কলকাতা: বহুতল আবাসনের ব্যালকনিটায় সাজানো অনেক গাছ। শহরটা দেখা যাচ্ছে অনেক দূর পর্যন্ত। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে বারোটার দিকে গড়ালেও, মেঘলা দিনে আলো ততটা চড়া হয়। সাদা গলাবন্ধ পাঞ্জাবি, পাটিয়ালা আর গলায় ডোরাকাটা স্কার্ফ নিয়ে তিনি এলেন একটু পরেই। ব্যালকনিতে রাখা সবুজ গাছগুলোর মতোই নবীন, আর দূরে ছড়িয়ে থাকা শহরটার মতোই সুরেলা। কখনও হাসলেন, কখনও দৃপ্ত ভাষায় বলে গেলেন নিজের ভাবনাগুলো। প্রতিবাদের কথা শোনালেন আবার গানের সুরে ভিজলেন, ভেজালেন। নচিকেতা চক্রবর্তী (Nachiketa Chakraborty)। জন্মদিনে এবিপি লাইভ (ABP Live) খুঁজে পেল এমন এক নচিকেতাকে... যাঁর না বলা ছিল অনেক অনেক কথা।


আজ তাঁর জন্মদিন। ৩০ বছর পেরিয়েও একইরকম তারুণ্যে মঞ্চে জ্বলে ওঠেন তিনি। ফেলে আসা বছরগুলোকে ফিরে দেখলে, কী মনে হয় 'আগুনপাখি'-র? একটু হেসে নচিকেতা বললেন, 'রূপকথা বলে মনে হয়। আমি একটা ছোট্ট সরকারি আবাসনে থাকতাম। সেখান থেকে এই জায়গায় উত্থান.. সবটাই যেন ভাগ্যে লেখা ছিল আমার। আমায় স্কুল-কলেজে লোকজন চিনত। কিন্তু এই আইকন হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে রূপকথাই। শুয়ে শুয়ে এখনও মাঝে মাঝে রাতে দুঃস্বপ্ন দেখি.. আগামীকাল কী খাব? ঠিক যে টেনশন করতাম ৩০ বছর আগে, সেই দুঃস্বপ্ন দেখে চমকে জেগে উনি। তারপরেই বুঝি, নাহ.. এখন তো পরিস্থিতি বদলেছে।'


সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন অন্যতম পরিচিত শব্দ হল 'ট্রেন্ডিং'। যে কোনও বিষয়ের তারকারা সবসময়েই এই ট্রেন্ডে থাকতে চান, চর্চাতেও থাকতে চান। তিন দশক পেরিয়ে এই ট্রেন্ডে কতটা বিশ্বাস করেন নচিকেতা? শিল্পী বলছেন, 'অনেকে আমায় স্টাইলিশ বলে। কিন্তু আমি স্টাইলিস নই, ট্রেন্ডসেটার। আমি ট্রেন্ড তৈরি। আমার পোশাক.. সবকিছু থেকেই বোঝা যায়, আমি সমাজকে থাপ্পড় মারছি। আমি ভাল পোষাক, জুতো মোজা পরে, কোমরে বা মাথায় কিছু বেঁধে নিচ্ছি। আমি বলতে চাই, এভাবেও বাঁচা যায়।'


এরপর একটু থেমে নচিকেতা বললেন, 'একটা কথা বললে অহংকার হবে, বলব?' তারপর হেসে বললেন, 'এমনিই অবশ্য সবাই অহংকারী বলে। আমার কোনও সভা, সম্বর্ধনা দিতে চাইলে সাধারণত যাই না। আমি মনে করি, তারারা জোট বাঁধে.. সূর্য একাই থাকে।'


নচিকেতা বুঝিয়ে দিলেন... তিনি জীবনকে বাঁচেন নিজের শর্তে, নিজের সুরে, নিজের ছন্দে। 


আরও দেখুন: ‘কাল কী খাব? ৩০ বছর আগের মতো দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যায় আজও’