মুম্বই: তিনি একাধারে গায়ক, অভিনেতা, পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালক, লেখক। তিনি একাই একশো। দর্শকদের মনোরঞ্জন করার জন্য় যা যা প্রয়োজন সবরকম গুণেরই যেন এক অঙ্গে সমাহার। তিনি আর কেউ নন, কিশোর কুমার। আজ, ৪ অগাস্ট, তাঁর ৯২ তম জন্মদিন। 


কিশোর কুমারের নাম শোনেননি এমন ভারতবাসী নেই বললেই চলে। তাঁর অনন্য ব্যক্তিত্ব জন্য তিনি বহুলোকের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন। ১৯২৯ সালে মধ্যপ্রদেশের খাণ্ডওয়াতে জন্মগ্রহণ করেন 'দ্য লেজেন্ড' কিশোর কুমার। আসল নাম আভাস কুমার গাঙ্গুলী। 


হিন্দি সিনেমা জগতের এক উজ্জ্বল উদাহরণ ছিলেন কিশোর কুমার। রোম্যান্টিক গান হোক বা রক অ্যান্ড রোল বা কমেডি চরিত্রে অভিনয়, যে কোনও ক্ষেত্রেই তাঁর জুড়ি মেলা ভার। 'মেরে স্বপ্নো কী রানি', 'ইয়ে শাম মস্তানি', 'রূপ তেরা মস্তানা', 'মেরি ভিগি ভিগি সি', 'চিঙ্গারি কোই ভড়কে', একের পর এক চির সবুজ হিট গানে আজ সিনেপ্রেমীরা মজতে ভালবাসেন। স্বভাবতই যে কোনও পরিচালক বা প্রযোজকই তাঁকে নিজেদের সিনেমায় নিতে চাইতেন। 


জন্মসূত্রে নাম আভাস কুমার গাঙ্গুলী হলেও কাজের ক্ষেত্রে তিনি কিশোর কুমার নামটাই বেশি ব্যবহার করতেন। শুধু মজার বা নাচের গান নয়, বিভিন্ন রোম্যান্টিক গানেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। অথচ শুনলে অবাক হতে পারেন, তিনি কোনওদিন কোনও ভোকাল ট্রেনিং নেননি। 


কিশোর কুমারের জীবনের সঙ্গে ৪ নম্বরটি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁর জন্মদিন ৪ অগাস্ট। তিনি চার ভাই-বোনের সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন, অর্থাৎ চতুর্থ সন্তান। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন চারবার। এমনকী চলচ্চিত্র জীবনে ঠিক চারটি বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন। 


শুধু পুরুষ কণ্ঠেই নয়, কিশোর কুমার মহিলা কণ্ঠেও গান গেয়েছেন। 'আকে সিধি লগি দিল পে' গানটির মহিলা কণ্ঠে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কিশোর কুমারই গান। ইন্দোরে কলেজ জীবনে ক্যান্টিনে ধার করেছিলেন। সেই থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে তৈরি করেছিলেন তাঁর অপর এক বিখ্যাত গান 'পাঁচ রুপইয়া বারা আনা'। এছাড়াও কিশোর কুমারের ইউডলিং মন কেড়েছিল আম জনতার। জিমি রজার্স ও টেক্স মর্টনের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইউডলিং শেখেন তিনি। 


মাত্র ৫৮ বছরের জীবনে আঠারোটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁকে মধ্যপ্রদেশ সরকার লতা মঙ্গেশকর পুরস্কারে সম্মানিত করে। কিশোর কুমারের নামে হিন্দি চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য কিশোর কুমার পুরস্কার প্রদান শুরু হয়। 


১৯৮৭ সালে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সকলের প্রিয় কিশোর কুমার। তবে তিনি আজও সিনেপ্রেমীদের কাছে একইভাবে প্রাসঙ্গিক। তাঁর অনন্য সৃষ্টির মাধ্যমে আজও তিনি বেঁচে আছেন আট থেকে আশি, সকলের মনে।