিনেমা যোগেশের লেখা দুটটি গান এখনও শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। 'বড়ি সুনি সুনি হ্যায় জিন্দেগি' ও 'আয়ে তুম ইয়াদ মুঝে 'যোগেশের প্রতিভার প্রতিফলন।
'আনন্দ' সিনেমায় 'জিন্দেগি ক্যায়সি হ্যায় পহেলি' গান শুরুতে ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে থাকার কথা ছিল। কিন্তু রাজেশ খান্না এই সিনেমায় রাখতে বলেন। তিনি বলেন, ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্যবহার করলে তা এত সুন্দর একটা গানকে নষ্ট করারই সামিল হবে। আর রাজেশ খান্নাই যে সঠিক ছিলেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

অনেকেই মনে করেন, যোগেশের লেখা সেরা গানগুলিতে কণ্ঠ দিয়েছেন মুকেশ। প্রয়াত শিল্পীর ছেলে নীতীন মুকেশ স্বাভাবিকভাবে যোগেশের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তাঁর প্রয়াণ একটা বড় ক্ষতি। যোগেশজী ছিলেন নিপাট ভদ্রলোক ও মৃদুভাষী। আর কী দু্রন্ত শিল্পী ছিলেন তিনি! আমি এই প্রসঙ্গে বাবার তিনটি গানের কথা বলব, যেগুলিতে কথা গানগুলির সৌন্দর্যে ভিন্ন মাত্রা জুড়ে দিয়েছিল। এই গানগুলি হল, 'কাহিঁ দূর যব', ছোটি সি বাত-এর 'কই বার ইয়ুহি দেখা হ্যায় ইয়ে জো মন কি সীমা-রেখা' ও অন্নদাতা-র 'নইন হমারে সাঁঝ সাকারে'।
তাঁর বাবার যোগেশজীর প্রতি শ্রদ্ধার কথা জানিয়েছেন নীতীন মুকেশ। যোগেশজীর লেখা গান গাইতে মুকেশ ভালোবাসতেন।
জাভেদ আখতা প্রয়াত গীতিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ট্যুইটের আক্ষেপ করেছেন, এই ব্যক্তিক্রমী গীতিকার বলিউডে তাঁর প্রাপ্য কদর পেলেন না।