কলকাতা: গত দুই বছর ধরে কার্যত গৃহবন্দি জনজীবন। করোনার ধাক্কা (Coronavirus) সামলে খানিক স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা হলেও ফের জাঁকিয়ে বসছে আতঙ্ক, সঙ্গে দোসর ওমিক্রন (Omicron)। এমন অবস্থায় নতুন বছরে প্রবেশ করেও কেউই যেন প্রাণখুলে আনন্দ করতে পারছেন না। কথায়বার্তায় ঘুরে ফিরে আসছে করোনা আতঙ্কের কথা। টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর (Koneenica Banerjee) গলায়ও দুশ্চিন্তার সুর, কথা বললেন এবিপি লাইভ-এর সঙ্গে।


তবুও নতুন বছরে রেজলিউশন (New Year Resolution) তো থাকে। কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে এবার সেটা কী? 'এই অতিমারীর বছরগুলো অনেক কিছু শিখিয়ে গেছে। এই দুই বছর কাটানোর পর তাই আমার একমাত্র রেজলিউশন যে আমার কাছের মানুষগুলোর সঙ্গে ভাল করে সময় কাটাতে চাই। শেষ দুই বছরে এত মানুষকে চলে যেতে দেখেছি, যেগুলো এখনও বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি। ফলে আমার ভালবাসার মানুষদের সঙ্গে কাটাতে চাই।'


নতুন বছরটিকে কীভাবে দেখতে চান অভিনেত্রী? 'স্বপ্ন হল অতিমারী হীন একটা পৃথিবী। কিন্তু সেটা তো আগামী দশ বছরে হবে বলে মনে হচ্ছে না। প্রত্যেক বছরই নতুন নতুন নাম নিয়ে ফিরে ফিরে আসছে। তাই এই বছরে আমি দেখতে চাই প্রত্যেকটা মানুষের খাবারটা যেন জুটে যায়। সেটা কীভাবে সম্ভব জানি না এই পরিস্থিতিতে। হয়তো বেশিই চেয়ে ফেলছি। কিন্তু কামনা করি যেন প্রত্যেকে কাজ করে নিজেদের জীবন সচল রাখতে পারি।'


কনীনিকার কথায়, 'এই অতিমারীর বছরগুলো যেহেতু আমরা দেখে নিয়েছি, এবার যদি ভাল-সুস্থ বছরও আসে, তাহলেও যেন এই শিক্ষাগুলো ভুলে না যাই। জানি না ভবিষ্যৎ কী হবে। আমরা যেন জিনিসের মূল্য দিতে শিখি।'


অভিনেত্রী ঘুরতে যেতে ভীষণ ভালবাসেন। কিন্তু করোনা আবহে তা একপ্রকার প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কনীনিকার গলায় আক্ষেপ, 'আমি ট্র্যাভেল করতে খুব ভালবাসি। সেটা একদমই বন্ধ হয়ে গেছে। এই বছরও মনে হচ্ছে যা পরিস্থিতি তাতে সম্ভব হবে না। আমার মেয়ে কিয়া এখনও ছোট। ওদের ভ্যাকসিনও বেরোয়নি। ফলে আমার একটা ভয় সারাক্ষণ কাজ করে। আমার যেখানে একটা ছুটিও বাদ যেত না, বেড়াতে চলে যেতাম, সেই ব্যাপারটা ভীষণ মিস করি। সারাক্ষণ তাই পুরনো ঘুরতে যাওয়ার ছবি দেখি।' সম্প্রতি পুজোর সময়ে পরিস্থিতি খানিক ভাল হতে সপরিবারে ঘুরতে গেছিলেন অভিনেত্রী। অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, 'ওটা ভাল ঘুরেছি। আমরা গোয়া গিয়েছিলাম, সেখান থেকে কাশ্মীর যাই। কিন্তু ওই বিদেশ যাওয়া, বিভিন্ন ঐতিহাসিক জায়গা ঘুরে দেখা সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। পরপর তিনবার আমি নরওয়ে গিয়েছি। আমি পোল্যান্ড ঘুরেছি, ব্রাজিল গিয়েছি। বিভিন্ন দেশের সাহিত্য, ইতিহাস, মানুষজন, খাওয়াদাওয়া আমাকে খুব টানে। কিন্তু চাইলেও সেই সমস্ত ট্রিপ আর করতে পারছি না।'


সমস্ত পরিস্থিতি যদি আবার স্বাভাবিক হয়ে যায় তাহলে প্রথম কোথায় ঘুরতে যেতে চান অভিনেত্রী? 'প্রথমেই যাব থাইল্যান্ড। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য জায়গার প্ল্যান করা হবে। আসলে কোন জায়গা এখন নিরাপদ বোঝা যাচ্ছে না তো, তার ওপর আমার মেয়েটা একেবারে ছোট।'


কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়েও ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে  টলিউড। একে একে ঘোষিত হয়েছে একাধিক ছবির নাম। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে 'টনিক'। সিনেপ্রেমী বাঙালি হলমুখী  করেছে এই ছবি। সেই ছবিতে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা গেছে কনীনিকাকে। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্রবধূর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। ২০২২ সালে কাজের চাপ কেমন? 'টনিকের সাফল্যের সঙ্গে ধারাবাহিকের কাজ চলছে। এছাড়া বেশ কিছু ছবি মুক্তি পাবে। 'মায়া', 'সাইকো' ছবির মুক্তি অপেক্ষায়। সৌকর্য ঘোষালের সঙ্গে কাজ করেছি।'


কিন্তু পরিস্থিতি ফের খারাপের দিকেই যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ওমিক্রন আতঙ্কের মাঝে নিষেধাজ্ঞা জারি হতে শুরু করে দিয়েছে। ফের একই অবস্থা এ রাজ্যে হওয়ার আশঙ্কা আছে? 'টনিক হিট করেছে শুনে ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। যখন সবাই ফের হলে যেতে শুরু করছে তখনই আশঙ্কার মেঘ। আমি জানি না ভবিষ্যৎ কী!'


সব ঠিক হতে হতেও ফের অবস্থা হাতের বাইরে যাচ্ছে দেখে বাকী সকলের মতোই আশঙ্কায় কনীনিকা। নতুন বছরে কাছের মানুষকে জড়িয়েই তাই কাটিয়ে দিতে চান কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। হারাতে চান না আর কাউকেই।