কলকাতা: আরজি কর কাণ্ডে যখন তোলপাড় গোটা শহর থেকে রাজ্য, দেশ, তখন বাংলা বিনোদন দুনিয়ায় আরও এক দুঃসংবাদ। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তী (Utpalendu Chakrabarty Demise)। নিজের বাসভবনেই প্রয়াত পরিচালক। 


প্রয়াত জনপ্রিয় পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তী 


বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তী। চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই পড়ে গিয়ে হাড় (Femur Bone) ভাঙে তাঁর। এরপর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর অস্ত্রোপচারও হয় তাঁর। পরিচালককে দেখাশোনার জন্য ছিলেন সহকারী। তবে তাছাড়াও 'গুরু'র সঙ্গে সর্বক্ষণ থাকতেন তাঁর 'শিষ্য' অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায়। এবিপি লাইভকে তিনি বলেন, 'আজ বিকেল ৫টা ৫০ নাগাদ মৃত্যু হয়েছে। একসঙ্গে বসে চা খাচ্ছিলাম আমরা। আমি সকালে এসে স্নান করিয়ে, ড্রেসিং করিয়ে, খাইয়ে দিই। তারপর অ্যাটেনড্যান্ট এলে আমি কাজে বেরিয়ে যাই। প্রত্যেকদিনই এমনই রুটিন। আজ একটু তাড়াতাড়িই ফিরেছিলাম। বিকেলের চা খাচ্ছিলাম একসঙ্গে। ওঁর তো ডিমেনশিয়া ছিল, হঠাৎ বলতে শুরু করলেন 'এদিক দিয়ে ক্যামেরা ঘোরাতে হবে, ওখান দিয়ে লাইট রাখতে হবে'। ঠিক যেন আমরা ফিল্ম সেটে রয়েছি। তারপরই ধীরে ধীরে কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়েন। বুঝলাম আর নেই।'


২০০০ সাল থেকে উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজ করছেন অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায়। মাঝে নিজের পড়াশোনার জন্য যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও ফের গুরুর কাছে ফিরে আসেন। কথায় কথায় এবিপি লাইভকে জানান সিনেমার প্রিভিউ করার জন্য ফের উৎপলেন্দু বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। 'তখন প্রবল অর্থকষ্টে ভুগছেন বাবু (উৎপলেন্দু চক্রবর্তী)। আমাকে বললেন ৭ হাজার টাকা করে দিবি, তাহলে সুবিধা হয়। পরে বুঝলাম ঘরভাড়া, বিদ্যুতের বিল, খাওয়া দাওয়া মিলিয়ে ওই টাকায় পারছেন না টানতে। এরপর বাড়িওয়ালার রক্তচক্ষুর সম্মুখীনও হতে হয়। তখন আমি যাই মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে। ববি দা একবাক্যে বলেন যে অ্যাপ্লিকেশন দিলেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে, উৎপলেন্দু বাবুর জন্য সরকার তো করবেই। সেই থেকে রিজেন্ট পার্কের সরকারি আবাসনে থাকতেন তিনি। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতেন প্রত্যেক মুহূর্তে। বলতেন, 'আমার নিজের একটা ঠিকানা হল'।' 


সোশ্যাল মিডিয়ায় শিল্পীর মৃত্যুর খবর দিয়ে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, 'প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর তৈরি সিনেমা সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয় এবং নানা পুরস্কার লাভ করে। তাঁর মৃত্যু আমাদের চলচ্চিত্র জগতে শূন্যতা সৃষ্টি করল। ওঁর পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সমবেদনা জানাই।'






আরও পড়ুন: Shreyas Talpade: 'মজার ছলে আবেগ নিয়ে খেলবেন না', নিজের মৃত্যুর ভুয়ো খবর ওড়ালেন শ্রেয়স তলপড়ে


অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায় জানান যে উৎপলেন্দু চক্রবর্তীকে কেওড়াতলা শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে আজই হবে শেষকৃত্য। তিনি নিজেও এমনটাই চাইতেন। একসঙ্গে বহু কাজ করেছেন উৎপলেন্দু চক্রবর্তী ও অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায়। আশির দশকে ‘ময়নাতদন্ত’, ‘চোখ’, ‘দেবশিশু’র মতো একাধিক ছবির পরিচালনা করেন উৎপলেন্দু। ১৯৮২ সালে  তাঁর ‘চোখ’ ছবিটি সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় পুরস্কার জিতে নেয়। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।