কলকাতা: তাঁর ঢাল ছিল লেখনি আর তলোয়ার ছিল ক্যামেরা। সাধারণ দৃশ্যকেও অসাধারণভাবে দর্শকদের সামনে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন তিনি। তবে সেই সময়ে দাঁড়িয়ে সিনেমা তৈরি মোটেই সহজ ছিল না। ক্যামেরা থেকে শুরু করে প্রযুক্তি.. সবই পিছিয়ে ছিল বেশ অনেকটাই। বিশেষ করে পশুপাখিদের নিয়ে শ্যুট করাটা সেই সময়ে ছিল বেশ চ্যালঞ্জিং। আর সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Roy) ছবিতে পশুপাখি নিয়ে শ্যুটিং বলতে প্রথমেই যে দৃশ্যের কথা মনে পড়ে, তা হল 'হীরক রাজার দেশে' (Hirok Rajar Deshe) ছবির গুপি-বাঘার রাজকোষ লুঠের দৃশ্য। ছবিতে দেখানো হয়েছে, বাঘ শান্ত হয়েছিল গুপি-বাঘার গানে। কিন্তু বাস্তবের ছবিটা আদৌ এইরকম? সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিনে, জেনে নেওয়া তাঁর শ্যুটিংয়ের অজানা ঘটনা, অজানা গল্প।
'হীরক রাজার দেশে'-র শ্যুটিংয়ের জন্য যে বাঘ লাগবে, তাকে আনার পরিকল্পনা হয়েছিল মাদ্রাজ থেকে। সেই কারণে বিস্তর খরচ-খরচা করে, বাঘ সমেত আনানো হয়েছিল একটা গোটা টিম। দিনের পর দিন নাকি সেই বাঘকে টেপ রেকর্ডারে শোনানো হত.. 'পায়ে পড়ি বাঘমামা'। শ্যুটিংয়ের সময় বাঘ যাতে সেই গান শুনে চুপ থাকে, তাই এই ব্যবস্থা। তবে শ্যুটিংয়ের দিন দুয়েক আগে, দলবল নিয়ে সেই বাঘকে দেখতে গিয়েই মাথায় হাত পরিচালকের। কোথায় হীরকরাজ্যের রাজকোষ রক্ষা করার মতো পেল্লায়, লড়াকু বাঘ! এই বাঘ বয়স্ক, লোম ওঠা, ভাল করে নড়াচড়াও করতে পারে না। ফের শুরু হল নতুন বাঘ খোঁজা।
শেষ মুহূর্তে নতুন বাঘ পাওয়া গেল বলে, তবে সে নাকি আবার লড়াকু। মুম্বইয়ের বড় বড় নায়কদের সঙ্গে লড়াই করে অভ্যস্ত। বাঘকে কেবল বসিয়ে রাখা হবে শুনে প্রথমটা রাজিই হচ্ছিলেন না তার ট্রেনার। পরে তাচ্ছিল্য ভরে বাঘের সঙ্গে আর নিজে গেলেনই না। পাঠিয়ে দিলেন তাঁর স্ত্রীকে। শ্যুটিং শুরু হল বটে, কিন্তু দীর্ঘক্ষণের শট, আলোর গরম, বদ্ধ রাজকোষে বাঘ ঘামতে শুরু করল। ট্রেনারের কথায় তাকে বারে বারে বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল হাওয়া খাওয়াতে।
'হীরক রাজার দেশে' -তে আমরা যে বাঘকে দেখি, সে আসলে বাঘ নয়, বাঘিনী। নাম ঊমা। নিয়ম ছিল, যেই বাঘের কাছে যাবে, তাকে ঊমা ঊমা বলতে বলতে যেতে হবে। এতে বাঘের মনে হবে, চেনা মানুষ কাছে আসছে। তাই সে কিছু করবে না। বাঘা ওরফে রবি ঘোষের সেই বাঘকে ডিঙিয়ে চাবি নেওয়ার শট তিনি পার করেছিলেন এই ঊমা ঊমা বলেই। ট্রেনারের অবশ্য তাতে মত ছিল, বাঘাকে বাঘের বেশ পছন্দই হয়েছে। শ্যুটিংয়ের শেষের দিকে বাঘ একটু অধৈর্য্য হয়ে পড়লেও শেষমেষ দিনটা কেটেছিল নির্বিঘ্নেই।
তথ্যসূত্র: 'একেই বলে শ্যুটিং'
লেখক: সত্যজিৎ রায়
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।