কৃষ্ণেন্দু অধিকারী,নয়ে  কলকাতা: তিন দশক আগে, বাম জমানায় নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয়ের সহকারী পরীক্ষা নিয়ামক মনীষা মুখোপাধ্য়ায়ের অন্তর্ধান রহস্য়ই এবার ফুটে উঠবে রুপোলি  পর্দায়। অরিন্দম শীলের পরিচালনায় এই সিনেমায় অভিনয় করছেন কুণাল ঘোষ। পুলিশ অফিসারের চরিত্রে দেখা যাবে ব্রাত্য় বসুকে। 

তিনি ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয়ের সহকারী পরীক্ষা নিয়ামক। তৎকালীন শাসকদল বামফ্রন্টের শীর্ষনেতাদের অত্য়ন্ত ঘনিষ্ঠ। ১৯৯৭ সালে, আচমকা চোখের আড়াল হয়ে যান সেই জলজ্য়ান্ত মানুষটা! সেই অন্তর্ধান রহস্য়ের ছায়া অবলম্বনে এবার তৈরি হচ্ছে ছবি। যেখানে ডেবিউ হচ্ছে কুণাল ঘোষের। নেতা এবার অভিনেতা। ক্য়ামিও নয়। একেবারে অন্য়তম প্রধান চরিত্রে। এই ছবি নিয়ে কুণাল ঘোষ বলছেন, 'এটা আমার প্রথম সিনেমা। এর সঙ্গে রাজনীতিকে মেশাতে চাই না। এর সঙ্গে প্রচুর তথ্য় আছে।'

১৯৯৭-এর ৩ সেপ্টেম্বর। পশ্চিমবঙ্গে তখন বাম সরকার। হঠাৎ করেই একদিন নিখোঁজ হয়ে যান, মনীষা মুখোপাধ্য়ায়। সকাল ৯টায় ভবানীপুর থেকে ট্য়াক্সিতে উঠেছিলেন। তারপর আর তাঁর কোনও খোঁজ মেলেনি। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মনীষা মুখোপাধ্য়ায় রাজ্য় সিপিএমের এমন একটি শাখার সদস্য় ছিলেন, যাঁর দায়িত্বে ছিলেন অনিল বিশ্বাস। মণীষা মুখোপাধ্য়ায়ের অন্তর্ধান রহস্য় তৎকালীন রাজ্য় রাজনীতিতে ঝড় ফেলে। শোনা যায়, তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রচুর ফাঁকা মার্কশিট। যার সূত্র ধরে উঠে আসে শিক্ষা দুর্নীতি, টাকার লেনদেন প্রসঙ্গও। 

তাৎপর্যপূর্ণভাবে বর্তমানে যখন শিক্ষা দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য় রাজনীতি উত্তাল, তৃণমূল সরকার প্রশ্নের মুখে, তখন বাম জমানার এমন একটা ঘটনা নিয়ে ছবি তৈরি হচ্ছে, যা সেই সময় শিক্ষা দুর্নীতির অভিযোগ উস্কে দিয়েছিল। দীপান্বিতা রায়ের লেখা উপন্য়াসের ভিত্তিতে এই ছবি তৈরি করছেন পরিচালক অরিন্দম শীল। ছবির পরিচালক অরিন্দম শীল বলছেন, 'একটা সময়কে ধরা হয়েছে। চরিত্র ও ঘটনা সবই কাল্পনিক। কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয় দেখানো হবে। তাঁর বাড়ি থেকে মার্কশিট পাওয়া গেছিল, এটা সত্য়ি। সম্পূর্ণ পলিটিকাল থ্রিলার। এর সঙ্গে শিক্ষা দুর্নীতি জড়িয়ে। সেটাকে ঘিরে কী ঘটছে। অন্তর্ধানের পিছনে রাজনীতি আছে, সেটা দেখানো হবে।'

ছবির নাম কর্পূর। মুখ্য় চরিত্রে অভিনয় করছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ছবিতে তৎকালীন শাসক দলের নাম নবজাগরণ পার্টি। সেই দলেরই রাজ্য সম্পাদকের চরিত্রে অভিনয় করছেন, তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক।

মনীষা মুখোপাধ্য়ায়ের খোঁজে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে লালবাজার... মহাকরণ... দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলেন তাঁর মা.. কিন্তু কোনও খোঁজ দিতে পারেনি পুলিশ। অন্তর্ধান রহস্য়ের কিনারা হয়নি। এই ছবিতে কলকাতা পুলিশের হোমিসাইডের গোয়েন্দার চরিত্রে অভিনয় করছেন নাট্য়কার এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য় বসু। তিনি এই ছবি নিয়ে বলছেন, 'কোন জমানা, কে শাসক ছিল, ওই দৃষ্টিকোণ ধরে করি না। শিল্পী হিসেবে, চরিত্রটা ভাল লেগেছে।' অরিন্দম শীল বলছেন, '৯৯ সালে আচমকা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর পাওয়া যাচ্ছে না। এটা কাউকে অপমান নয়। পলিটিকাল থ্রিলার।'

এই সিনেমায় একটি সংবাদমাধ্য়মের সম্পাদকের চরিত্রে অভিনয় করছেন তৃণমূল কাউন্সিলর অনন্য়া বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। চলতি মাসেই শুরু হচ্ছে সিনেমার শুটিং। রিলিজ হবে, জানুয়ারিতে। যখন রিলিজ করার তার কয়েক দিন পর রাজ্য়ে বিধানসভা নির্বাচন। আজ থেকে ৩ দশক আগের ঘটনা কতটা প্রভাবিত করতে পারবে?